ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অনেক গুণ। তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকে তারা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছে না। আবার শীত নিবারণে তাদের পর্যাপ্ত গরম কাপড়ও নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেটুকু কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা সবার কপালে জুটছে না। আবার শীতের তীব্রতা এত বেড়েছে যে সাধারণ কম্বলে শীত নিবারণও কষ্টসাধ্য এখন। দিনের বেলায় সূর্যের আলো নেই। এ অবস্থায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টাই তাদের একমাত্র ব্যবস্থা। এদিকে আগুন পোহাতে গিয়ে ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার খুলনা বরিশাল চট্টগ্রাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে শীতের মাত্রা বেড়েছে। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জায়গায় তীব্র শৈতপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা আরও কমে বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন দাঁড়িয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৫.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অন্য এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টিতে তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সূর্যের দেখা মিললেও তা প্রায় সময় মেঘে ঢাকা ছিল। রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। এর ওপর সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয় বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। এ কারণে চাদনের ছায়ায় সূর্য অনেকক্ষণ ঢেকে ছিল। সব মিলিয়ে সূর্যের যে তাপ তা ছিল না বললেই চলে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর, যশোর খুলনা, সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোরে সবচেয়ে বেশি ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, রংপুর বিভাগে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। অন্যান্য এলাকায় যদিও শৈত্যপ্রবাহ নেই। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন স্থানে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে দুদিন তাপমাত্রা কম, আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। শীতের তীব্রতা আর বাড়বে। এই সময়ের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ আরও অধিক এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। তিনি জানান এই সময়ে শৈত্যপ্রবাহ মাঝারি রূপ নিতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজও খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি/গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং অন্যত্র তা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রীতে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা যে পর্যায়ে নেমেছে, তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়। শীতের মধ্যে ঘন কুয়াশায় ফেরি পারাপারে সমস্যা দেখা বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত। শীতজনিত রোগ নিয়ে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ চলছে এক সপ্তাহ ধরেই। রংপুর ॥ কনকনে শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত দেড়টার দিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকার বাবর আলীর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে সাবিহা এবং ভোরে একই জেলার সাদুল্লাপুর থানাধীন ইদিলপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে আলম মিয়া (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রমেক হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডাঃ এম এ হামিদ জানান, নিহত সাবিহা গত ১৮ ডিসেম্বর এবং আলম মিয়া ২০ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, গত ১১ দিনে রমেক হাসপাতালে ২৬ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ॥ প্রচ- শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে বুধবার রাতে পৃথক পৃথক ভাবে পীরগঞ্জ উপজেলায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২ মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে ভোমরাদহ ইউনিয়নের সেনুয়া গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী অমিজা বেওয়া (৬০) ও পৌরসভার মিত্রবাটি মহল্লার মোঃ ইব্রাহিমের স্ত্রী আলিমা আকতার (৬২) প্রচ- শীতে আগুন পোহানোর সময় মনের অজান্তে কাপড়ে আগুন ধরে যায়। ফলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অমিজা বেওয়া ঘটনা স্থলে মারা যায় এবং আলিমা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পঞ্চগড় ॥ ব্যারোমিটারের পারদ যেন থামানোই যাচ্ছে না। সমান তালে কমছেই তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সকালে দুঘণ্টার ব্যবধানে ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও তা সকাল ৯টায় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। এভাবেই প্রতিদিন ব্যারোমিটারের পারদ ওঠানামা করছে। অথচ বুধবার ছিল ৬ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়ায়। কয়েকদিন ধরেই দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, তাপমাত্রা যত নিচে নামছে ততই বাড়ছে শীতের প্রকোপ। বাড়ছে রোগব্যাধী। উত্তরে হিমেল বাতাসে শরীর হিম হয়ে আসছে। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। খুলনা ॥ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। দুপুর ১২টার পর থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বিকেলে বৃষ্টি থেমে গেলেও মেঘলা আকাশ ও বাতাসে শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়। এদিকে কুয়াশা ও শীত এভাবে চলতে থাকলে বোরো ও সবজি চাষ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহজুড়ে খুলনায় শীতের প্রকোপ চলছে। কুয়াশার চাদরেও ঢাকা পড়ে যায় শহর, গ্রাম বন্দর। ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় চলতি বোরো মৌসুমে বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে চলতি বোরো মৌসুমে তৈরি বীজতলার চারা হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। শীত অব্যাহত থাকলে বোরো ধানের আবাদ হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছে কৃষি অধিদফতর। নীলফামারী ॥ খড়কুটো-কাঠের গুঁড়ায় আগুনের কু-লী শীত নিবারণে উষ্ণতার জন্য ডিমলা উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। উত্তুরী হিমবাতাসে কাবু উপজেলার তিস্তা নদীর চরবাসী। বৃহস্পতিবার উপজেলার আবহাওয়া অফিস জানায় তিস্তা নদী বিধৌত ডিমলা উপজেলায় সর্বনিম্ন ৭.৮ ডিগ্রী সে. ছিল। অপরদিকে সৈয়দপুর উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রী সে. রেকর্ড করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে রোদ্র উঠলেও ছিল না তাপ। রোদ্রের মধ্যেও কুয়াশা ঝরছে। সেই সঙ্গে বয়ে যায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীতের তীব্রতা এত বেশি থাকে যে ছোটমটো গরম কাপড় একটি কম্বল বা চাদর কাজে আসে না। হাত পা সিক লেগে যায়। ফলে আগুন পোহানো ছাড়া যেন অনেক মানুষের উপায় থাকে না। শীতের আগুন পোহানোর প্রবণতা নীলফামারীসহ উত্তরের জেলাগুলোতে সব থেকে বেশি। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ পর্যন্ত আগুন পোহাতে গিয়ে এ জেলায় ১১ জন সামান্য দগ্ধ হয়েছে। অবশ্য গত বছর দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় ৩ জন ও আহত হয়েছিল ২১ জন। এ ছাড়া বেশ কিছু বসতঘরও পুড়ে ছাই হয়। এরপরও এ অঞ্চলে আগুন পোহানো বন্ধ হয়নি। এদিকে ভারত সীমান্ত ঘেরা নীলফামারীতে গরিব ও দুস্থ মানুষেরা শীতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শীতে গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই গ্রামের মানুষ প্রতি রাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে।
×