ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড জয়ী রেশমা জান্নাতুল

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড জয়ী রেশমা জান্নাতুল

তার স্বপ্নের বীজ বুনেছিল মিনা কার্টুন। ভাবনায় ছিল আমি যদি মিনার মতো সমাজের জন্য কিছু করতে পারতাম! একদিন কয়েকজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মায়াভরা কয়েক জোড়া চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল এবার কিছু করার সময় এসে গেছে। বলছি হবিগঞ্জের রেশমা জান্নাতুল রুমার কথা। ২০১১ সালের এক বিকেলে রেশমা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য যতটুকু সম্ভব কিছু করতে হবে। সমাজের ব্যঙ্গবিদ্রƒপ, পড়াশোনার ক্ষতি হবার ভয় দেখানো আর তার ওপর একজন নারী হয়ে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দেয়া রেশমার সামনে ছিল পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ। ‘ভগিনীগণ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন- অগ্রসর হউন’ বেগম রোকেয়ার কথাটি তার জানা থাকুক বা না থাকুক তিনি চলেছিলেন সেভাবেই। সমাজবদলের স্বীকৃতিস্বরূপ জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী রেশমার সঙ্গে কথোপকথনে তার গল্প তুলে এনেছেনÑ সারতাজ আলীম ডিপ্রজন্ম : আপনার সংগঠনের যাত্রা শুরু কিভাবে? রেশমা জান্নাতুল : শুরুটা ২০১১ সাল থেকে। কলেজের প্রাঙ্গণে প্রায় সময়ই কিছু কমবয়সী শিশুদের ছেঁড়া কাপড় পরে ভিক্ষা করতে দেখতাম। তখন বিষয়টা খুব খারাপ লাগত। ভাবতাম যদি ওদের জন্য কিছু করতে পারতাম। একসময় বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করি। কিন্তু তেমন সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। পরবর্তীতে একটা প্রোগ্রামের কেক কাটার পর্বে বাচ্চাদের কেকের দিকে তাদের দৃষ্টি আমার বন্ধুদের মনে মায়া জন্মায় এবং ওরা ওই সময় আমার সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়। তখন ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতা আমাদের ইচ্ছা পূরণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ডিপ্রজন্ম : সামাজিক কাজের অনুপ্রেরণার উৎস কী ছিল? রেশমা জান্নাতুল : উৎস বলতে হলে বলব সেটা আমার মা। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতা করার নির্দেশনা সবসময় আমার মা আমাকে দিতেন। তারপর অনুপ্রেরণার উৎস হলো ‘মিনারকার্টুন’। ছোটবেলা আমি প্রচুর মিনা কার্টুন দেখতাম আর ভাবতাম আমি যদি মিনা হতে পারতাম। আমার যদি দৈত্য থাকত তা হলে হয়ত বা আমি গরিব মানুষের দুঃখ দূর করে দিতে পারতাম। ‘ইচ্ছাপূরণ’ নাম সেই মিনা কার্টুন থেকে চিন্তা করেই দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে সিলেটে রনতুন সদস্যদেও তুমুল আগ্রহ আর শ্রম আমার কাজ করার শক্তিটাকে আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। বিশেষ করে সিলেটের সদস্যদের সহযোগিতা এবং পরিশ্রম ২০১৪ সালে সিলেটে আবার সংগঠনটিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করে। ডিপ্রজন্ম : একজন নারী হয়ে সামাজিক কাজের চ্যালেঞ্জগুলো কেমন ছিল? রেশমা জান্নাতুল : আজ থেকে ৮/৯ বছর আগে নারী পুরুষ যে কারও জন্য সামাজিক কাজ করাটা আসলেই অনেক কষ্টকর ছিল। প্রথম বাধাটা কাছের মানুষের কাছ থেকেই আসছিল। যেমন, বাবা বলছিল পড়াশোনার ক্ষতি হবে, বন্ধুরা বলত খেয়ে কোন কাজ নাই, আশপাশের মানুষ অনেক হাসাহাসি করত। মিটিং করার জন্য কোন খালি জায়গায় বা রেস্টুরেন্টে গেলে একসঙ্গে বেশি মানুষ থাকার কারনে সেখান থেকে উঠিয়ে দিত, কারোর কাছে সহযোগিতা চাইলে বলত এইটা নাকি আমাদের ধান্ধা। সববাধা অতিক্রম করে আজ আমরা ইচ্ছাপূরণ পরিবার সমাজে সফলভাবে কাজ করছি। ডিপ্রজন্ম : ইচ্ছাপূরণের কার্যক্রমসমূহ কী কী? রেশমা জান্নাতুল : আমরা সাধারণ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগঠনটা শুরু করি। তারি লক্ষ্যে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একটা ভ্রাম্যমাণ স্কুল স্থাপন করি, এবং সুবিধাবঞ্চিত ১০টি শিশুর ১০ বছরের যাবতীয় খরচ বহন করে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে কাজ করি। যেমনÑ শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান এবং রক্তদানে উৎসাহকরণ, পিঠা উৎসব, দরিদ্রদের আর্থিক সহযোগিতা, বিভিন্ন দিবস উৎযাপনসহ বাৎসরিক প্রায় ১৮টা ইভেন্ট করে থাকি। ডিপ্রজন্ম : ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আর কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে কী? রেশমা জান্নাতুল : বর্তমানে আমাদের আবাসনে ১০টি সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে। আমদের ইচ্ছা ১০টি শিশুকে পড়াশোনা করিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া। তার পাশাপাশি নেশাগ্রস্ত শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলে ভর্তি করে দেয়াসহ সকল প্রকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। ডিপ্রজন্ম : সংগঠনের অর্জন প্রত্যাশার কতটুক বলে মনে করেন? রেশমা জান্নাতুল : বড় অর্জন সবার ভালবাসা আর আত্মতৃপ্তি। আমাদের শীর্ষ অর্জন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত থেকে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ। এছাড়াও আমাদের সংগঠন ৮টি জেলা থেকে সেরা সংগঠন হিসেবে সম্মাননা অর্জন করেছে। ডিপ্রজন্ম : সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ব্যতীত অন্য কোন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কী? রেশমা জান্নাতুল : ইচ্ছাপূরণ ছাড়াও আমি সমাজের অসহায়ও দরিদ্র নারীদের অধিকার ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করি। আমার একটি নারীদের সংগঠন আছে নাম ‘ফিমেল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন ‘এছাড়াও দুটি রক্তদান সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? রেশমা জান্নাতুল : ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চাই। অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নারী/পুরুষ নির্বিশেষে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যেন স্বাধীনভাবে আরও ১০টি স্বাভাবিক শিশুদের মতো জীবনযাপন করতে পারে এমন একটি দেশ চাই।
×