ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল চলচ্চিত্রের খরা ছিল বছরজুড়ে

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

ভাল চলচ্চিত্রের  খরা ছিল  বছরজুড়ে

গৌতম পান্ডে ॥ ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের চলচ্চিত্র, ফিরে আসছে চলচ্চিত্রের সুদিন, দেশে নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র’ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের মুখে এসব কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। কিন্তু হারাধনের মতো চলচ্চিত্রের অবস্থা দিনকে দিন যে খারাপের দিকে যাচ্ছে এটাই বাস্তবতা। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি দিন গত হয়েছে অনেক আগেই। অথচ এই চলচ্চিত্রের জন্য নির্মিত হতে চলেছে ফিল্ম সিটি। মৃতপ্রায় এক ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়ে কোনমতে যেন চলছে চলচ্চিত্রাঙ্গন। বছর শুরু হয় অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। আর শেষ হয় হতাশার হিসাব কষে। চলতি বছরটাও একই বৃত্তে বন্দী হয়ে রইল। বছরের শেষ সপ্তাহ ২৭ ডিসেম্বর ‘মায়া দ্য লাস্ট মাদার’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়ে সিনেমা হল ও টিভি প্রিমিয়ারে মুক্তি পাওয়া মোট চলচ্চিত্র ৪৬টি। আমদানি করা চলচ্চিত্র দিয়েও সিনেমা হলে দর্শক ফেরানো যায়নি। ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের আরেকটি বছর পার করল ঢালিউড। হিট, সুপারহিটের সংখ্যা কমে বেড়েছে ফ্লপ চলচ্চিত্রের সংখ্যা। হিসাব কষলে ব্যবসা সফলতার দিক দিয়ে সেরা দশটি চলচ্চিত্রও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য এর মধ্যেও ভাল গল্পের কিছু চলচ্চিত্রও দর্শক প্রেক্ষাগৃহে পেয়েছে। তবে বছরজুড়ে সেই সংখ্যাটা ছিল অনেক কম। আমদানি করা চলচ্চিত্র দিয়েও চলচ্চিত্র হলে দর্শক ফেরানো যায়নি। হল মালিকদের নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, দিন দিন খারাপই হচ্ছে চলচ্চিত্রের ব্যবসা। এভাবে চলতে থাকলে হল চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। এ বছর বাংলাদেশের ‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া কোন চলচ্চিত্রই ব্যবসা করতে পারেনি। এভাবে একটা শিল্প চলতে পারে না। চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে মাত্র একটি চলচ্চিত্রকে হিট বলা যেতে পারে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র আলোচনায় থাকলেও সেগুলো মুনাফা অর্জনে সফল হয়নি। অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহের বছরে মাত্র ১টি চলচ্চিত্র সফল! ভাল চলচ্চিত্রের অভাবে কমে যাচ্ছে হল। সারাদেশে এখন ২০০টি হলও নেই। যেগুলো আছে তার ৭০ ভাগ মানহীন পরিবেশের কারণে দর্শকের পছন্দের তালিকায় নেই। এদিকে, চলচ্চিত্রের সঙ্কটময় দিনে লগ্নি করতে আসছেন না কোন নতুন প্রযোজক। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সিন্ডিকেটের কারণে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন পুরনো লগ্নিকারকরা। নানামাত্রিক জটিলতার কারণেই চলচ্চিত্রে ধস নেমে এসেছে বলে মনে করেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ব্যবসায়ের সঠিক চিত্র পাওয়ার কোন নির্দিষ্ট বা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নেই। এক্ষেত্রে প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির কাছ থেকে কিছু নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের প্রযোজক বা পরিচালকের মতামতের ওপর ভরসা করতে হয়। সেই সব তথ্য-উপাত্ত যোগ বিয়োগ করে দেখা যায় মুক্তি পাওয়া ৪৬টি ছবির মধ্যে শুধুমাত্র ‘পাসওয়ার্ড’ চলচ্চিত্রটিই ব্যবসাসফল হিসেবে শীর্ষে। এটি ছিল সুপারহিট। শাকিব খান-বুবলী অভিনীত মালেক আফসারি পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের সাফল্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস। তবে একই নায়কের ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সাড়া ফেলতে পারেনি দর্শকদের কাছে। বরং গল্প ও নির্মাণের দুর্বলতায় বিরক্তির কারণ হয়েছে। অন্যদিকে শাকিব খান ও ববি অভিনীত বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ছিল ‘নোলক’। এই চলচ্চিত্রে পারিশ্রমিক হিসেবে ৬০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন শাকিব খান। ফেরারি ফরহাদের কাহিনী ও চিত্রনাট্যে ‘নোলক’ প্রশংসিত হলেও তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। একইভাবে ‘ফাগুন হাওয়া’, ‘আব্বাস’, ‘যদি একদিন’, ‘আবার বসন্ত’, ‘সাপলুডু’ চলচ্চিত্রগুলো আলোচনায় ছিল। চলচ্চিত্রগুলো বেশ প্রশংসাও পেয়েছে দর্শকের কাছে। তবে তাদের ব্যবসাসফল হওয়ার ব্যাপারে খবর পাওয়া যায়নি। চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া ভিন্ন ভাবনার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে ছিল ‘আলফা’, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘হৃদয়ে রংধনু’ এবং এগারোটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে নির্মিত ‘ইতি, ‘তোমারই ঢাকা’। এই চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও প্রশংসিত হলেও দেশে ব্যবসা করতে পারেনি। এ বছরের ২৯ নবেম্বর মুক্তি পেয়ে প্রশংসিত তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রটি। স্টার সিনেপ্লেক্স প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ, সুনেরাহ প্রমুখ। ‘ন ডরাই’ বেশ আলোচনার মধ্যেই ছিল। তবে ব্যবসায়িক বিচারে চলচ্চিত্রটি ব্যর্থতার মিছিলেই যুক্ত হয়েছে। নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় ছিল কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘গহীনের গান’। ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। সাদাত হোসাইন পরিচালিত এ চলচ্চিত্র মোটামুটি দর্শক পেয়েছে। ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হলো- ‘আই এ্যাম রাজ’, ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, ‘দাগ হৃদয়ে’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘রাত্রির যাত্রী’, ‘অন্ধকার জগৎ’, ‘হৃদয়ের রংধনু’, ‘যদি একদিন’, ‘বউ বাজার’, ‘কারণ তোমায় ভালবাসি’, ‘লিডার’, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘তুই আমার রানী’, ‘প্রতিশোধের আগুন’, ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘আলফা’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘নোলক’, ‘আবার বসন্ত’, ‘আলোয় ভুবন ভরা’, ‘ভালবাসার উত্তাপ’, ‘আব্বাস’, ‘অনুপ্রবেশ’, ‘আকাশ মহল’, ‘কালো মেঘের ভেলা’, ‘গোয়েন্দাগিরি’, ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’, ‘বেপরোয়া’, ‘ভালবাসার রাজকন্যা’, ‘ভালবাসার জ্বালা’, ‘ভালবাসা ডটকম’, ‘অবতার’, ‘মায়াবতী’, ‘পাগলামী’, ‘সাপলুডু’, ‘ডনগিরি’, ‘পদ্মার প্রেম’, ‘বেগমজান’, ‘ইতি তোমারই ঢাকা’, ‘ন’ ডরাই’, ‘ইন্দুবালা’, ‘প্রেম চোর’, ‘গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ’, ‘ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২’, ‘গহীনের গান’, ‘মায়া- দ্য লস্ট মাদার’।
×