ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজের আগুন বোলিংয়ে জয় রংপুরের

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

মুস্তাফিজের আগুন বোলিংয়ে জয় রংপুরের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) সোমবার বহুল আকাক্সিক্ষত জয় পেয়েছে রংপুর রেঞ্জার্স। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্লে অফ রেসে টিকে থাকার লড়াইয়ে তারা ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে সিলেট থান্ডারকে। এ জয়ের ফলে ৭ ম্যাচে এখন ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফে ওঠার লড়াইয়ে বেশ ভালভাবেই থাকল রংপুর। কিন্তু অষ্টম ম্যাচে সাত পরাজয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে এখন বিদায়ের পদধ্বনি জোরেশোরেই শুনতে পাচ্ছে সিলেট। এখনও পুরোপুরি সম্ভাবনা শেষ না হয়ে গেলেও প্লে অফে ওঠার রাস্তাটা দুর্গম হয়ে উঠল তাদের। অন্য দলগুলোর একটানা পরাজয় এবং নিজেদের বাকি ৪ ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জেতার পাশাপাশি অনেক সমীকরণেও এগিয়ে থাকতে হবে সিলেটকে। তবেই মিলতে পারে প্লে অফে খেলার টিকেট। সোমবার তাই ডু অর ডাই ম্যাচ ছিল দলটির। কিন্তু আগে ব্যাট করে রংপুরের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বিধ্বংসী ও মিতব্যয়ী বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১৩৩ রান তোলে সিলেট। জবাবে ১৬ বল হাতে রেখেই ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় রংপুর। ৭ ম্যাচে এখন তাদের পয়েন্ট ৪, সেখানে সিলেটর সংগ্রহে আছে ৮ ম্যাচ থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে সিলেট। ইনিংসের শুরু আর শেষটায় মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং দাপটে সংগ্রহ বড় হয়নি তাদের। প্লে অফে ওঠার জন্য এই ম্যাচে জয়টা অবশ্যই জরুরী সিলেটের। সেই ম্যাচে মুস্তাফিজ স্বরূপে আবির্ভূত হন। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম ৫ ম্যাচে অচেনা হয়ে পড়েছিলেন নিষ্প্রভ এ বাঁহাতি পেসার। তবে আগের ম্যাচেই নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবশ্য এদিন বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিই সিলেটের সর্বনাশের শুরু করেছিলেন। প্রথম ওভারেই তিনি মেডেনসহ তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারের (০) উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র ১ রান দেন। চতুর্থ ওভারে তরুণ পেমার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ৮ রান দিলেও আরেক ক্যারিবীয় ওপেনার জনসন চার্লসকে (১১ বলে ৯) সাজঘরে ফেরান। মাত্র ১৬ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়া সিলেট পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে মাত্র ২৭ রান তুলতে সক্ষম হয়। বাজে এই শুরুর পরেও মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দ্রুতগতিতে রান তুলে সিলেটকে বড় সংগ্রহের পথ করে দিয়েছেন। মূলত মিঠুনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে ৫৭ রান যোগ হয়। ধীরস্থির মোসাদ্দেক অবশ্য ২৩ বলে ১৫ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন রানআউট হয়ে। এরপর শেরফানে রাদারফোর্ডকে নিয়ে মাত্র ১৭ বলেই ৩৪ রানের জুটি গড়েন মিঠুন। তিনি পেয়ে যান চলতি আসরে নিজের দ্বিতীয় অর্ধশতক। ৩৫ বলে সেই হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলার পর মিঠুনও শ্লথ হয়ে যান। এর মধ্যে রাদারফোর্ড ৯ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলে লুইস গ্রেগোরির শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। অবশ্য ১৪তম ওভারেই দলীয় ১০০ রান তুলে বড় একটি সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল সিলেট। এরপর শুধুই ব্যর্থতার হিড়িক! দ্রুত রান তুলতে গিয়ে এলোমেলো শট খেলে সাজঘরে ফেরার মিছিলে শামিল হয়েছেন সিলেটের ব্যাটসম্যানরা। সেই মিছিলে এমনকি মিঠুনও যোগ দিয়েছেন। ১৭তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিং