ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় টার্মিনাল

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

তৃতীয় টার্মিনাল

সঙ্গত কারণেই সামান্য সঙ্কট ছিল, কিছুটা কালক্ষেপণও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহু প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মহাকর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভিআইপি, ভিভিআইপিসহ সব বিমানযাত্রীকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিমানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’রও উদ্বোধন করেন। বিশ্বের সব স্থান থেকে বিমানের টিকেট কেনার সুবিধা সংবলিত একটি মোবাইল এ্যাপসও একই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন। টার্মিনালটি চালু হলে আন্তর্জাতিকমানের সেবা পাবে বছরে ২ কোটি যাত্রী। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রকল্প ব্যয় বড় অঙ্কের, সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের রূপরেখা অনুযাযী এই টার্মিনাল হবে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়। এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশের সুযোগ পাবে। উন্নত হবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা। বর্তমানে দেশে বছরে ৮০ লাখ মানুষ বিমানবন্দর ব্যবহার করে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি বিমানবন্দরের রানওয়ে ও পার্কিং বেসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো। ক্রমবর্ধমান এভিয়েশন খাতের বিপরীতে আগামী বিশ বছরের চাহিদা মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে শাহজালাল সম্প্রসারণের তৃতীয় প্রকল্প। এজন্য উদ্ধার করা হয়েছে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা বিপুল পরিমাণ জমি। বিভিন্ন স্থাপনাও অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গফুটের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য যতটুকু জমি প্রয়োজন সেটা নির্মাণোপযোগী করে তোলার জন্য কাজ প্রায় সম্পন্ন। নতুন টার্মিনাাল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এজন্য স্থানান্তর ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার ও পদ্মা ওয়েল ডিপো। হ্যাঙ্গার স্থানান্তরের কাজও এগিয়ে চলছে জোর গতিতে। মূল নক্সায় রয়েছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে ১২টি। আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও আসবে পরিবর্তন। বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে নির্মাণ করা হবে সাবওয়ে। সব মিলিয়ে গর্বিত হওয়ার মতোই ঘটনা। সামগ্রিকভাবেই যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে তার একটি উদাহরণ দেশে এই সম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ। একদিন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে চলে আসবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরসমূহ এমন আকাক্সক্ষা অমূলক নয়। তবে আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জনের জন্য পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। শুধু টার্মিনাল তৈরি ও আধুনিক সুবিধাই বড় কথা নয়, সকল পর্যায়ে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা এবং সেটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ। যে কোন দেশের যে কোন নাগরিক এসে যদি বিমানবন্দরে তার কাক্সিক্ষত মানসম্পন্ন সেবাটুকু পায়, সে যদি সন্তুষ্ট হয়, তাহলেই একটি বিমানবন্দরের সফলতা আসতে পারে। যাত্রীসেবাই হলো প্রধান বিবেচনা; এর মধ্যেও নিরাপত্তা হলো প্রথম শর্ত। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সক্ষমতা নিয়ে আমাদের বারবার বিব্রত হতে হয়েছে। আশা করতে পারি নতুন বিমান প্রতিমন্ত্রী সকল সঙ্কট শতভাগ মোকাবেলা করে দক্ষতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন এবং যথাসময় তৃতীয় টার্মিনালের কাজ সুসম্পন্ন হবে।
×