ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছর পর ফের শেষ চারে মোহামেডান

প্রকাশিত: ১২:০১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

তিন বছর পর ফের শেষ চারে মোহামেডান

রুমেল খান ॥ ক্যাসিনো কা-ে বিপর্যস্ত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের দিন শেষ ... এমনটা কদিন আগেও বলতেন অনেক ফুটবলবোদ্ধাই। দলটির সাবেক ফুটবলারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কোনমতে মাঝারি শক্তির দল গঠন করলেও সেই দলে একসময় জাতীয় দলে খেলা গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল ছাড়া কোন চেনা মুখ ছিল না। ফলে মোহামেডান চলতি মৌসুমেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে নিশ্চিতভাবেই, এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে চলমান ফেডারেশন কাপ ফুটবলে একের পর এক চমক দেখিয়েই যাচ্ছে মতিঝিলপাড়ার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। এখনও টিকে আছে তারা বহাল তবিয়তেই! যেখানে গ্রুপ পর্বেই তাদের বাদ পড়ার কথা ছিল, সেখানে এখন তারা সেমিফাইনালে! হ্যাঁ, সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে তারা ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ২০১৭ সালের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেকে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধেই সব গোল করে। এই জয়ে দুই বছর আগের হারের বদলাটাও কড়ায়-গ-ায় নিয়ে নিল মোহামেডান। সেবার সি গ্রুপে তারা ২-১ গোলে হেরেছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। সোমবারের জয়ে তিন বছর পর আবারও সেমিতে নাম লেখাল মোহামেডান। সেখানে আগামী ২ জানুয়ারি প্রতিপক্ষ হচ্ছে রহমতগঞ্জ। এই আসরে তারা সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ২০১৫ সালে। সেবার তারা সেমিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ৪-৩ (১-১) গোলে। চট্টগ্রাম আবাহনীর স্বনামধন্য কোচ মারুফুল হক। যিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লাইন্সেসধারী ও দেশীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকধারী। সেই মারুফুল হেরে গেলেন মোহামেডানের ব্রিটিশ কোচ শন লেনের রণকৌশলের কাছে। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার করে খেলে মোহামেডান। মনেই হয়নি তাদের দলটি একেবারেই আনকোড়া ও অনভিজ্ঞ, দলে নেই কোন জাতীয় খেলা ফুটবলারও। কিন্তু তাদের খেলা দেখেই এমনটি মনেই হয়নি। দারুণ আক্রমণাত্মক, গতিশীল ও গোছানো ফুটবল খেলেছে তারা। বন্দরনগরীর দল চট্টগ্রাম আবাহনীও মাঝে মাঝে আক্রমণ করে খেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের কোন গোলপ্রচেষ্টাই সফলতার মুখ দেখেনি। স্টেডিয়ামে আসা মোহামেডানের শ’ আটেক ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগী সারাক্ষণই ভুভুজেলা বাজিয়ে, চিৎকার করে প্রিয় দলকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন। তাদের সমর্থন বিফলে যেতে দেননি মোহামেডানের ফুটবলাররা। জানবাজি লাগিয়ে খেলে সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়ে নেন তারা। যদিও ২৫ মিনিটে সৌভাগ্যপ্রসূত গোল পেয়ে এগিয়ে যায় ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ করে মোহামেডান। মিডফিল্ডার হাবিবুর রহমান সোহাগ বাঁ পায়ের মাঝারি উচ্চতায় বল ফেলেন চট্টলা আবাহনীর বক্সের ভেতরে। বিস্ময়করভাবে ‘আপাত নিরীহগতির’ সেই বলটি প্রথমে ফেরাতে ব্যর্থ হন আবাহনীর এক ফুটবলার। পরে একইভাবে ব্যর্থ হন মোহামেডানের মালি ফরোয়ার্ড সুলেমানে দিয়াবাতে এবং আবাহনীর উজবেক ডিফেন্ডার ইকবল জন-ও! বল ততক্ষণে চলে যায় বক্সের ভেতরে। দিয়াবাতে বল ধরতে না পারলেও তার সতীর্থ মিডফিল্ডার শাহেদ হোসেন বল নিয়ন্ত্রণে নেন। দেরি না করে বাঁ পায়ের জোরালো কৌনিক গড়ানো শটে আবাহনী গোলরক্ষক হোসেন সুজনকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন (১-০)। এর পাঁচ মিনিট পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে মোহামেডান। বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে শাহেদ হোসেনের কাছ থেকে খাটো পাস পেয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন সুলেমানে দিয়াবাতে (২-০)। প্রেসবক্সে তখন উপস্থিত ছিলেন সাবেক মোহামেডান তারকা গোলরক্ষক গোলরক্ষক ছাইদ হাসান কানন। দ্বিতীয় গোলের পর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তার সেকি চিৎকার! একটু পর নিজেকে সামলে নিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘এ কোন মোহামেডান!’ ৭৪ মিনিটে সতীর্থ উসাই মং মারমার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে সুলেমানে দিয়াবাতের ডান পায়ের গড়ানো শট সাইডপোস্টে লেগে ফিরে এলে গোলবঞ্চিত হয় ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইটরা। বাকি সময়টায় আর কোন গোল না হলে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের তৃপ্তিদায়ক জয় ও সেমিতে নাম লেখানোর চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে শন লেনের শিষ্যরা।
×