ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জনগণকেই দেশের মালিক হিসেবে দেখতে চান সংবিধান প্রণেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, দেশ সংবিধান মতো চলছে না। আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দকী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের যে কোন নির্বাচনে চুরি না করে নৌকা যদি পাস করে, তাহলে আমি সমুদ্রে গিয়া ডুব দেব। তিনি সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিদের ৩০ ডিসেম্বর সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করুন। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নবম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দেয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিন দলের তিন নেতা এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক আ স ম আবদুর রবের দলের সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের বাইরেও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মেলনে যোগ দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাসদ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার মূল চেতনাকে গড়ে তোলার জন্য। সেই লড়াই জাসদ এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এসেও আমাদের বলতে হচ্ছে যে, আমরা গণতন্ত্র ফেরত চাই। বর্তমান যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, সেই সঙ্কট সমাধানের জন্য জনগণের অভ্যুত্থান বা জনগণের আন্দোলন ছাড়া কখনই সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া আইনত জামিন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। আজকে যারা জোর করে ক্ষমতায় বসেছে, তারা জানে খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে তাদের যে রাজনৈতিক নীলনক্সা সেটা তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে জনগণের আশা আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন মুখোশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। আমাদের সংবিধান, আমাদের শাসনতন্ত্র ভেঙ্গে চুড়ে খান খান করে দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আশা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সংগ্রাম জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা পারিনি। তবে আমাদের পারতে হবে, আমাদের আরও বৃহত্তর ঐক্য তৈরি করতে হবে। শুধু ঐক্যফ্রন্ট এবং অন্যান্য জোট নয়, দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলমুক্ত করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জনগণকেই দেশের মালিক হিসেবে দেখতে চান সংবিধান প্রণেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে সবার সঙ্গে আমি উৎসাহিত হয়ে বলব, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর তো হতে চলছে। এইবার আসুন, যে জিনিসটা আমাদের পাওয়ার কথা, কিন্তু বঞ্চিত করা হয়েছে, জনগণকে সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিকার মালিক হই, তাহলে আমাদের মাথা কেনার মতো কেউ আছে বলে মনে করি না। আমাদের মাথা কেনার মতো টাকা কারও নেই। আর টাকা থাকলেও কেউ আমাদের মাথা কিনতে পারবে না। কারণ, বাঙালীর মাথা কেউ কিনতে পারে না। কিছু লোককে কায়দা করে স্বল্প সময়ের জন্য বাগে নিতে পারে, কিন্তু ধরে রাখতে পারে না।’ কিন্ত এই কথাগুলো কেবল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললে হবে না। আমাদের লোকসংখ্যা তো কোটি, কোটি। এখানের কথা পাড়া-মহল্লায় পৌঁছাতে হবে, ইউনিয়নে পৌঁছাতে, উপজেলায় পৌঁছাতে হবে, জেলায় জেলায় পৌঁছাতে হবে। এই কাজটা করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়তে হবে বলেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তারা (সরকার) এত উন্নয়ন উন্নয়ন যে করে কিন্তু এই উন্নয়ন করতে গিয়ে কত টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে, কত টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আমরা আইয়ুব খানের সময় দেখেছি, তারা উন্নয়নের বক্তব্য দিয়ে দিয়ে, আবার তাদের পতনও দেখেছি। অর্থাৎ উন্নয়নের বক্তব্য দিতে দিতে যে পতন হয়, সেটার তো সব চেয়ে বড় উদাহরণ আইয়ুব খান।’ ‘তবে এত কিছুর পরও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের রফতানি বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে আমাদের কৃষক। তারা কিছু না পেয়েও দেশের জন্য যা দেয়ার, তা মুক্ত হস্তে দিয়ে যাচ্ছে।’ আর আমাদের গার্মেন্ট! এক সময় বিদেশীরা শঙ্কা জানিয়ে বলেছিল যে, মুসলিম প্রধান একটি দেশের মেয়েরা আমাদের গ্রাম থেকে এসে গার্মেন্টসে কাজ করবে? এখন সেই গার্মেন্টস সারা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। অর্থাৎ আমরা পারি বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সুতরাং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও যে জিনিসটি এখনও আমরা পাইনি। যেমন শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না ? দলীয়করণ। এটা আমাদের বড় রোগ। যেসব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের মানের ভিত্তিতে নয়, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়।’ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘হয় তারা পদত্যাগ করুক, না হয় ৩০ তারিখের আগেই তাদের বহিষ্কার করুন। তাহলে দেখবেন মানুষ আপনাদের পেছনে দাঁড়াবে। রাজনীতিতে একদিকে থাকতে হবে। সেদিক হচ্ছে মানুষের দিক। মানুষের দিক ছাড়া অন্যদিকে গিয়ে লাভ নাই। জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট মোহসীন রশিদ, বিকল্প ধারার মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন ও বিকল্প ধারার সভাপতি নুরুল আমীন বেপারি।
×