ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী সমাবেশ

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ স্লোগানে ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথ দখলে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সমাবেশ, বিজয় র‌্যালি, আনন্দ মিছিলসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সোমবার সারাদেশের রাজপথে সতর্ক পাহারায় ছিল দলটির নেতাকর্মীরা। তবে আন্দোলনের কর্মসূচী দিলেও রাজপথে বিএনপি-জামায়াতসহ কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তৎপরতা ছিল না। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতন্ত্রের ধ্বংসের জনকই হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। তবে বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করলে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ‘হ্যাঁ-না’ ভোটে নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মাগুরার উপ-নির্বাচনে গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরে ২১ বছর গণতন্ত্র বুটের তলায় পিষে ফেলা হয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিলেন। শেখ হাসিনা বার বার মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে বিজয়ের জয় গান গেয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে শেখ হাসিনা শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। বিএনপি আজ নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ। সে কারণে এই দিন তাদের জন্য কালো দিবস। আর আওয়ামী লীগ জনগণের ভালবাসায় বিজয়ী। সে কারণে আজ আমাদের বিজয় দিবস। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে বর্তমান কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগে সন্ত্রাস-দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের এবং মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান নেই। ভাল লোককে স্থান করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সারাদেশে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী। বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করলে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ সাঈদ খোকনের সফলতার পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতা আছে। তিনি চেষ্টা করেছেন। তিনি ব্যর্থ নন। তবে ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয় এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের আমরা দলীয় মনোনয়ন দিয়েছি। তিনি বলেন, অতীতে যাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতা নেই তারা এসে ভাল কিছু করতে পারবে না। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাবেকমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঢাকার রাজপথ আ’লীগের দখলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তি দিবসে বিএনপি-জামায়াতসহ পরাজিত কেউ রাজপথে কোন ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণস্থানে সতর্ক প্রহরায় ছিল আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। যার ফলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্ব একটি মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আসে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগ। এসময় যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সহ-সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর থেকেই ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিজয় মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। বিভিন্ন ওয়ার্ডেও বিজয় মিছিল নিয়ে শোডাউন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া একইভাবে একে একে মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের প্রায় সবক’টি থানা আওয়ামী লীগের নেতারা গণতন্ত্রের বিজয় সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা-উপজেলা, মহানগরে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করে আওয়ামী লীগ।
×