ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবাহনীকে বিদায় করে সেমিতে রহমতগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

আবাহনীকে বিদায় করে সেমিতে রহমতগঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শক্তির বিচারে দুই দলের পার্থক্য ব্যাপক। কিন্তু খেলাটা ফুটবল। ভাল খেললে আর ভাগ্য সহায় হলে আন্ডারডগ দলও যে কোন দিনে হারিয়ে দিতে পারে কোন ফেবারিট দলকে। সোমবার রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ঠিক যেমন হারিয়ে দিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে। ফেডারেশন কাপ ফুটবলের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের খেলায় তারা টাইব্রেকারে বর্তমান শিরোপাধারী আবাহনীকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসেবে জায়গা করে সেমিফাইনালে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই জমজমাট খেলায় দুই অর্ধেও কোন দলই গোল পায়নি। দুই দলই দুটি গোল করে অতিরিক্ত সময়ে। এই জয়ের মাধ্যমে আজ থেকে ছয় বছর আগের হারের প্রতিশোধ নিল রহমতগঞ্জ। এই দু’দল এই আসরে সর্বশেষ পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৩ আসরে। সেবার ‘ডি’ গ্রুপে আবাহনী ৩-০ গোলে হারিয়েছিল রহমতগঞ্জকে। সোমবার ১২০ মিনিটের খেলা শেষে অনুষ্ঠিত টাইব্রেকার নামের ভাগ্যপরীক্ষায় শেষ হাসি হাসে রহমতগঞ্জই। তাদের নেয়া প্রথম ৪টি শট থেকে প্রতিটিই গোল হয়। গোল করেন দিদারুল আলম, তুরায়েভ আকোবির, নাদিম মাহমুদ লিমন এবং এ্যাকপোপভ আসোরোভ। আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন, বদলি মিডফিল্ডার সোহেল রানা এবং নাসির উদ্দিন চৌধুরী গোল করেন। মিস করেন বেলফোর্ট কারভেন্স ফিলস্ এবং সানডে চিজোবা। দুজনের শটই ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। সানডের শটটি ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দিলে জয়ের নায়ক বনে যান লিটন, যিনি একসময় জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। প্রথমার্ধে আবাহনী খেলে আক্রমণাত্মক আর রহমতগঞ্জ খেলে রক্ষণাত্মক ধাঁচে। তাদের ছয় ডিফেন্ডার, বিশেষ করে তাদের দীর্ঘদেহী গিনির কামারা ইউনুসা ছিলেন একাই এক শ’। জীবন-সানডে-বেলফোর্টকে বার বার রুখে দেন তিনি। আর ছিলেন তাদের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। এর আগে জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লিটন আবাহনীর বেশ কটি বিপজ্জনক আক্রমণ একক প্রচেষ্টায় নসাৎ করে দেন। আর সুযোগ পেলেই ‘আইলো’, ‘ডাইলপট্টি’ ও ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত পুরান ঢাকার এই ক্লাবটি সুযোগ পেলেই কাউন্টার এ্যাটাক করেছে। এই আসরের গ্রুপ পর্বে এই নীতিতে খেলেই শেষ আটে জায়গা করে নেয় সৈয়দ গোলাম জিলানির শিষ্যরা। ‘সি’ গ্রুপে তারা গোলশূন্য ড্র করে সাইফের সঙ্গে। আর ১-১ গোলে ড্র করে শেখ জামাল ধানম-ির সঙ্গে। ২ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সাইফের সঙ্গে কোয়ার্টার খেলা নিশ্চিত করে। পক্ষান্তরে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের দুই খেলাতেই আবাহনী বড় ব্যবধানে জিতে গ্রুপসেরা হয়ে নাম লেখায় শেষ আটে। প্রথম খেলায় ৪-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবকে। পরের ম্যাচে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে। ৪ মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে আবাহনী। সানডের পাস। জীবনের শট। গোলরক্ষকের গায়ে লেগে মিস। ১৭ মিনিটে আবারও আবাহনীর আক্রমণ। ডানপ্রান্ত দিয়ে রহমতগঞ্জের বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন বেলফোর্ট। ডান পায়ের যে গড়ানো ক্রস করেন, তা সুবিধাজনক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেও পোস্টের বাইরে বল মেরে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সানডে। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হতেই যেখানে ফেডারেশন কাপের বর্তমান ও সর্বাধিক ১১ বারের শিরোপাধারী ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর সব ফুটবলাররা তড়িঘড়ি করে ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিলেন। সেখানে রহমতগঞ্জের ফুটবলাররা ছিলেন ব্যতিক্রম। তারা মাঠে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে এক ‘সংক্ষিপ্ত মিটিং’ করেন। সেখানে তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিলেন বেশ ইতিবাচক। থাকারই কথা, কেননা তাদের লক্ষ্যই ছিল নিজেদের রক্ষণ সুদৃঢ় রাখা। এই কাজটি তারা করতে পেরেছে দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মিনিট পর্যন্ত। ৬৮ মিনিটেও আরেকটি দারুণ গোলের সুযোগ নষ্ট করে আবাহনী। প্রতিপক্ষের সীমানায় ফ্রি কিক পায় তারা। কিরগিজ মিডফিল্ডার এডগার বার্নহাডের উড়ন্ত ফ্রি কিকের বল গিয়ে পড়ে বক্সের ভেতরে কোনায় একাকী দাঁড়ানো অরক্ষিত আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মালিসন আলভেস। সেই বল চমৎকার দক্ষতায় তিনি ব্যাকভলি করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল্পের জন্য বল নেট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। আক্ষেপ বাড়ে আবাহনীর। ৮৪ মিনিট। ডান প্রান্ত থেকে রায়হান হাসানের উড়ন্ত লম্বা থ্রো। দৌড়ে এসে সেই বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি গোলরক্ষক লিটন। বল পেয়ে জটলার ভেতরে বেলফোর্ট ব্যাকভলি করেন। সেই বল জালে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ডান পায়ে বিপদমুক্ত করে রহমতগঞ্জকে বাঁচান তাদের তাজিক ডিফেন্ডার এ্যাকপোপভ আসোরোভ। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ৩ মিনিটে (৯৩ মিনিটে) অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় আবাহনীর। মাঝমাঠ থেকে মালিসনের উঁচু-লম্বা থ্রু পাসের বল ধরে প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট কারভেন্স ফিলস্। তাকে দুপাশ থেকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডার। এদিকে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন গোলরক্ষক লিটনও। কিন্তু তাদের কাউকেই কোন সুযোগ দেননি বেলফোর্ট। ডান পায়ের তীব্র ভলি শটে রহমতগঞ্জের জালে বল পাঠিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়েন তিনি (১-০)। ১১২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বেলফোর্টের লম্বা উড়ন্ত পাস ধরে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে ডান পায়ে পোস্ট রক্ষ্য করে শট নেন আবাহনীর বদলি মিডফিল্ডার জুয়েল রানা। কিন্তু গোলরক্ষক লিটন পাঞ্চ করে সেই বল কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ১১৯ মিনিট। অবিশ্বাস্যভাবে সমতায় ফেরে রহমতগঞ্জ। মাঝমাঠে সানডের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার এ্যাকোপোপভ। তিনি ডান পায়ের উঁচু-লম্বা লব করেন আবাহনীর বক্সের ভেতরে। গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল এগিয়ে এসে বল ধরার আগেই চমৎকারভাবে হেড করে বল জালে পাঠিয়ে আবাহনী শিবিরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেন রহমতগঞ্জের বদলি মিডফিল্ডার এনামুল ইসলাম গাজী (১-১)। এর মিনিট খানেক বাদেই রেফারি সুজিত চন্দন খেলা শেষের বাঁশি বাজালে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
×