করতে এসেই সফল হন মুস্তাফিজ। আগের ২ ওভারে মিতব্যয়িতা দেখিয়ে ৭ রান দেয়া মুস্তাফিজ এবার মাত্র ২ রান দিয়ে শিকার করেন মিঠুনকে। তিনি ৪৭ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৬২ রান করেছিলেন। এর আগের ওভারেই সাজঘরে ফিরে গেছেন নাজমুল হোসেন মিলন (১)। একেবারে শেষ ওভারে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২ রান করতে পেরেছে সিলেট। সেই ওভারের প্রথম দুই বলেই নাঈম হাসান (৮) ও সোহাগ গাজীকে (১২) সাজঘরে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু পরের বলে রানআউট হয়ে যান মনির হোসেন। ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেটে ২৭ এবং শেষ ৬ ওভারে ২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মামুলি সংগ্রহেই শেষ হয় সিলেটের ইনিংস। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা ৯ উইকেটে ১৩৩ রান তোলে। অথচ ১৪ ওভারেই ১০৫ রান তুলেছিল দলটি মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে। মুস্তাফিজের কিপটে বোলিংয়ের সামনেই নাজেহাল হয়েছে তারা। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন, ১৯টি ডট বল করেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে এখন তিনি চলতি আসরে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটের মালিক। তবে রংপুর বোলারদের এমন দাপুটে বোলিংয়ের দিন সবচেয়ে খরুচে মুকিদুল ৪ ওভারে ৪৩ এবং মোহাম্মদ নবি ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রংপুর প্রথমেই বড় ধাক্কা খায়। অধিনায়ক ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন এদিনও ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১ রান করে। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেকটি বিপদ ঘটতে পারত, বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসানের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন লংঅনে। কিন্তু ফ্লেচার তা হাতছাড়া করেন এবং নাইম বাউন্ডারি পেয়ে যান। এরপর ক্যামেরন ডেলপোর্টকে নিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়েছেন নাইম শেখ। সতর্ক ও ধীরস্থির নাইমের কারণে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে মাত্র ৩১ রান উঠলেও ডেলপোর্ট ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠেন। নাইমকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট বোলারদের ওপর তা-ব চালান তিনি। মাত্র ২৪ বলেই ফিফটি পেয়ে যান এ বাঁহাতি দক্ষিণ আফ্রিকান টপঅর্ডার। ফলে মাত্র ১২ ওভারেই ১ উইকেট হারিয়ে রংপুরের সংগ্রহশালায় যোগ হয় ১০০ রান। তবে ১৩তম ওভারেই বিচ্ছেদ ঘটে এ জুটির। নীবন উল হক সাজঘরে ফেরান ডেলপোর্টকে। তিনি ২৮ বলে ৬ চার, ৫ ছক্কায় ৬৩ রান করেন। সেই নবীন আবার ১৫তম ওভারে এসেও আঘাত হানেন, এবার সাজঘরে ফেরেন গ্রেগোরি (৪)। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে স্পেল সমাপ্ত করেন নবীন, করেছেন ১৭টি ডট বল। অফস্পিনার নাঈমের ওপরই গেছে সবচেয়ে বড় ঝড়, তিনি ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়েছেন ৪টি ছক্কা হজম করে। আর এ কারণেই রংপুরের জয় পেতে তেমন সমস্যা হয়নি। মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন ওপেনার নাইম শেখ। তিনি দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় রংপুর। নাইম ৫০ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। নবি ১২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় করেন অপরাজিত ১৮। এ পরাজয়ে প্লে অফে ওঠার সম্ভাবনা নিভু নিভু হয়ে গেছে ৮ ম্যাচে ২ পয়েন্ট পাওয়া সিলেটের। স্কোর ॥ সিলেট থান্ডার ইনিংসÑ ১৩৩/৯; ২০ ওভার (মিঠুন ৬২, রাদারফোর্ড ১৬, মোসাদ্দেক ১৫; মুস্তাফিজ ৩/১০)। রংপুর রেঞ্জার্স ইনিংসÑ ১৩৪/৩; ১৭.২ ওভার (ডেলপোর্ট ৬৩, নাইম ৩৮*, নবি ১৮*; নবীন ২/১৩)। ফল ॥ রংপুর রেঞ্জার্স ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মুস্তাফিজুর রহমান (রংপুর রেঞ্জার্স)।
×