ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে আর্থিক খাত ও সততা

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে আর্থিক খাত ও সততা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফোর্বসের তালিকায় এক শ’ নারীর মধ্যে ঊনত্রিশতম স্থান জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন। এর কৃতিত্ব তার বিজ্ঞজনচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনতে বলেছেন। বছর শেষ হয়ে আসছে। আর মাত্র ক’দিন বাকি। অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ভাল থাকলেও আর্থিক খাতে শঙ্খলা আনয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রয়োজন ছিল তা কিন্তু চলতি বছরে দেখাতে পারেনি। আসলে অনেক বেশি সংখ্যক বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকায় ক্রাউডিং ইফেক্ট (ঈৎড়ফিরহম ঊভভবপঃ) যে এখনও হয়নি তা সত্যি বিস্ময়কর। বাজার অর্থনীতিতে যারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে, তাদেরই কেবল দেশে স্বীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কথা। তার পরও সরকার জনকল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখে ফারমার্স ব্যাংককে কেবল উদ্ধার করেনি, বরং পদ্মা ব্যাংক নামে চালানোর চেষ্টা করেছে। এই জনকল্যাণের কারণে গ্যারান্টি দেয়া ব্যাংকসমূহ এক ধরনের তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। আসলে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্যাংকের দুর্বলতা যদি ধরা পড়ে- ক্যামেলস রেটিং ভাল না থাকে এবং ব্যাংকের আর্লি ওয়ার্নিং সিগনেন্স বিবেচনা করে মার্জার এবং একুইজেশন প্রক্রিয়া চালু করাই যথাযথ। একই পরিবারের মালিকানায় নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংকের স্বত্ব থাকায় তা দেশের সার্বিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে সহায়ক হচ্ছে কিনাÑ এ ব্যাপারটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন ভাল বলতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডেপুটি গবর্নর পদে একজন বাণিজ্যিক ব্যাংকারের বার বার গত কয়েক বছর ধরে প্রয়োজন অনুভব করা গেলেও, এখন পর্যন্ত সেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ কোন প্র্যাকটিশনারকে ডেপুটি গবর্নর হিসেবে পদায়ন করা হয়নি। আসলে আর্থিক খাত বিশেষত ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে অসম্ভব নয়। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ যে সমস্ত দুর্নীতি-অনিয়ম করে থাকে, তাতে রাঘববোয়ালরা পার পেয়ে যানÑ শুধু চুনোপুঁটিরা ধরা পড়েন। বিড়ালের মতো দুধ খেয়ে সর মুছে আবার অন্যত্র ভাল থাকেন। এটি আবহমানকাল থেকে বিভিন্ন দেশে হয়েছে। ক্ষমতাতন্ত্রের কাছাকাছি থাকতে থাকতে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেÑ কিন্তু তারা দুর্দিনের সাথী হয় না, বরং সুদিনের বন্ধু হয়। যারা দুর্দিনের সাথী হয়, তাদের মধ্যে ত্যাগ-তিতিক্ষা-কুলুষ মুক্তির উপায় জানার প্রায়োজন হয়। আর সুখের পায়রা কেবল মিষ্টি মধুর স্বাদ নেয়ার আশায় থাকেন। যদি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি না হতো তবে দেশের মোট দেশজ সম্পদ বৃদ্ধির হার দু’অঙ্কে পৌঁছাত। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হতো। রফতানি পণ্য বহুধাবিভক্তকরণের জন্য ব্যাংকিং সেক্টর নতুন নতুন ব্যক্তিবর্গকে ঋণ দিত। আর রাকাব ছাড়া সকল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হওয়ায় মাছের বাজারের মতো স্বল্পসংখ্যক শিল্পপতি-উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে টানাটানি করে। এর ফলে ব্যাংকাররা যেমন ঋণ প্রদান করে উচ্চমূল্যে, তেমন ঋণ আদায় কিন্তু করতে পারে না। ভুলে যায় বেসিক রুল ‘ডু নট পুট অল বাস্কেট ইন দ্য সেম বাস্কেট।’ আসলে মূল সূত্রগুলো একের পর এক ব্যাংকিং সেক্টর সার্বিকভাবে লঙ্ঘন করেছে বিধায় আজ একবিংশ শতকের দ্বিতীয় যুগে এসে এক অস্থির এবং চঞ্চলমতি পরিবেশে অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকে বেতন কাঠামো সমন্বয়ের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। যারা ব্যাংকিং কাঠামোয় অভ্যন্তরীণ স্টেকহোল্ডার হিসেবে কাজ করেও দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, যারা পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন উর্ধতনদের খুশি রাখতে শশব্যস্ত ছিলেন তাদের ঘাড়ে কিছুটা হলেও দায় পড়বেই। যে সমস্ত ব্যাংকে লোকসান হবে সে সমস্ত ব্যাংকে যাতে বোনাস না দেয়া হয় সেটি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। কেননা, যারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেরা বাঁচতে চান তাদের জন্য করুণা হয়। আর বোনাসের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর কোন প্রতিষ্ঠানে হয় ক্ষতি, নয়ত ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের মধ্যে নানা রকমের ঘাপলা করে যে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুনাফা দেখায়, তখন মনে