ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে জীবনমান

সৌরবিদ্যুতে আলোকিত যমুনার চরাঞ্চল

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সৌরবিদ্যুতে আলোকিত যমুনার চরাঞ্চল

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ সহিরন বিবির পাটখড়ির বেড়ায় টিনের ছাউনির একটি ঘর। মাঝখানে ফুটখানেক ফাঁকা। পাশেই রয়েছে একই রকমের আরেকটি ঘর। ঘর দু’টির পেছন দিকে অপেক্ষাকৃত একটি মোটা গাছ। সে গাছের ডালে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। সারা দিনে সূর্যের আলো এসে পড়ছে প্যানেলে। তৈরি হচ্ছে বিদ্যুত। সেই বিদ্যুতের আলো রাতের আঁধারকে দূর করে ঝুপড়ি ঘর করেছে আলোকিত। সহিরন বিবির মতো সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় অসংখ্য সোলার প্যানেল। চরাঞ্চলের বসতবাড়ি, হাটবাজার, সরকারী- বেসরকারী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ঘরের চালে সোলার প্যানেল। এমনকি মোবাইল ফোন টাওয়ারও চলছে এই প্যানেলের শক্তিতে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। গ্রাম থেকে এখন হারিকেন বিদায় নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুর্গম চরেও। মান্ধাতা আমলের কেরোসিনের কুপি বাতি আর হারিকেনের পরিবর্তে ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে সৌরবাতি। সোলারের আলোয় আলোকিত হচ্ছে আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত যমুনা চরের মানুষ। দিনের সূর্যের আলো সংগ্রহ করে রাতের অন্ধকার দূর করছেন দুর্গম যমুনা চরের প্রায় ২ লাখ মানুষ। বদলে গেছে চরের মানুষের জীবন যাত্রা। দুর্গম চরাঞ্চল এখন অনেকটা আধুনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয়েছে। সৌরশক্তি বা সোলার বিদ্যুত, কম্পিউটার ইন্টারনেট সার্ভিস, তথ্য সেবা কেন্দ্র, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, পাকা সড়ক, উঁচু বাড়ি-ঘর গড়ে ওঠেছে। খবরের কাগজও পাওয়া যায় চরাঞ্চলে। গত পাঁচ বছরে এই আধুনিক প্রযুক্তির প্রচলন হয়েছে। তবে পুরো পরিস্থিতি পাল্টাতে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রমত্তা যমুনা। এঁকে বেঁকে চলা এই্ যমুনা সমতলভূমির সঙ্গে বিভক্ত করে রেখেছে চরের মানুষকে। চরগিরিশ ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক মিন্টু জানান, ‘সোলারের আলোয় চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান অনেকখানি পাল্টে গেছে। সঙ্গে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে- মেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে। সেচ থেকে শুরু করে অনেক কাজই এখন সোলারে মাধ্যমে করা সম্ভব হয়েছে।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের গুলের মোড় থেকে শুরু করে পুরো হাটবাজার এলাকায় অবস্থিত ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটের চালার ওপরে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। অসংখ্য বসতবাড়ির চিত্রও একই। গুলের মোড় থেকে নাটুয়ারপাড়া হাটের মূল সামনের অংশে মোবাইল কোম্পানির দু’টি বিশাল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেই টাওয়ারে বিদ্যুত সরবরাহের জন্য বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। শুধু চর এলাকা নয়। গ্রামে গ্রামে সোলার প্যানেল। কোথাও এখন আর হারিকেন নেই। সুনামগঞ্জের শাল্লা গ্রামের বিখ্যাত ব্যক্তি ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ যে হারিকেনের আলোতে গ্রামে বসে পড়ালেখা করেছেন, সেই হারিকেন গ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই জায়গা এখন দখল করেছে জল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত এবং সুর্যের তাপ থেকে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুত বাতি। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলে পাঁচ হাজারের অধিক সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
×