ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ১ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করবেন

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী ১ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করবেন

ওয়াজেদ হীরা ॥ বছর ঘুরে এসেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলা আয়োজনের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। বাণিজ্যমেলাকে দৃষ্টিনন্দন করতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে করা হচ্ছে মূল গেট। এবারও পুরনো ভেন্যু শেরেবাংলা নগরের মাঠেই বসছে বাণিজ্যমেলা। আর সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরই স্থায়ী অবকাঠামোতে আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে সরকার। নতুন বছরের প্রথম দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্যমেলার ২৫তম এই আসরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। ইতোমধ্যেই ৯০ শতাংশ অবকাঠামো কাজ শেষ হয়েছে। মেলা উদ্বোধনের আগেই শতভাগ শেষ হবে বলে জানান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব আবদুর রউফ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ঠিকভাবেই কাজ করে যাচ্ছি যা বাকি আছে দশ শতাংশের মতো তা মেলা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে। গত দু’দিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে কাজের নানা দৃশ্য। কয়েক দিন ধরেই কাজের ব্যস্ততাও বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরতরা রাত-দিন সমান তালে কাজ করছেন। বড় প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও ছোট ছোট স্টল ও মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ অনেকটা ধীরগতি। তবে দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে বলেও জানা গেছে। এবারের মেলায় প্রধান ফটক তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রতীক সামনে রেখে। ফটকের দুই পাশে দুটি জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতীকের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে পদ্মা সেতুর প্রতীকী কাঠামো। জানতে চাইলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উপ-পরিচালক (ফাইন্যান্স) আবদুর রউফ বলেছেন, এবার মুজিববর্ষ ঘিরে মেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন বিশেষভাবে তথ্যবহুল করা হবে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তিনি বলেন, মেলায় উন্মুক্ত পরিসর বাড়িয়ে কমানো হচ্ছে স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা। প্রধান ফটক তৈরি করা হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে। এতে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকবে। সঙ্গে ভিআইপি ফটকে স্যাটেলাইটের অবয়ব স্থাপন করা হবে। সদস্য সচিব আব্দুর রউফ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দুই স্মৃতিসৌধকে যুক্ত করছে পদ্মা সেতু। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী বাণিজ্যমেলার এবার স্টলের সংখ্যা কমেছে। প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, রেস্তরাঁ ও স্টলসহ মোট ৪৫০টি জায়গা বরাদ্দ রেখে মেলার আঙ্গিনা সাজানো হয়েছে; যা গতবছর ছিল ৫৫০টি। সবচেয়ে বেশি কমেছে সাধারণ স্টল। গত বছর ২৫০টি সাধারণ স্টল থাকলেও এবার মাত্র ৫০টি স্টল রাখা হচ্ছে। মেলার অয়োজক কমিটি বলছে, এবারের মেলায় দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ৪৫০টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে জেনারেল প্যাভিলিয়ন ১১টি, প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন ৬৬টি, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন আটটি ও বিদেশী প্যাভিলিয়ন ২৭টি। মিনি প্যাভিলিয়নের মধ্যে জেনারেল মিনি প্যাভিলিয়ন ৭৫টি, প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪৫টি, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন ছয়টি, বিদেশী মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি। স্টলের মধ্যে থাকবে প্রিমিয়াম স্টল ৮৪টি, বিদেশী স্টল ১৭টি, জেনারেল স্টল ৫০টি, রেস্টুরেন্ট দুটি, স্ন্যাকস কর্নার তিনটি, ফুড স্টল তিনটি, আইস ল্যান্ড তিনটি, বাগান ও বসার জায়গা ১৬টি, শিশুপার্ক দুটি ও ই-শপ একটি। সঙ্গে আরও থাকবে ইকোপার্ক, পর্যাপ্ত টয়লেট, এটিএম বুথ, মসজিদ, প্রতিবন্ধীদের জন্য অটিজম সেন্টার, ভোক্তা অধিদফতরের অভিযোগ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ইত্যাদি। গত কয়েক বছরের মতো প্রাপ্তবয়স্কদের (১২ বছরের বেশি) টিকেটের দাম আর ৩০ টাকার থাকছে না এবার। বড়দের টিকেটের মূল্য ঠিক হয়েছে ৪০ টাকা। