ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ

বিএনপির ওপর দোষ চাপাতেই ককটেল বিস্ফোরণ ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

  বিএনপির ওপর দোষ চাপাতেই ককটেল বিস্ফোরণ ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি আজ সোমবার সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ মিছিল কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচী পালন করবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বরকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে’ পালন করতে বিএনপি এ কর্মসূচী পালন করছে বলে রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান। এদিকে দুপুরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিএনপি সভা-সমাবেশ মিছিল কালো ব্যাজ ধারণ ও সকল দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করবে। ঢাকায় এ উপলক্ষে সোমবার বেলা ২টায় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এ জন্য পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘২৯ ডিসেম্বর ভোটাধিকার হরণ ও ভোট ডাকাতির ভয়াল রাত। এই রাতেই ভোটারদের কাছ থেকে তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল, দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল।’ পৃথিবীর ইতিহাসে অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাতের ভোটে ক্ষমতা দখলের এক বছর পূর্ণ হয় ২৯ ডিসেম্বর। তাই দেশবাসীর কাছে দিনটি তাদের ভোটাধিকার হরণের কাল রাত হিসেবে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। একাত্তরের ২৫ মার্চ কাল রাতে যেমন হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঠিক একইভাবে ’১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কাল রাতে মানুষের ভোটাধিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা। এই রাতেই হত্যা করা হয় দেশের গণতন্ত্র। রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোন ভোট হয়নি। তাই এই আওয়ামী লীগকে অনন্তকাল রাতের ‘ভোট ডাকাতির কলঙ্ক তিলক’ বহন করে যেতে হবে। যেভাবে এখন পর্যন্ত প্রতিটি সচেতন মানুষ তাদের গণতন্ত্র হত্যাকারী ও বাকশালী বলে অভিহিত করে। এরা একদলীয় মূঢ় বিশ্বাসে আচ্ছন্ন। গণতন্ত্রকে বারবার মর্গে পাঠানোই আওয়ামী লীগের রীতি। আমরা বলতে চাই অতি দ্রুত সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যেন আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যখন নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা যখন চাকরি রক্ষার জন্য নীতি- নৈতিকতা এমন কি নিজেদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বিসর্জন দেন, তখন মানুষের আর হতাশার সীমা থাকে না। শুরু হয় সামগ্রিক সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এখন আমরা ঠিক এমনই একটি অধঃপতিত পরিবেশে বসবাস করছি। রিজভী বলেন, দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ভোট ডাকাতির নির্বাচন ও মানুষের কণ্ঠস্বরকে স্তব্দ করে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও এখন দুর্নীতি আর অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগের লোভে ভোট ডাকাতিতে সহায়তা করে নিজেদের বিবেককে অন্যায়-অনৈতিক আদেশের কাছে বিক্রি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এখন বিচারের নামে চলছে অবিচার। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সাহেবের পরিণতিতে ভয় পেয়ে এখন সরকারকে খুশি করতেই হচ্ছে বিচার বিভাগকে। আর এ কারণেই জামিন পাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছের প্রতিফলনই ঘটছে এখন আইন-আদালতের সিদ্ধান্তে। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার ন্যায্যত জামিন পাওয়ার সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় কারারুদ্ধ রেখে তাঁকে প্রাণে মারার সব রমরমা আয়োজন করছে সরকার। খালেদা জিয়া কি অবস্থায় কেমন আছেন আমাদের জানতে দেয়া হচ্ছে না। ভোট ডাকাতি নিশ্চিত করার জন্যই খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। গত এক দশকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে নির্বাচনী সন্ত্রাসের সিলমোহরে পরিণত করা হয়েছে। পরিণত করা হয়েছে একটি পাপেট, অথর্ব এবং দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আর জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য নয় বরং ক্ষমতাসীনদের ভোট লুটের বৈধতাদানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এবার তারা ঢাকার দুই সিটিতে ইভিএম এ ভোট নিতে চাচ্ছে। কিন্তু এই ইভিএম এ দ্রুতই ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব। আমরা বিভিন্ন সময়ে বারবার বলেছি, ইভিএম ২৮ বছরের পুরনো একটি প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে কোন কোন দেশে ভোটগ্রহণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তিবিদদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ইভিএম একটি অস্বচ্ছ ভোটগ্রহণ পদ্ধতি, যা গণতন্ত্র চর্চায় সহায়ক নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুর সোয়া বারোটায় সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সে সময় বিএনপি কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাতকার চলছিল। তবে ককটেল বিস্ফোরণের পর সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি ঘটে। একটি ককটেল বিস্ফোরণ হলেও ওই এলাকা থেকে আরও তিনটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া তিনটি ককটেল নিষ্ক্রিয় করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন ফুটপাথে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ বিষয়ে রবিবার পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিএনপি অফিসের সামনে কে বা কারা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ককটেল বিস্ফোরণের পর দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ককটেল বিস্ফোরণ সম্পর্কে তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে খোঁজখবর নেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ককটেল বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সিটি নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতেই সরকার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ককটেল হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিতে চাইবে। আমরা এই ককটেল হামলার নিন্দা জানাই। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাতকার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেয়া শুরু করেছে বিএনপির যাচাই-বাছাই কমিটি। রবিবার সকাল নয়টায় চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীদের এবং একই সময়ে নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাতকার শেষ করা হবে বলে দলীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
×