ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের

হাসানের খোঁজ পেলেই তোবারক হত্যার রহস্য জানা যেতে পারে

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

হাসানের খোঁজ পেলেই তোবারক হত্যার রহস্য জানা যেতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পলাতক হাসানের সন্ধান পেলেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন আবাসিক ভবনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন হত্যাকা-ের রহস্য জানা যেতে পারে বলে ধারণা তদন্তকারীদের । মতাদর্শ, অর্থ ও মামলা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আট জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। যদিও তাদের কাউকেই আটক বা গ্রেফতার দেখানো হয়নি। হত্যার সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের কোন সংশ্লিষ্ট আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। গত বুধবার দুপুর একটার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে নিপ্পন গলি সংলগ্ন শান্তিনিকেতন আবাসিক এলাকার ১৭৮ নম্বর ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলায় নিজ ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তোবারক হোসেনের (৭০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রামের শফি মাইজভা-ারীর অনুসারী ছিলেন। এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের মামলার বাদী নিহত তোবারকের ছোট ভাই মোবারক হোসেন জানান, আমার ধারণা বুধবার ভোরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতে পারে। তিনি বাসায় একাই থাকতেন। তার কিছু অনুসারী সব সময়ই তার সঙ্গে থাকতেন। তিনি ছিলেন শফি মাইজভা-ারীর অনুসারী। হত্যাকা-ের সঙ্গে তার অনুসারীরা জড়িত থাকতে পারে। আমার ভাইয়ের অনুসারীরা তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকতেন। এর মধ্যেই সাইফুল নামে একজন যাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে, তিনি আমার ভাইয়ের খুবই আস্থাভাজন। আমি সাইফুলকে প্রায় দশ বছর ধরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে থাকছে বলে জানি। যদিও সাইফুল ২২ বছর ধরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। তবে এর সত্যতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। মতাদর্শগত কারণে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে কি না তা আমার ধারণার বাইরে। পারিবারিক বিরোধের সঙ্গে হত্যাকা-ের কোন যোগসূত্র থাকতে পারে বলে আমার জানা নেই। তবে ভাইয়ের সঙ্গে কনফিগার নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব চলছিল। এ সংক্রান্ত একটি মামলাও চলছে। মহাখালীতে মামা প্লাজা নামে পাঁচতলা মার্কেটটি তৈরির জন্য আমার ভাই ওই ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক না হওয়ায় কোম্পানির সঙ্গে ভাইয়ের বিরোধ চলছিল। এ সংক্রান্ত একটি মামলাও চলছে। তবে হত্যাকা-ের সঙ্গে ওই বিরোধের কোন যোগসূত্র আছে কিনা আমার জানা নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ইফতেখার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে নিহত তোবারক হোসেনের দ্বন্দ্ব চলছিল। তার বড় মেয়ে বিবাহিতা। পরের ছেলে আমেরিকাপ্রবাসী। এক মেয়ে ব্যারিস্টারি পড়ছেন। আরেক মেয়ে এ লেভেলে পড়েন। পারিবারিক কলহের কারণে নিহত তোবারক স্ত্রী মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় থাকেন। তার সঙ্গে তার দুই মেয়ে। মতাদর্শ, পারিবারিক বিরোধ ও অর্থ সংক্রান্ত বিষয়াদির যোগসূত্র আছে কিনা মামলাটির তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন হাসানকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ তাকে খুঁজছে। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, হত্যার মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা কাউকেই আটক বা গ্রেফতার দেখানো হয়নি। হাসানের সন্ধান পেলে হত্যাকা-ের রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে জানান, মতাদর্শ অর্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি, মামলা ও পারিবারিক বিরোধসহ সব বিষয় মাথায় রেখেই হত্যাকা-ের তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যেই হত্যার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। র‌্যাবও হত্যাকা-ের ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ও র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম। নিহত তোবারক হোসেনের লাশ উদ্ধারকারী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার জানান, ফ্ল্যাটের চতুর্থ তলার পুরোটাজুড়ে থাকতেন তোবারক হোসেন। নিজ ফ্ল্যাটের ফ্লোরে তোবারক হোসেনের লাশটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। মেঝেসহ কাপড় চোপড় রক্তে ভেজা ছিল। তার মাথায় বড় বড় দুটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। আঘাতের চিহ্নগুলো ধারাল ছুরির। এখানে ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে। তোবারক হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার চরপাড়া গ্রামে।
×