ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাট্যতীর্থের ‘দ্বীপ’ নাটকের দুই মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

 নাট্যতীর্থের ‘দ্বীপ’ নাটকের  দুই মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে শুক্রবার নাট্যতীর্থের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘দ্বীপ’ নাটকের দুইটি মঞ্চায়ন হয়। সন্ধ্যা ৫-৩০ মিনিটে একটি এবং ৭টায় একটিসহ নাটকের দুইটি প্রদর্শনী হয়। এদিন ‘দ্বীপ’ নাটকের ১০৪ ও ১০৫তম প্রদর্শনী হয় বলে জানা গেছে। ‘দ্বীপ’ নাটকটি রচনা করেছেন উপমহাদেশের বরেণ্য নাট্যকার ও অভিনেতা উৎপল দত্ত। আর নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যতীর্থের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক তপন হাফিজ। ‘দ্বীপ’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তপন হাফিজ, সাদিয়া ইনলাম শান্তা, শামসুর রহমান পেরু, মাহমুদুর রহমান, শুভ প্রমুখ। ‘দ্বীপ’ নাটকের আলোক পরিকল্পনায় ঠা-ু রায়হান, মঞ্চ পরিকল্পনায় ফয়েজ জহির, আবহ সঙ্গীতে একে আজাদ ও পোশাক পরিকল্পনায় কাজী শিলা। মানুষ আদর্শচ্যুত হয়ে মানুষই মানুষের কিভাবে ক্ষতি করে তারই কথা নাটকের পরতে পরতে উঠে এসেছে। বিশেষত আমরা যে শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলি, বিপ্লবের কথা বলি অথবা একটি শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন আঁকি। তা এক সময় ব্যক্তির সুখ-দুঃখ ছাড়িয়ে সর্ব মানবের সুখ-দুঃখের মহাকাব্য হয়। সেখানেই ধরা দেয় সব মানুষের মঙ্গল। এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখে না কে! কিন্তু যখনই ব্যক্তি মানুষটি তার সুখ-বৈভব নিয়ে আবির্ভূত হয় তখনই তার আদর্শচ্যুতি ঘটে। এই আদর্শচ্যুতি শুধু ব্যক্তি মানুষকে নয়, সমগ্র সমাজের ক্ষতি করে। একজন মানুষ পৃথিবীর তাবত কিছুকে ফাঁকি দিতে পারে কিন্তু নিজেকে ফাঁকি দিতে পারে না। নিজেকে ফাঁকি দিলেও একদিন তাকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হয়। এমনই এক বিপ্লবী ও নিজ আদর্শে অনড় চরিত্র মিলন সরকার। যে সবাইকে নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখায়। সেই নতুন সমাজের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিপ্লবীদের দলে ভেড়ে জনার্দন মল্লিক, কপিল নাথ ও ইউনুছ মোহাম্মদ। কিন্তু মিলন সরকার তার আদর্শের জায়গা থেকে সরে এসে ব্যক্তি সুখ নিয়ে ইয়েলো সাংবাদিকতা শুরু করে। সুপ্রিয়াকে নিয়ে পড়ে থাকে আমোদে-প্রমোদে। অন্যদিকে মিলন সরকারের আদর্শে অনুপ্রণিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে জনার্দন, কপিল, ইউনুছ প্রাণ হারায়। কিন্তু মিলন সরকারের নতুন সমাজ গড়ার যে প্রত্যয় তা লোভ নামক ইন্দ্রীয়ের যাঁতাকলে পড়ে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে চালায়। সুপ্রিয়াকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে চলতে থাকে তার কাজ। কিন্তু মিলন সরকারকে নিজের কাঠগড়াতে দাঁড়াতেই হয়। তার স্বপ্নদৃশ্যের মধ্য দিয়ে বিবেক নামক সত্তাটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ‘দ্বীপ’ নাটকটি এই যে ক্রান্তিকাল, এই যে অস্থিরতা, এই যে অরাজকতা, এই যে অসাধুতা তারই উত্তর খুঁজতে বেরিয়ে আসে। মানুষ দ্বীপ নয়, নয় কোন বস্ত। তাই তো এ নাট্যের শরীরজুড়ে মানবিকতার এবং মানবপ্রেমের জয়গানই শোনা গেল। মানুষ পালাবে কিন্তু মানুষ নিজের কাছ থেকে পালিয়ে কোথায় যাবে? এক সময় মিলন সরকারের মতো আমাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন হয় তো মৃত্যু নামক চির চেনা, চির জানা কিন্তু অনিবার্য মৃত্যু আমাদের নিয়ে যাবে এক গহীন নিকষ কালো অন্ধকারে। সেখান থেকে ফেরার কোন পথ থাকবে না। দর্শকের উপস্থিতি কম অথবা অভিনয়ে একটু ঘাটতি থাকলেও নিরাভরণ সেট আর আলোর চলনে, আবহ সঙ্গীতের উতলা হাওয়ায় নাট্য কাহিনী এগিয়েছে সমকালীন বাস্তবতায়।
×