ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্যাথলজি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

  প্যাথলজি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা  হচ্ছে না

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী নির্দেশনার পরও প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করছে না অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল। সরকারী হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে মূল্যতালিকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ সংক্রান্ত আইনে কোন প্রতিষ্ঠান তা না করলে এক বছর কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে প্যাথলজি ও ডাক্তারী পরীক্ষার ফি ইচ্ছেমতো আদায় করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিম্নমানের হাসপাতাল। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। অধিদফতর জানায়, ২০০৯ সালের এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্যতালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে। বর্তমানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন সেবা’র মূল্যতালিকা প্রদর্শনের কথা বলা হলেও সেবাগুলো নির্দিষ্ট করা ছিল না। সংশোধিত আকারে আইনটি পাস হলে সরকার এ আইনের আলোকে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ শত শত বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান লালন পালন করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব সদস্যের অভিযান প্রশংসিত হলেও ঘন ঘন অভিযান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে দেশজুড়ে অবৈধ ওইসব সেন্টারের ছড়াছড়ি। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। সরকারী হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারী হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেয়া যাবে না। তবে বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সরকারী ফি বেসরকারী হাসপাতালের ফি’র তুলনায় অনেক গুণ কম। সরকারী হাসপাতালে করোনারি এনজিওগ্রামে ২ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ২ হাজার টাকা, এমআরআই ৩ হাজার টাকা, ইসিজি ৮০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ২০০ টাকা, এক্সরে ২০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ৩০০ টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ২ হাজার টাকা, ইউরিন ৩০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা। সকল হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই মুহূর্তে কোন ঘাটতি নেই। বেসরকারী হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি বেসরকারী হাসপাতালসমূহের চিকিৎসাসেবার খরচ অনেকটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিটি অপারেশনে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। প্রতিদিন সিসিইউ সেবা পেতে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আইসিইউ সেবা পেতে লাগে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এভাবে করোনারি এনজিওগ্রামে ১৫ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, এমআরআই ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা, ইসিজি ৩০০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, এক্সরে ৫০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ১ থেকে ৩ হাজার টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ১৫ হাজার টাকা, ইউরিন ২০০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ৪৫০ টাকা। রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিম্নমানের হাসপাতাল । এ সব সেন্টার থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারী হাসপাতালের এক শ্রেণীর ডাক্তারদের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছ টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার হচ্ছে মানুষ। বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। অভিযোগ উঠেছে, কমিশনের লোভে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বেশির ভাগ সরকারী হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেয়া হয় না। এখানে সবচেয়ে দামী দামী আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে দ্রুততম সময়েই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী অনুমোদন নেয়ারও প্রয়োজনবোধ করে না।
×