ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন ওবায়দুল কাদের

ঢাকাকে মেগাসিটি গড়ার মহাপরিকল্পনা আতিক তাপসের

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 ঢাকাকে মেগাসিটি গড়ার মহাপরিকল্পনা আতিক  তাপসের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলাম নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরে সমন্বিতভাবে কাজের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরকে সুন্দর ও মেগা সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বাদ পড়া বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনসহ দলের সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন ব্যারিস্টার তাপস, আর বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীসহ তাকে মনোনয়ন দেয়ায় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামীতে সুন্দর ঢাকা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে দক্ষিণ এবং বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে উত্তরে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে ওবায়দুল কাদের। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, জনপ্রিয়তাসহ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে আতিকুল ইসলাম এবং ফজলে নূর তাপসের প্রার্থিতা ঘোষণার পর তাদের হাত উঁচু করে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা। দুই সিটিতে প্রার্থী নির্ধারণে কী কী বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে আওয়ামী লীগ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা জিতে আসতে পারবেন তারাই মনোনয়ন পেয়েছেন। জনপ্রিয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এমন প্রার্থীকেই বেছে নিয়েছেন যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৭৫ জন এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৫৪ জন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণের জন্য মোট ২০ জন মেয়র পদে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিল। সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে তাকে এবার দলের মনোনয়ন না দিয়ে তার স্থলে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুজিব বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ তাপসকে, যিনি গত তিন মেয়াদ ধরে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগপত্র স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দিয়েছেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। আর আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে উপ-নির্বাচনে জিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে আসেন বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী নেতা মোঃ আতিকুল ইসলাম। এবারও তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পাওয়ার পর দুই মেয়রই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তাকে মনোনয়ন প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান, সেই সঙ্গে স্মরণ করেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অবদানের কথা। আনিসুল হকের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অল্প সময়ে প্রমাণ করেছিলেন- সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে মানুষের দরজায় কিভাবে নাগরিক সেনা পৌঁছানো সম্ভব। সেটাকে পুঁজি করে আমি কাজ করতে চাই। আর ঢাকা দক্ষিণের মানুষের সহযোগিতা চাই। তারা আমাকে সমর্থন দিয়ে আমার প্রতি আস্থা রেখে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে একটি সুন্দর নগরী উপহার দেব। নির্বাচিত হলে কী করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিন তিনবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার তাপস বলেন, জনগণ যদি আমাকের নির্বাচিত করে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আপামর জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমার পূর্ণ সময় আমি কাজ করে যাব। ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। আমাদের রূপকল্প দিয়েছেন একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সেই উন্নত বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত রাজধানী প্রয়োজন। সেই উন্নত রাজধানী গড়ার লক্ষ্যে এই সুযোগটা আমি গ্রহণ করব, জনগণের কাছে যাব। পেশায় আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে, তাহলে বৃহৎ পরিসরে, ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে এবং পুরান ঢাকার অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের অবহেলা ঘুচিয়ে তাদের একটি উন্নত রাজধানী, যেখানে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা থাকবে- আমি সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন কি না, এ প্রশ্নে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘আমি আশা উনি (সাঈদ খোকন) আমাকে সমর্থন করবেন। বিদায়ী মেয়রসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সবাই এ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাব কাজ করবেন- এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠন এবং আওয়ামী লীগের সবাই আমার জন্য কাজ করে যাবেন।’ এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ায় বক্তব্যের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। উত্তরের ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, উপ-নির্বাচনে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার পর গত নয় মাসে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, সবাই জানেন, যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি সেদিন থেকে একটি দিনও সময় নষ্ট করিনি। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলি। আমরা জানি আমাদের কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন পাওয়ায় ব্যারিস্টার তাপসকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। আমার পক্ষ থেকে তাপসকে অভিনন্দন জানাই।’ দুই মেয়রের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে স্থানীয় সরকার সিটি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে থেকে কেউ মেয়র পদে নতুন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। সে অনুযায়ী রবিবারই স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
×