ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের সেরা আবিষ্কার

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বছরের সেরা আবিষ্কার

প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে মানবসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে, সহজ হচ্ছে দৈনন্দিন জীবন। দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। চলুন জেনে নেয়া যাক এ বছরের এমন কিছু আবিষ্কারের কথা। লিখেছেনÑ সাজিদ আল ইসলাম বায়োপ্লাস্টিক পৃথিবীতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মাঝে ১৫%-এরও কম পরিমাণ প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৮৫% ভূমি কিংবা নদীনালা সাগরে অবস্থান করে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক হতে পারে এই সমস্যার সমাধান। উদ্ভিদের যেটুকু অংশ খাওয়ার উপযোগী না তাই ফেলে দিই, সে অংশের সেলুলোজ বা লিগনিন নামের শর্করা ব্যবহার করে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির একটি যুগান্তকারী উপায় বের করা হয়েছে। যা আমাদের পরিবেশ এবং অর্থনীতি দুটোকে মজবুত এবং টেকসই করবে। এই প্লাস্টিক খুব সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে মহাসাগর বা মাটি কোনটাই দূষিত হবে না। বিশৃঙ্খল প্রোটিনগুলোকে শৃঙ্খলিত করা ‘ইন্ট্রিন্সিক্যালি ডিজঅর্ডারড প্রোটিন’ বলা এমন সব প্রোটিনকে যেগুলো আমাদের দেহে ক্যান্সার কিংবা অন্যান্য রোগ তৈরির জন্য দায়ী। এই প্রোটিনগুলোর অন্যান্য প্রোটিনের মতো কোন স্থায়ী আকার নেই। যার কারণে এরা খুব সহজেই আকার পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এদেরকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন বিজ্ঞানীরা একটি পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন যার মাধ্যমে বারবার আকার আকৃতি পরিবর্তন করা প্রোটিনগুলোকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। ফলে ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগগুলোর হদিস পেতে বেগ পেতে হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে তার নির্মূলও খুব সহজ হবে। ২১ শতকের অন্যতম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগান্তকারী কিছু হতে যাচ্ছে এই আবিষ্কারটি। কোলাবোরেটিভ টেলিপ্রেজেন্স এমন একটি অবস্থার কথা কল্পনা করুন যেখানে আপনার সঙ্গী আপনার সামনে নেই কিন্তু আপনি তার স্পর্শ অনুভব করতে পারছেন। অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ৫জি নেটওয়ার্ক এবং এডভান্সড সেন্সরের মাধ্যমে এটা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে বিজনেসম্যাগনেটরা ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেও হ্যান্ডশেক করতে পারবেন। কিংবা যেসব রোগীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে থাকেন ডাক্তাররা খুব সহজেই তাদের স্বাস্থ্যসেবা বা জটিল অপারেশনের দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন। আপনার প্রিয় সঙ্গী হাজার মাইল দূরে থাকলেও তার স্পর্শ অনুভব করা যাবে। যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এই আবিষ্কার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। খাবার ট্র্যাকিংয়ে উন্নত প্রযুক্তি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষ প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খেয়ে থাকেন। বর্তমান প্রক্রিয়াজাত খাবারের উৎস খুঁজে বের করতে কখনও কখনও কয়েকদিন লেগে যায়। এই সমস্যা নিরসনে এসেছে ‘ব্লকচেইন টেকনোলজি।’ যেটা খাবারের প্রক্রিয়াজাতের প্রতিটি ধাপই মনিটরিং করতে পারে। এটা খাবারের মেয়াদ উত্তীর্ণ নিয়েও ধারণা দিতে পারে যার ফলে খুব সহজেই খাবার নষ্ট হবার হার কমানো যাবে। খাবার উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার মধ্যে সম্পর্ক আরও স্বচ্ছ হবে। ভোক্তা তার গ্রহণ করা খাবারের খুঁটিনাটি আরও ভালভাবে জানতে পারবেন। কোন রোগী গ্লুটন মুক্ত খাবার চাইলে তিনি নিমেষেই পুরো প্রক্রিয়া থেকে জেনে নিতে পারবেন তার খাবার গ্লুটন মুক্ত কিনা। প্রিম্যাচিউর বেবি শনাক্তকরণ বছরে ১৫ মিলিয়ন শিশু প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, যা ৫ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ। গর্ভবতী নারীর একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই, তিনি প্রিম্যাচিউর বেবি জন্মদানের ঝুঁকিতে আছেন কিনা জানা যাবে। বর্তমানে এই পরীক্ষাটি মলিকুলার লেভেলে গিয়ে করা হয়। অন্ত্রের চিকিৎসায় পিল আকারের ডিভাইস এই ডিভাইসটি অন্ত্রের রোগ শনাক্তকরণে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আগে পূর্ণবয়স্কদের মাঝে এটা প্রয়োগ করা হলেও, ২০১৯ থেকে বাচ্চাদের উপরও প্রয়োগ করে অন্ত্রের রোগ শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। কাস্টম ক্যান্সার ভ্যাকসিন প্রথাগত কেমোথেরাপি সব টিউমারের বিরুদ্ধে সমান কাজ করতে পারে না। তার ওপর কেমোথেরাপি ব্যবহারের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। কাস্টম ক্যান্সার ভ্যাকসিন এমন এক ধরনের ভ্যাকসিন যারা প্রতিটি নির্দিষ্ট টিউমারের ওপর কাজ করবে এবং ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে দেবে। কেমোথেরাপির সফলতার হারকে ১০০ ভাগে নিয়ে আসবে এই প্রযুক্তি। এছাড়াও কেমোথেরাপির যন্ত্রণা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাবে এটি। স্মার্ট ইসিজি এটা সাধারণ কোন ফিটনেস ট্র্যাকার মেডিক্যাল ডিভাইস না। এই স্মার্ট ওয়াচটি ইসিজি সংযুক্ত। যেটা প্রতিনিয়ত আপনার স্ট্রোক বা হার্ট এ্যাটাকের ব্যাপারে খেয়াল রাখবে। সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক স্টার্টআপ এ্যালাইভককোর-এর বানানো এই স্মার্ট ওয়াচটি সম্প্রতি এফডিএ এপ্রুভাল পেয়েছে। খুব দ্রুতই তারা এটাকে বাজারজাত করবে। তৎক্ষণাৎ হার্ট এ্যাটাক সম্পর্কে জানার ফলে অনেক রোগীরই উপকার হবে।
×