ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী এপ্রিল থেকে সব ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

আগামী এপ্রিল থেকে সব ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী এপ্রিল মাস থেকে ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া আমানতের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করবে। সোমবার রাতে গুলশানের জব্বার টাওয়ারে বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ৯ শতাংশ সুদ শুধু শিল্প খাতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চাহিদা ৯ শতাংশ সুদহার সকল ক্ষেত্রে হতে হবে। আমরা সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছি। তবে সকল ক্ষেত্রে সেটা কাভার করতে কিছু সময় লাগবে। ব্যাংকগুলো সময় চেয়েছিল, আমরা দুমাস কনফার্ম করেছি, আরেক মাস বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কনফার্ম করব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১০ মিনিটের ভেতর কথা বলব আরেক মাস সময় বাড়ানোর ইস্যুতে। তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে শিল্পঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে কার্যকর করা কথা বলেছিলাম। এই সার্কুলারটা আজকেও ইস্যু করতে পারিনি। কারণ তার আগেই প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা প্রথমে যেভাবে করতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী সেটিও ঠিক রেখেছেন। তবে তার সঙ্গে আরও কিছু সংশোধন করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ওনাদের (ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি) কিছু দাবি ছিল, ওনারা তিন মাস সময় চান। এটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে না করে ১ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন করতে চান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি ২ মাস সময় নিয়ে আসছিলাম, কিন্তু ওনারা তিন মাস সময় চাচ্ছেন। ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলো লোকসানে যাতে না যায় সেজন্য নানাবিধ মেঝার নিয়ে তাদের সাহায্য করবো। প্রকৃতপক্ষেই সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে, যাতে করে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তবে সেটি লম্বা সময়ের জন্য না। ছয় মাস, নয় মাস বা এক বছর লাগতে পারে। ব্যাংকগুলো নিজের পায়ে দাঁড়ালেই স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হবে। সিঙ্গেল ডিজিট সুদ বাস্তবায়ন করার জন্য কোন শর্ত ওনারা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন শর্ত তাঁরা দেননি। বরং আমরা নিজেরাই তাদের অফার করেছি। আপনারা জানেন সরকারের কাছে অনেক অর্থ থাকে। যেগুলো কস্ট ফ্রি বা কম কষ্টের। সে অর্থগুলো আমরা এতদিন সরকারী ব্যাংকগুলোকে দিতাম। সরকারী ব্যাংকগুলো এগুলো নিয়ে আবার কাজেও লাগাত। এখন এর অর্ধেক টাকা সরকারী ব্যাংকগুলো পাবে। বাকি অর্ধেক টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে দেয়া হবে। এখন এটা পাওয়া নিশ্চিত করা হবে। ৬ শতাংশ সুদে বেসরকারী ব্যাংকের এই আমানত পাবে। বণ্টনটা প্রত্যেকটা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে দেয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করা হবে। শীঘ্রই সার্কুলার জারি করা হবে। ৬ শতাংশের বেশি কোন ব্যাংক আমানতের সুদ অফার করতে পারবে না। যেগুলো ৯-১০ শতাংশের এফডিআর হয়ে গেছে, তাহলে ওইসব আমানতের কি হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকসানতো কিছুই করতে হবে। তিন মাসের পরে আমরা কোন বিবেচনা শুনব না। তিন মাস পর ৯ এবং ৬ বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সরল সুদের যে কথা বলেছিলাম সেটার কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরল সুদ আর লাগবে না। যেহেতু ৯ শতাংশই সর্বোচ্চ, তাই সরল বলেন, আর ডাবল বলেন আর ট্রিপল বলেন বা যাই বলেন সবই ওই নয়ের মধ্যে আছে। বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, একই কথা আমিও বলব। গত রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রী, গবর্নর এবং আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, শুধু উৎপাদনশীল নয়, শিল্পকারখানা নয়, সকল ঋণ নয় শতাংশ বা তার নিচে হতে হবে। এজন্য আমরা কয়টা দিন সময় চেয়েছি এবং সময় পেয়েছি। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গবর্নর কাজও শুরু করে দিয়েছেন। ইনশাল্লাহ দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আমাদের চাকরি এবং শিল্পের সম্প্রসারণের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করতে পারবো। ২০১৮ সালেও আপনারা একই কথা বলেছিলেন-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তখন বলা আর এখন বলা এক কথা নয়। তখন আমরা আমাদের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত আমরা শুরু করেছিলাম। এজন্য সরকারী যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল সেটা সেভাবে পাইনি। সরকারি আমানতও আমরা পাইনি। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী বিষয়টি পারসনালি নিয়েছেন এবং ওনি জানেন অর্থ ছাড়া কোন কিছুই বিকল্প নেই। অর্থ ছাড়া কোন উন্নয়ন নেই। অর্থ ছাড়া সকল কিছু নিরর্থক। আর অর্থমন্ত্রী আমাদের যেভাবে সময় দিয়েছেন, যেভাবে এটাকে আকড়ে ধরেছেন, আমি মনে করি ওনার নেতৃত্বে এখন এটা অতি সত্বর বাস্তবায়ন হবে। এখন আর এটা ফেল করবে না। ফেল করলে আমরা মনে করব যে গোটা অর্থনীতিই ফেল করেছে। ৯ শতাংশ বাস্তবায়নে আর কোন সুবিধা চাইছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ৬ শতাংশে আমানত পেলে আর কোন সুবিধার প্রয়োজন হবে না।
×