ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

শুভ হোক নতুন বছর

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

শুভ হোক নতুন বছর

নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, আনন্দ-বেদনা আর স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে বিদায় নিচ্ছে বছরের শেষ সূর্য। এই সূর্যের সঙ্গে বিদায় নেবে ২০১৯ সাল। মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) ভোরে নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে উঠবে নতুন সূর্য। সেই সূর্যের আলোয় ধুয়ে-মুছে যাবে সব গ্লানি, দুঃখ আর কষ্ট। এই প্রত্যাশাতেই পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা বিশ্বের মানুষ। নতুন বছর ২০২০কে স্বাগতম জানাই। ঐতিহাসিক কারণে আমরা খ্রিস্টীয় শতাব্দীতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনেক ঐতিহাসিক সত্যের মধ্যে এটাও একটা যে আমরা এ এলাকার অধিবাসীরা বঙ্গীয় বর্ষ মেনে চলি দেশপ্রেমজাত সাংস্কৃতিক কারণে, আরবি বছর মেনে চলি ধর্মীয় কারণে, কিন্তু নিত্য জীবনযাপনের বেলায় খ্রিস্টীয় বর্ষ মেনে চলি। প্রথম দুটো বর্ষপঞ্জি আমরা পোলাও-কোরমার মতো বিশেষ আহারের মতো ব্যবহার করি, নিত্য ডাল-ভাত কিন্তু হয় খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জি মোতাবেক। আবার ব্রিটিশদের কারণেই আমরা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বা খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারকে ইংরেজী ক্যালেন্ডার বলে মনে করি। কিন্তু এটা নিয়ে বিবাদ করার কিছু নেই, কারণ আন্তর্জাতিকতাবাদ ব্যাপকভাবে পশ্চিমা সভ্যতা দ্বারা সুনির্দিষ্টিত হওয়াতে খ্রিস্টীয় বছরটাই বিশ্বব্যাপী মানা হয়। আমরাও তাই করি। তবে প্রতিটা নতুন বছরের আগমনের সময় সামাজিক মানুষ যে কিছুটা অদৃষ্টবাদী তারও প্রকাশ ঘটে। নতুন বছরে তার জীবনে কী ঘটতে যাচ্ছে ব্যক্তি মানুষ যেমন সেটা জানতে চায়, তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনেও নতুন বছরটা কেমন যাবে তারও একটা অনুমাননির্ভর বিচার-বিশ্লেষণ চলতে থাকে। তাই নতুন বছর শুরুর আগে আগে পত্রপত্রিকার দোকান ভরে ওঠে বিভিন্ন বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন ও সাময়িকীর সরবরাহে যাদের প্রকাশিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি পাঠকপ্রিয় ফিচার হলো, ‘নতুন বছর কেমন যাবে!’ একটা আগত বছরে কী কী ঘটতে পারে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সেটা জানার কৌতূহল থাকার অর্থ হলো মানুষ পূর্বে প্রাপ্ত জ্ঞান অনুসারে ভবিষ্যতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কিংবা ভবিষ্যতকে নিজের ইচ্ছাধীনভাবে পরিচালিত করতে চায়। অর্থাৎ এটা শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, সজ্ঞানে ছাড় দেয়াও বটে। কিন্তু এ চাওয়াটার পুরোটাই হলো বালুচরে লেখা প্রিয়তমার নামের মতো, ঢেউ এসে এ নামটি মুছে দেবে কি দেবে না তার অনিশ্চয়তা থাকবেই, যেমনটি থাকবে নতুন বছরের সম্ভাবনার স্বপ্নগুলো কতটা টিকবে, কতটা টিকবে না সে সম্পর্কে দুশ্চিন্তা। যে অর্থে মানুষ হাত দেখায় গণকের কাছে, যে অর্থে মানুষ পারলৌকিক জগত থেকে ইশারা পাওয়ার জন্য পীরের শরণাপন্ন হয়, সে অর্থে মানুষ নতুন বছরে তার জন্য কী জমা আছে, কিংবা রাষ্ট্রে কী ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠে। ঠিক সে কারণেই আগত বছরটা নিয়ে এ লেখাটা লেখার সময় আমার মনোভাবও অনেকটা এ রকম যে আসলেই কী ঘটবে এটা যদি সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে জেনে নেয়া যেত, তাহলে দুশ্চিন্তা- যদি খবর খারাপ হয়- স্বস্তি, যদি খবর ভালো হয়- এ দুই ধরনের মনোভাব নিয়ে থাকা যেত। কিন্তু দুশ্চিন্তা থাকত না, থাকত ভবিষ্যতকে- সে যাই হোক না কেন- সহজভাবে গ্রহণ করে নেয়ার মনোভাব। সাড়ম্বরেও নয়-চোখের জলেও নয়। অনেকটা রুটিনের মতোই বিদায় নিচ্ছে ২০১৯ বাঙালীর জীবন থেকে। অতীতের বহমান রক্তস্রোতে এই বছরটিও রঞ্জিত হয়েছে। দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে। বিগত বছরের তুলনায় ধর্ষণ বেড়ে গেছে। সাম্প্রদায়িকতা সারা বছর ধরেই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বারংবার আঘাত হেনেছে। সর্বশেষ ভোলার এক হিন্দু-ঘরে জন্ম নেয়া এক নির্দোষ ছেলের ফেসবুকে ইসলাম ও নবী নিয়ে অবমাননা সংক্রান্ত পোস্ট দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তাদের বাড়িঘরসহ প্রতিবেশী হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে লুটপাট করার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তার প্রতিবিধানের আদৌ কোন ব্যবস্থা নেই বা অপরাধীদের শাস্তি দানের কোন উদ্যোগও নেই। এভাবেই কাটল সারাটি বছর। ২০১৯ সাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছরও বটে। ফণি ও বুলবুলের মতো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-বৃষ্টির প্রাবল্য, ব্যাপক ফসলহানি সব মিলিয়ে কৃষি, কৃষক ও ভোক্তা জীবন ছিল বিপর্যস্ত। দুর্নীতিতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে, সম্ভবত এ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবি রাখে। হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও, লুটপাট, বিদেশে পাচারের মহোৎসবের বছর ২০১৯। বিস্ময়ের ব্যাপার, ব্যাংকিংয়ে দলীয়করণের ফল এতই ভয়াবহ- যে কারও গায়ে বিন্দুমাত্র আইনের আচরও লাগতে দেখা যাচ্ছে না- যা বিশ্বের কোথাও দেখা যাবে না। অপরাপর ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রাবল্য বিস্তর। দুদক যথারীতি চুনোপুঁটির গায়ে আঘাত হেনেছে-রাঘব বোয়ালরা দিব্যি নিরাপদে থেকে গেল বরাবরের মতোই। প্রত্যাশা সকল ক্ষেত্রেই। কৃষি উৎপাদন আজও প্রকৃতিনির্ভর। ফলে নিয়ত উৎপাদন সঙ্কট দৃশ্যমান হচ্ছে। কৃষি-বিজ্ঞানীরা যাতে নতুন নতুন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃতি, জীব, উৎপাদন, বছরের একই ক্ষেত্রে বহুবার বহু ফসল উৎপাদনের মতো নতুন নতুন আবিষ্কার করুন। নদী ও কৃষি জমির পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েই চলেছে। যারা কৃষি জমি নানাভাবে কিনে ভিন্নতর কাজে ব্যবহার করছেন তার অবসান ঘটানো অপরিহার্য। ২০২০-এ তা ব্যাপকভাবে শুরু হোক। কৃষি, কৃষক ও দেশ বাঁচুক।
×