ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টানা ১২ দিন পর মিলল রোদের উত্তাপ

তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪.৫০ সেলসিয়াস

প্রকাশিত: ১০:০১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা  ৪.৫০ সেলসিয়াস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতে টানা ১২ দিন পর অবশেষে মিলল রোদের উত্তাপ। রবিবার ঘর হতে বের হয়ে লোকজনকে সূর্যের দিকে মুখ করে প্রাণ ভরে রোদে উষ্ণতা উপভোগ করতে দেখা গেছে। আকাশে কোন মেঘ না থাকায় সকাল থেকেই আলো ঝলমল করে আকাশে উদিত হয় সূর্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। আর এতে অনেকটা স্বস্তি দেয় দেশবাসীকে। তবে শীতের মাত্রা কমেনি। সন্ধ্যা হতে জেঁকে নামছে শীত। পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এদিন তাপমাত্রা আরও কমে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশের তিন বিভাগ ও কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। রবিবার পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। যা এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়াও গত কিছুদিন ধরেই তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রাই সবার নিচে নেমে যাচ্ছে অন্যান্য এলাকার তুলনায়। গত ২০১৮ সালে ৬ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয় এ উপজেলাতেই। এদিকে টানা শীতে উত্তরের জেলার জনগণের নাস্তানাবুদ অবস্থা। তাপমাত্রা কমে শীতে তীব্রতা বাড়ছেই। গরম কাপড়ের অভাবে শীত নিবারণ করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। তবে গত সপ্তাহে দুদিন বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আকাশে মেঘ সরে গেছে। নদী অববাহিকা ছাড়া অন্য এলাকায় কুয়াশাও কেটে গেছে। ফলে আজও দেখা মিলবে সূর্যের আলোর। তবে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আরও দুদিন। এর পরে আবার বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রযেছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, আবারও বৃষ্টিপাত হলে তখন তাপমাত্রা আরও কমে জেঁকে শীত নামতে পারে। নতুন বছরের শুরু আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তারা জানায়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে পর পর দুই দফা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এর মধ্যে কেবল ২২ ডিসেম্বরই কোথাও শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। রবিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মেঘ এবং কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদে দেখা মিললেও তুলনামূলক তাপমাত্রা কমেছে। তবে দিনের বেলায় রোদের কারণে উষ্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হলেও রাতে তাপমাত্র কমে গিয়ে শীত তীব্র আকার ধারণ করছে। এদিকে টাঙ্গাইলে ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, নেত্রকোনায় ৯.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, শ্রীমঙ্গলে ৭.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ঈশ্বরদী ও বদলগাছিতে ৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রংপুরে ৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ৬.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সৈয়দপুরে ৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ডিমলায় ৭.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রাজারহাটে ৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, চুয়াডাঙ্গায় ৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রবিবার দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে জানুয়ারির ৪ তারিখ থেকে ৫ তারিখ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তাতে তাপমাত্রা ফের কমবে এবং অনেক জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ৬ জানুয়ারি থেকে কয়েক দিন এমন আবহাওয়া থাকতে পারে বলে তারা জানান। এদিকে তীব্র শীতে নাকাল হয়ে পড়েছেন উত্তরের জেলার প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষ। হাড়কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরের এই জনপদের বাসিন্দারা। হিমালয়ের খুব কাছাকাছি জেলা হওয়ায় পঞ্চগড়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের হিমবায়ু প্রবেশ করায় তাপমাত্রা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় আবারও তাপমাত্রা কমল। মৌসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রবিবার। কয়েকদিন ধরে হিমালয় কন্যা খ্যাত তেঁতুলিয়াসহ জেলার সর্বত্রই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সামনের দিনগুলোতেও তাপমাত্রা আরও কমে আসার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া অফিস। ক্রমাগত তাপমাত্রা কমে আসায় শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। উত্তরে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। শুধু দেশের মধ্যেই নয় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রবিবার। এদিন সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রবিবার সকালটি শুরু হয় ঝলমলে রোদের আলো দিয়ে। সকাল ৮টার আগেই এদিন সূর্যের দেখা মেলে। ঝলমলে রোদের আলোয় উঞ্চতাও বাড়ে। রোদের উত্তাপে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু বিকেল গড়াতেই সেই উঞ্চতা মিলিয়ে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। অসম্ভব ঠা-া অনুভূত হয়। আবহাওয়ার বৈচিত্র্যতায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগবালাই। বিশেষ করে ছোট শিশুরা জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়াসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। উত্তরের হিমেল বাতাসের প্রভাবে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম থাকছে। ঠাকুরগাঁও শীতের দাপটে নান্তানাবুদ হয়ে পড়েছেন জেলাবাসী। গত ছয়দিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির ন্যায় ঘন কুয়াশা ঝড়ছে। সেইসঙ্গে হিমশীতল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। রবিবার সূর্যের দেখা মিললেও সারাটা দিন কনকনে ঠা-া বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষ। রাস্তাঘাটে লোকজন এবং যানবাহনও চলাচল কমে গেছে। রাত থেকে কুয়াশা বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তঘাট ভিজে থাকছে। শীতের তীব্রতায় শহরের মানুষও খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বেড়েছে রুম হিটার বিক্রির পরিমাণ। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যাদের পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি তারা বাধ্য হয়ে তীব্র এই শীতেও কর্মসংস্থানের জন্য ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন। তীব্র কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে করে খেটে খাওয়া মানুষ ও রিক্সা-ভ্যানচালকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এক কথায় তীব্র শীতে এখানকার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতার্ত মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতার্ত মানুষের জন্য আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সরকারীভাবে জেলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। আধুনিক সদর হাসপাতালে শুধু রবিবারে ঠা-াজনিত অসুস্থতায় শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তির চেয়ে বহির্বিভাগে শীত ও শীতজনিত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ড ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ। তিনি আরও জানান, শীতের তীব্রতা বাড়লে ভর্তির সংখ্যাও বেড়ে যায়। তীব্র এই শীতে আলু ও বোরো ধানের চারার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কিছু কিছু বোরো চারায় এরই মধ্যে হলুদ হয়ে পড়েছে এবং জ্বলে যাচ্ছে। অবশ্য কিছু কৃষক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বোরো চারার খেত পলিথিনে ঢেকে দিয়েছেন। কুড়িগ্রাম ক্রমাগত তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা। দিনের বেলায় সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। চরাঞ্চলের মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। রিক্সাচালক মফিজল জানান, সারাদিন একবারের জন্যও সূর্য দেখা যায়নি। এ কারণে ঠান্ডা খুব বেশি। হাত-পা বাইরে বের করা যায় না। তবুও কষ্ট করে রিক্সা চালাচ্ছি। চরাঞ্চলের বাসিন্দা মঈনুল হক জানান, এমনিতেই চরের মানুষেরা প্রায় সময় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে থাকতে হয়। গরম কাপড় কেনার টাকা পয়সা বেশির ভাগ মানুষের নেই। তাই শীতের সময় খুব কষ্ট হয়। যে ঠান্ডা পড়েছে তাতে কাজ-কর্ম করতে পারছি না। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
×