ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করতোয়ার মাটি ও তলদেশের বালু উত্তোলন

ভূস্তর ভেঙ্গে তছনছ ॥ সামান্য ভূকম্পনেই বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

ভূস্তর ভেঙ্গে তছনছ ॥ সামান্য ভূকম্পনেই বিপর্যয়ের শঙ্কা

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ ভূউপরিভাগে উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিন বসিয়ে ভূঅভ্যন্তরের কাঠামো ভেঙ্গে তছনছ করে বালি উত্তোলন করে মহাবিপর্যের দিকে এগিয়ে নেয়ার অশুভ তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছেই না। হালে নদীর ভেতরে নানা ছদ্মাবরানে উচ্চ শক্তির শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। খালি চোখে মনে হবে ড্রেজিং (!) হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, ভূস্তর ও নদীর বেড লেভেল (তলদেশ) এলোমেলা হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য। সামান্য ভূকম্পনেই মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা এখন নাগালের মধ্যে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে নানাভাবে জানান দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর মাঝে মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শ্যালো ইঞ্জিন আটক করে পুড়িয়ে দেয়। তারপর কিছুদিন নীরব থাকার পর ফের বালুদস্যুরা মাঠে নামে। মিডিয়া সরব হয়। ফের প্রশাসন মাঠে নামে। দিন কয়েক পর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। মনে হবে বাঘ বন্দীর খেলা। নদী ও মটির তলদেশের উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি উত্তরাঞ্চল ছাড়িয়ে পূর্ব দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত শতকের ৯০’র দশকে যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগ করে মাটির নিচে থেকে বালি উত্তোলনের পালা শুরু হয় বগুড়ায়। পরে জয়পুরহাট নওগাঁ হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। বগুড়া অঞ্চলের মাটির নিচ থেকে অধিক পরিমাণ বালি উত্তোলিত হওয়ায় ভূকম্পন প্রবণ এলাকা জরিপে বগুড়া এখন উপরের দিকে উঠে এসেছে। মাটির তলদেশে কতটা ফাঁকা বা ভ্যাকুয়ামের সৃষ্টি হয়েছে তা পরীক্ষা করা হয়নি। খালি চোখে দেখা যায় বগুড়ার পূর্ব ও পশ্চিমাংশের অনেক এলাকা সমতল থেকে কিছুটা দেবে গিয়েছে। বগুড়ার চেলাপাড়া সাবগ্রাম গাবতলী কাহালু এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অনেক স্থানে বালি উত্তোলিত হচ্ছে। ট্রাকে করে বালি চলে যাচ্ছে বালি মহালে। কোন এলাকার বালি কে তুলবে এমন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বালি উত্তোলনকারীদের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলে। মাঝে মধ্যেই বিরোধের জের ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। নদীর তীরের বালি উত্তোলন শেষ হয়ে গেলে নৌকা করে ভেতরে গিয়ে ড্রাম সেটিং পদ্ধতিতে শ্যালো ইঞ্জিন বসানো হয়। তারপর ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপ ড্রিলিং করে নদীর গভীরে যতটা পারা যায় প্রবেশ করিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগে টেনে আনা হয় বালি। উত্তোলিত বালি নৌকায় পারাপার করে পরে বালি মহালে নেয়া হয়। কখনও নদীর ভেতরে পাইপ নিয়ে যেতে প্লাস্টিকের পাইপ পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে ভেতরে নেয়া হয়। প্রকৌশলীদের মতো পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণ মানুষেরাই করে। মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি অবগত। মাঝে মধ্যে প্রশাসন অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীসহ ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি জব্দ করে। বগুড়া অঞ্চলের কয়েক ব্যক্তি বললেন, বালি উত্তোলনকারীরা এতটাই ধুরন্ধর যে এক সেট জব্দ হলে আরেক সেট কাজ শুরু করে দেয়। বালি উত্তোলনের ফলে ভূস্তরে কাঠামোর কতটা পরিবর্তন হচ্ছে এই প্রশ্নে পরিবেশবিদ আবু হায়দার বলেন, ভূগর্ভের সাজানো স্তর এখন আর নেই। ভেঙ্গে তছনছ। এতটাই এলোমেলো হয়েছে যে রিখটর স্কেলের মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনে দেবে যাবে বহু এলাকা। নেমে আসবে মহাবিপর্যয়।
×