ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চাই

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চায়। আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবকাঠামোগত, কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উন্নত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, চৌকস এবং পেশাগতভাবে দক্ষ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন হয়েছে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) সেনাবাহিনীর ৭৭তম লং কোর্সের প্রশিক্ষণ সমাপ্তি ও অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজও পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী কৃতী ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সাবির নেওয়াজ শাওন সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসাবে সোর্ড অব অনার লাভ করেছেন। এছাড়া কোম্পানির সিনিয়র আন্ডার অফিসার মোঃ বরকত হোসেন সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান’ স্বর্ণপদক পেয়েছেন। মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী নবীন সেনা সদস্যদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩৪ বাংলাদেশী, ২৯ সৌদি, ১ ফিলিস্তিনী ও ১ শ্রীলঙ্কানসহ ২৬৫ ক্যাডেট কমিশন্ড লাভ করেছেন। ৭৭তম বিএমএ লং কোর্সে ২০৭ পুরুষ ও ২৭ মহিলা ক্যাডেট রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে নতুন নতুন ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। সেই সঙ্গে আমাদের সেনাবাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই।’ নবীন সেনা সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সেনাবাহিনীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। এ কারণেই একটি প্রশিক্ষিত, শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির শুভ উদ্বোধন করেন। যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়িত সেই রূপ আজকের বিএমএ। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণীত হয়েছে। এর আওতায় সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে মহিলা নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা ছিল যুগান্তকারী। মহিলা কর্মকর্তাদের লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান এবং কমান্ডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর দুই মহিলা অফিসার কনটিনজেন্ট কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। নবীন অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসাবে তোমরা আজ বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। আজকের এ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের ওপর ন্যস্ত হলো দেশ মাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের পেশার প্রধান ব্রত। তোমাদের মনে রাখতে হবে তোমরা এদেশের সন্তান। জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ ও হাসি কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে তোমাদের। বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষ শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে-এটাই আমার প্রত্যাশা। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ হিসাবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০২০ সালে বর্তমান সরকার এবং আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সাল নাগাদ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই সময়টাকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সে সময়ে বাংলাদেশে আর হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। তিনি নেদারল্যান্ড সরকারের সহযোগিতায় আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য সরকার গৃহীত শতবর্ষ মেয়াদী ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, আঞ্চলিক অধিনায়কসহ উর্ধতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের কমিশন্ডপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন। জাতির পিতার মিলিটারি একাডেমি উদ্বোধনের দিন প্রদত্ত বক্তৃতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন এই মিলিটারি একাডেমি একদিন মানসম্পন্ন হবে এবং বিশ্ব তাকিয়ে দেখবে।’ তিনি বলেন, আজকে সত্যিই সারাবিশ্বের মানুষ আমাদের মিলিটারি একাডেমির দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রশংসা করে এবং অনেক দেশই এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণে আসে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বশান্তি স্থাপনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষ অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাচ্ছে সেসব দেশই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সেনাবাহিনীকে কাজ করতে হয়। কাজেই, আমরা সবসময় চাই, আমাদের সেনাবাহিনী সবসময় আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন হবে, সুপ্রশিক্ষিত হবে।’ ‘সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি’, বলেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘আজকে আমি এইটুকু বলব, আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশেষ করে সেনা বাহিনীকে অত্যন্ত চৌকস এবং দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নতুন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আজকে নতুন কর্মস্থলে আপনারা পদার্পণ করবেন। জাতির পিতা যে নির্দেশ দিয়েছেন, যে শপথ আপনারা গ্রহণ করেছেন-উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মান্য করা। সেটা যেমন আপনাদের করতে হবে সেই সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা আরও বলেছিলেন-আপনাদের অধীনস্থ যারা থাকবেন, তাদের দিকেও আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে। শেখ হাসিনা এ সময় মিলিটারি একাডেমিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে বলেন, ‘চার বছর মেয়াদী অনার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীও চালু করা হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটদের কমিশন্ড লাভের সময়কাল আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি, যাতে এটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা অর্জনকালীন দেশের আর্থসামাজিক দূরাবস্থার কথা স্মরণ করে বলেন, যখন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি তখন আমাদের দেশের শতকরা ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল। আমরা আজকে তাকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হসেবে গড়ে তুলতে চাই, যে দেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে আরও সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। আমাদের সকল উন্নয়নের ছোঁয়া বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি এ সময় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ১০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে আসা এবং ২০৪১ সালনাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ২০২০ সালে তার সরকার এবং আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই সময়টিকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, যে সময়ে বাংলাদেশে আর হত দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। এ সময় নেদারল্যান্ড সরকারের সহযেগিতায় আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য তার সরকার গৃহীত শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
×