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (২ থেকে ১২ বছর) আগের মতোই ২০ টাকার টিকেট কিনতে হবে। টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে জানতে চাইলে ইপিবির কর্মকর্তারা জানান, সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবার প্রবেশ টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। মেলা চলাকালে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কেনা যাবে টিকেট। মেলায় ২৫ শতাংশ টিকেট অনলাইনে বিক্রির শর্ত দেয়া হয়েছে। গেটের ইজারার দায়িত্বে এবারও মির ব্রাদার্স। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়ে আসছে। দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনে মেলার অভ্যন্তরে সুযোগ-সুবিধার জন্য এবার দুটি ফোয়ারা, ইকোপার্ক, বিশ্রামাগার, মা ও শিশু কেন্দ্র, দুটি শিশু পার্ক রাখা হচ্ছে। একইভাবে মেলার ভেতরে নির্ধারিত স্থানে সুন্দরবন অথবা কোন পরিকল্পিত ইকোপার্কের আদলে শোভাবর্ধন স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সেখানেও সমাজবিরোধী, সরকারবিরোধী, উস্কানিমূলক কিংবা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন প্রচার চালানো যাবে না বলে সতর্ক করেছে ইপিবি। এদিকে, বার্ষিক এ মেলার ভেন্যু রাজধানীর পাশের উপশহর পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হবে বলে গত কয়েক বছর ধরেই ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। তবে এবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বসবে আগের ভেন্যুতেই। আর স্বাধীনতার ৫০ বছর হবে আগামী ২০২১ সালে। সেই বছরই ২৬তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শেরেবাংলা নগরের অস্থায়ী মাঠ ছেড়ে স্থায়ী অবকাঠামোতে আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে সরকার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের মেলা পূর্বাচলে হচ্ছে। সে লক্ষ্যে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর এলাকার ৪ নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর সড়কে এ মেলার স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নামে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে দ্রুতই। যা চলতি ডিসেম্বরেই হওয়ার কথা। যেটুকু বাকি থাকবে তা শেষ হতে লাগবে আরও কয়েক মাস। সবকিছু সম্পন্ন করে ২০২১ সালের বাণিজ্যমেলা করতে চায় ইপিবি। জানা গেছে, ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এই অবকাঠামো নির্মাণ করছে চীনা কোম্পানি চায়নিজ এস্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। চীন সরকারের অনুদান সহায়তায় ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে এক হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুরুতে এ প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় দফায় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি টাকা। পরে আরও ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয় যুক্ত করা হয়েছে। তবে এ পর্যায়ে প্রকল্পের ডিজাইনেও নতুন নতুন কাজ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, স্থায়ী বাণিজ্যমেলার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইপিবিকে সেন্টারটি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথাও ছিল তবে আনুষঙ্গিক কিছু বাকি আছে সেজন্য সময় চেয়েছে। তারা আগামী মে মাসে বুঝিয়ে দেবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করা হবে স্থায়ী অবকাঠামো বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। সূত্র জানায়, মেলার আয়োজনে রফতানি বাণিজ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে দেশী পণ্যের স্থানীয় ক্রেতা বাড়ানোর কৌশলও থাকবে। এবারের মেলায় গতবারের চেয়ে বেশিসংখ্যক দেশ অংশগ্রহণ করবে। এবারের ২০২০ সালের ২৫তম বাণিজ্যমেলা নিয়ে ইপিবি সূত্র জানায়, এবার মেলায় ভিআইপিসহ চারটি গেট হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাঠে থাকবে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের নিরাপত্তাও থাকছে। বাণিজ্যমেলা ঘিরে নিñিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি সদর দফতরে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা চলাকালে মাসব্যাপী পোশাকে ও সাদা পোশাকের পুলিশ ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। মেলা প্রাঙ্গণে পুলিশের ১০টি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, যার মাধ্যমে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। মেলা প্রাঙ্গণ বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে ফায়ার সার্ভিসের একটি সাবস্টেশন থাকবে। মেলার অভ্যন্তরে উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের পরিবর্তে স্বল্প শব্দের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেলায় ফুড কোর্টে মূল্য তালিকা সর্বক্ষণিক প্রদর্শন করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে কোন হকার ও ভিক্ষুক থাকবে না। উল্লেখ্য, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মেলার অস্থায়ী মাঠে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন।
×