ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লক্ষ্নৌসহ ২১ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ দিল্লীতে কার্ফু এনআরসি, সিএএ ও এনপিআর গরিবদের কাছে ট্যাক্সের বোঝার মতো মনে হচ্ছে ॥ রাহুল

ভারতে বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

ভারতে বিক্ষোভ অব্যাহত

ভারতের মোদি সরকারের সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে শুক্রবারও দিল্লী, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। নয়াদিল্লীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালিয়েও বিক্ষোভ থামাতে পারেনি পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় দিল্লীতে ১৫ কোম্পানি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দিল্লীর জামে মসজিদের সামনে শত শত লোক বিক্ষোভে অংশ নেয়। এখানে ভিম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকেও দেখা যায়। এছাড়া কংগ্রেস নেতা অলকা লাম্বা ও সাবেক এমএলএ শোয়েব ইকবালও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। উত্তর প্রদেশের মোট ৭৫ জেলার মধ্যে ২১টিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। এনআরসি, সিএএ এনপিআর ভারতের গরিব মানুষদের কাছে ট্যাক্সের বোঝার মতো মনে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। শুক্রবার ছত্তিশগড়ে এক অনুষ্ঠানে রাহুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সমাজের সকল মানুষকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সব মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে দাবি করেন রাহুল। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি ও পিটিআই অনলাইনের। শুক্রবার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষেèৗসহ ২১ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রাজ্য পুলিশ প্রধান ওপি সিং বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে লক্ষেèৗতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলেও সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। রাজধানী দিল্লীসহ বিভিন্ন স্থানে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সমাবেশ-জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। উত্তর প্রদেশে এই নিষেধাজ্ঞা এক সপ্তাহ ধরে জারি রয়েছে। এসস উপেক্ষা করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর দিল্লী, মুম্বাই, কলকাতা, আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল। শুক্রবারের জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের আশঙ্কায় সকাল থেকেই উত্তর প্রদেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় রাজ্যে ক্ষমতাসীন যোগি আদিত্যনাথের সরকার। নজরদারির আওতায় আনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যে কোন ধরনের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ক্যাব ও এনআরসি বিরোধী সমাবেশ করেছে দেশটির বামদল কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া বা সিপিআই। দলটির তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমার পাঞ্জাবে এক বিশাল সমাবেশে বলেন, ব্রিটিশরা ভারতে বিভাজনের রাজনীতি করেছে। আর মোদি সরকার মানুষের মনোযোগ অন্যত্র সরাচ্ছে আর রাজনীতি করছে। ব্রিটিশ আর মোদি সরকারের মধ্যে কোন তফাত নেই বলে তিনি মনে করেন। ক্যাবের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির জনগণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বিক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আপাতত কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিলটিকে মুসলিম বিরোধী ও ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি বিরুদ্ধে আখ্যা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর মধ্য রাতে বিলটিতে স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বিলেত বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতের তিন নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। ভারতের একাধিক বিরোধী দল ক্যাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ওআইসি জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র এই বিলকে পক্ষপাতমূলক আখ্যা দিয়েছে। বিরোধীদলগুলোর দাবি, ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মুসলিমকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে মোদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভারতের নানা শহরে ছড়িয়ে পড়া ক্যাববিরোধী বিক্ষোভের পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। ভারতের উত্তর-পূবাঞ্চলীয় রাজ্য অসমের মানুষের রাস্তায় নামার কারণ-রাজ্যটির সঙ্গে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সীমান্ত রয়েছে। অসমের মানুষ মনে করছে, ক্যাবের ফলে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ হিন্দু বাঙালী অসমে প্রবেশে উৎসাহ পাবে। ফলে রাজ্যটিতে বাংলাভাষী আরও বাড়বে। এতে অসমের ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ঝুঁকিতে পড়বে। অসমের বিক্ষোভে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। অসমের মুসলিমরাও আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা মনে করছে, এনআরসির মাধ্যমে মুসলিমদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করে পাশের দেশ থেকে হিন্দুদের এনে ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে মোদি সরকার। অসমের বিক্ষোভ রুখতে রাজ্যের কয়েক জেলায় এখনও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে ইতোমধ্যে ২০ লাখ লোক বাদ পড়েছে। এদের বেশিরভাগই মুসলিম। অসমের পর ত্রিপুরাতে একই কারণে বিক্ষোভ হচ্ছে। চলমান বিক্ষোভে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কারণও আলাদা। তারা মনে করছে, ক্যাব আইন প্রধানমন্ত্রী মোদির মুসলিমবিরোধী মনোভাব বাস্তবায়নের একটি নীলনক্সা। কারণ মোদি দীর্ঘদিন থেকেই ভারত থেকে মুসলিমদের অবাঞ্চিত ঘোষণার স্বপ্ন দেখেন। তাই বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ক্যাব বিল সংসদে পাশের পর থেকেই মুসলমানদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করছে, এই বিলের ফলে উগ্রহিন্দু জাতীয়বাদীরা তাদের টার্গেট করতে পারে। ১২ ডিসেম্বর ক্যাব পাসের পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা রাস্তায় নেমেছেন। রাজধানী নয়াদিল্লীর প্রখ্যাত জমিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্বের প্রথম সারির নানা গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী হামলার খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে।
×