ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে আটক জঙ্গীদের তথ্য

পুলিশের ওপর সাম্প্রতিক হামলার নেতৃত্ব দেয় পিচ্চি সফিক

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

  পুলিশের ওপর সাম্প্রতিক হামলার নেতৃত্ব দেয় পিচ্চি সফিক

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির নতুন নেতা পিচ্চি সফিক। আটক জঙ্গীদের জবানবন্দীতে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সিটিটিসি। রাজধানীতে পুলিশের ওপর যে পাঁচটি হামলা হয়েছে তার নেতৃত্বে ছিল এই পিচ্চি সফিক। সিটিটিসি প্রধানের দাবি পুলিশের ওপর পাঁচ হামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। সব হামলায়ই নেতৃত্ব দেয় পিচ্চি সফিক। সঙ্গে ছিল জেএমবির চার গ্রুপের সদস্যরা। পুলিশের ওপর হামলায় যেসব বোমা ব্যবহৃত হয় তা ছিল দূরনিয়ন্ত্রিত। রিমোর্ট কন্ট্রোলে পুলিশের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। এ বছর গুলিস্তান, মালিবাগ ও সায়েন্স ল্যাব মোড় এলাকায় বোমা হামলা এবং পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশবক্সের কাছে বোমা পুঁতে রাখাসহ এই পাঁচ হামলা চালায় পিচ্চি শফিকের অনুসরীরা। নব্য জেএমবি নতুন করে গোছানোর চেষ্টা করছে এই গ্রুপ। মূলত নব্য জেএমবির শূরা সদস্য পিচ্চি শফিক। সংগঠনে ‘পিচ্চি সফিক’ আবু সফিক আল বাঙালী নামে পরিচিত। উর্ধতন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির বিভিন্ন সেলে বিভক্ত হয়ে হামলা চালায়। নব্য জেএমবির তিন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে ওরা জানায়, দেশের অভ্যন্তরে প্রায় অর্ধশতাধিক আইএস মতাবলম্বী জঙ্গী আছে এখনও যারা অনলাইনে আইএসের শীর্ষ নেতার বয়ান শুনে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। কমপক্ষে পাঁচজনের সমন্বয়ে তাদের একেকটি সেল সদস্যরা একে অপরের হাতের ওপর হাত রেখে শপথ বাক্য পাঠ করার অডিও-ভিডিও আইএসের নিজস্ব চ্যানেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে এরকম অন্তত ১০ সেলের মাধ্যমে তারা তৎপরতা চালায়। এই সেলকে অনেকে ‘উলফ প্যাক’ বলে থাকে। সংগঠিত থাকলেও ওদের কাছে বড় ধরনের হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক তেমন একটা নেই। জঙ্গীদের বিস্ফোরক সংগ্রহের উৎসস্থল পুলিশ অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে তারা দেশী প্রযুক্তিতে তৈরি বিস্ফোরক দিয়ে ছোট ছোট হামলা চালাচ্ছে। সিটিটিসির এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির তিন জঙ্গী নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এই মুহূর্তে জঙ্গীদের হামলার প্রধান লক্ষ্য পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল। কারণ পুলিশের ওপর হামলা চালালে সহজেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার পাওয়া যায়। হামলা চালিয়ে পুলিশকে ভয় পাইয়ে দেয়াও জঙ্গীদের টার্গেট ছিল। ডিএমপির এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, হোলি আর্টিজানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে আইএস মতাদর্শের অনুসরণকারী জঙ্গীরা অনেকটাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই হয় নিহত না হয় আটক হয়। তিন বছরের মাথায় এই গোষ্ঠী নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। ?গত ২১ এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় আইএসের ভয়ংকর সফল হামলার পর এখানকার জঙ্গীরা নতুন করে অনুপ্রাণিত হয়। তারা রাজধানীতে পুলিশকে লক্ষ্য করে বারবার বোমা ?হামলা চালায়। এসব হামলার দায় আইএস স্বীকার করলেও দেশে কোন আইএস জঙ্গী নেই, হোমগ্রোন জঙ্গীরাই আইএস মতাদর্শী হয়ে পুলিশের ওপর জঙ্গী হামলা চালিয়ে আবারও দেশ ও বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। গত এপ্রিল থেকে এসব ধারাবাহিক বোমা হামলার ঘটনার পর হামলাকারী জঙ্গীদের আটকের পর দেশে আর কোন জঙ্গী হামলা হচ্ছে না। এই জঙ্গী হামলায় জাড়িত অনেকেই পলাতক, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা হচ্ছে।
×