হয় দেশে সৎ নিরীক্ষকের বড় অভাব রয়েছে। পুঁজির ধর্ম হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কেন্দ্রে পাচার হবে। সে জন্য ব্যাংকিং খাতকে সম্প্রসারিতভাবে নৈতিকতার চর্চা করা দরকার। যদি একজন ব্যাংকার পাঁচটি ‘সি’-এর ওপর গুরুত্ব দেন, তবেই কেবল তার পক্ষে ঋণ পরিশোধের অর্ধেকটুকু ঋণ বিতরণের পূর্বে সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকাররা হয় অলস হয়ে গেছেন, নচেৎ একগাদা প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্টেটমেন্ট করতে করতে আর সার্কুলারসমূহ নিয়মিতভাবে পাঠ ও তার প্রায়োগিক কৌশল জানা থাকে না। ফলে এক ধরনের ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে উজ্জ্বল ব্যাংকিং সেক্টরে যাওয়ার জন্য যে ধরনের আলোকিত ব্যক্তিত্বের আজ ব্যাকিং সেক্টরে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দরকার, তার একান্ত অভাব রয়েছে। যারা পরিচালনা পর্ষদে নিযুক্ত হচ্ছেন তাদের সক্ষমতা না থাকায় যথাযথ নিয়ম মেনে সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রতিহত করার শক্তিও ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ব্যাংকাররা তাদের নৈতিকভাবে দুর্বলতা ঢাকার প্রয়াস না নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের বেড়াজালে পড়ে যায়। কিছু কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে, শাখার অভ্যন্তরেই গ-গোল তালগোল পাকিয়ে একসার হয়ে গেছে। ঋণখেলাপীরাও সুযোগ বুঝে ঋণের টাকা পরিশোধে মোটেও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে কর্মকা- পরিচালনা করছে না। এদের ব্যাপারে কেন কঠোর অবস্থানে অর্থ মন্ত্রণালয় যেতে পারছে না তা বোধগম্য নয়। মাঝে শুনেছিলাম ব্যাংকিং সেক্টরে অমবুডসম্যান নিয়োগ করা হবে। আজ ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের মতো একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বের দরকার। নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী হয়, তবে তা রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যত দ্রুত কিছু সংখ্যক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হবে, তত দেশের জন্য মঙ্গল হবে। কেননা, ঢাকাকেন্দ্রিক প্রধান কার্যালয়সমূহ এক ধরনের অনৈতিক ব্যবসার সূচনা করেছে, যাকে বলা যায় ‘রেড ওশান’ (জবফ ঙপবধহ)। অথচ যদি কিছু ব্যাংকের শাখা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেটসহ নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া যায় তবে তা আখেরে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এদিকে বীমা ব্যবস্থাপনার মানও উন্নত করা দরকার। বীমা ব্যবস্থাপনার প্রতি গ্রাহকদের অনীহা বিভিন্ন কারণে বিদ্যমান রয়েছে। এই অনীহাকে দূর করার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোরও কিন্তু সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা দরকার ছিল। আসলে দেশের জনগণের কল্যাণের তরে বীমা কোম্পানিগুলো যাতে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে এবং জনগণও যাতে আস্থা নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকা-ে সন্তুষ্ট চিত্তে বীমা গ্রহণ করে, সে জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। পরীক্ষামূলকভাবে এবার শস্য বীমা চালুর প্রয়াস একটি জেলায় চালুর কথা জাতীয় বাজেটে বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা দরকার। এদিকে প্রবাস থেকে যারা অর্থ প্রেরণ করে, তাদের ক্ষেত্রে বীমা ব্যবস্থার সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও, তা এখনও ব্যাংক-বীমার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা যায়নি। এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় গবাদিপশুর ওপর বীমা ব্যবস্থাপনা চালু করা দরকার। অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কোন কোন এনজিও বিভিন্ন নামে গবাদিপশুর ওপর বীমা চালু করলেও তা আসলে কতটুকু বাস্তবসম্মত, সেটি পরীক্ষা করে দেখা দরকার। অন্যদিকে প্রবীণ ও বয়স্কদের জন্য বীমা পদ্ধতি চালু করা উচিত। স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে বীমাসমূহ আছে, তা কিন্তু এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। বেসরকারী কোম্পানিসমূহের গ্রুপ বীমা পদ্ধতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা দরকার। আমানতকারীদের আমানতের ওপর যে বীমা বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে, তা আসলে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা দরকার। দেশে যে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসমূহ লোকসানে আছে, তাদের বন্ধ করে দিয়ে অন্য শাখায় ঋণ আদায়ের জন্য স্থানান্তর করা দরকার। বীমা ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের আমানতকারীদের নিরাপদ আমানতের জন্য বীমা গ্রহণের ব্যবস্থা করা উচত। কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখাপেক্ষী থাকা উচিত নয়। এদিকে রফতানিকারকদের জন্য কেবল ইনসেনটিভ দিলেই হবে না, বরং রফতানিকারকরা যাতে এলসি খোলার বায়িং রেইট অর্থাৎ বিসি রেটে পেমেন্ট পায়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রয়োজন। এটি অতীব দুঃখের যে, রফতানিকারকদের ন্যায্য অর্থ না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই বিনা লাভে পণ্য রফতানি করছে। এমনকি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। রফতানি পণ্য বহুধাবিভক্তিকরণে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন উদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাংককে সার্বিকভাবে সক্ষম ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রকল্প তৈরি করা থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ধাপে কারিগরি ও মনস্তাত্ত্বি¡ক সহায়তা প্রদান করতে হবে। এ জন্য তরুণ-তরুণীদের স্কিল গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষিজ হোক, কৃষিনির্ভর শিল্প হোক, এমনকি ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর যে কোন শিল্প হোক, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ঋণ বিতরণে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি না করতে পারলে ব্যাংকারদের জন্য জবাবদিহির বিধান রাখা উচিত। ক্রিয়েটিভিটি যেমন ব্যাংকিং খাতে দরকার, তেমনি ইনোভেটিভনেস দেখতে হবে। আসলে এদেশে কোন জবাবদিহি ব্যাংকিং খাতে নেই। তাই সাধারণ জনমানুষের অর্থ নিয়ে গুটিকয়েক পরিচালক মালিক হতে চান। আমানতকারীদের স্বার্থ তারা সংরক্ষণ করেন না। আবার ঋণখেলাপীদের একটি বড় অংশ তাদের বন্ধু-বান্ধব ও যোগসাজশে ঘটে। এই পরিচালকদের মধ্যে যারা অন্যায়, দুর্বৃত্তায়ন করছে তাদের কাউকে যদি শাস্তির আওতায় আনা যেত তবে ভাল হতো। একজন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক ও অধ্যাপক সর্বক্ষণিক তার চট্টগ্রামের কর্মস্থলে থেকে ব্যাংকের গাড়ি সর্বক্ষণিক ব্যবহার করলেও দেখার কেউ নেই। এদিকে পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজানো দরকার। গুটিকয়েক শেয়ার দিয়ে পুঁজিবাজার চলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আইপিওতে আসেনি। অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে পুঁজিবাজারে ডেবট মার্কেট এবং ডেরিভেটিভস মার্কেট চালুর কথা থাকলেও এখনও এটি চালুর কোন ব্যবস্থা হয়নি। অর্থমন্ত্রীর এক বছর মেয়াদকাল পূর্ণ হতে চললেও পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রেগুলেটরি বডিসের ফেইলুর হলে সেটি থেকে পরিত্রাণের উপায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হবে। তবে ট্যাক্স-জিডিপি অনুগত বাংলাদেশে অনেক কম। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে যারা ধনবান হচ্ছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে আনা দরকার এবং কর আদায়ের ব্যবস্থা করা উচিত। গত এগারো বছরে নতুন ধনিক শ্রেণী সরকারের বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধক প্রকল্পের কারণে শুরু হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কেননা কর না দেয়াটা দেশের উন্নয়নে ক্ষতিকারক। প্রতিষ্ঠিত ধনবানরা সুযোগ নিয়ে কর দেয় না। আর গ্রামীণ এলাকায় যারা নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করছে তারাও উঠতি ধনিক শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। তারাও কর দিতে চায় না। বস্তুত দেশের অগ্রযাত্রায় শরিক হতে হলে নিয়মিত কর প্রদান করতে হবে। লেখাটি শুরু করেছিলাম মূলত আর্থিক খাতের ওপর লিখব বলে। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাহত চিত্তে একটি সংবাদে আমার দৃষ্টি নিবন্ধিত হলো। বরগুনা সরকারী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাহিরা খানম বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৩ (অ-) পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও প্রাথমিকভাবে তাকে ফেল দেখানো হয়। দুঃখজনক হলো, যখন সংশোধিত রেজাল্ট হলো সে সহ যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তা জানানোর দায়িত্ব অবশ্যই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং চেয়ারম্যানের। পাশাপাশি যখন বরগুনা সরকারী কলেজে মার্কশীট এলো, তখন সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ এবং এ্যাডমিনিসট্রেটিভ কর্মকর্তা শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে অসত্য বলেছেন, একজন শিক্ষক পরিবারের সদস্য এবং নিজে শিক্ষক হিসেবে লজ্জিত হচ্ছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা অবশ্যই শাস্তির আওতায় যাতে আসেন সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। দেশ ও জাতির জন্য সরকারপ্রধান কাজ করে চলেছেন, এখন আমাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। শিক্ষাবিদ হবেন ন্যায় ও সততার প্রতীক- অন্যায় করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ভুল হলে সংশোধন করার মনমানসিকতা অবশ্যই থাকতে হবে। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ও প্রফেসর [email protected]
×