ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিডিবির হাই ভোল্টেজ তারে পাইপের অবৈধ ইনসুলেশন

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

পিডিবির হাই ভোল্টেজ তারে পাইপের অবৈধ ইনসুলেশন

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পিডিবির হাইভোল্টেজ লাইনের নিচে ভবন নির্মাণ করছে অসাধু মালিকরা। চট্টগ্রাম উন্নয়র কর্তৃপক্ষের অথরাইজেশন বিভাগগুলোও মোটা অঙ্কে বিতর্কিত নক্সা অনুমোদন দিচ্ছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের। পিডিবির অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব ভবন মালিক ঝুঁকিপূর্ণ তারে পাইপ লাগাতে গিয়ে হতাহতের শিকার হচ্ছে। এদিকে এ ধরনের ঘটনা কেন্দ্র করে কর্মকর্তা ও লাইনম্যানের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। কর্মকর্তাদের অবৈধ কর্মকা- মেনে না নেয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্প্রতি তিন কর্মচারীকে প্রায় ৫শ’ কিলোমিটার দূরে বদলি করে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার তদন্ত না করেই একটি মোডিফাই ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে পিডিবির খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীদের মাঝে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর তিন কর্মচারীকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলি আদেশ জারি করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারী চাকরি বিধিমালা না মেনে এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত অবৈধ কর্মকা-ে সায় না দেয়ার জের বলে দাবি করছেন সদ্য বদলিকৃতরা। খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের সিবিএ নেতারাও এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স ইএন) কেনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, হাইভোল্টেজ ক্যাবলে পাইপ লাগালে ইনসুলেশনের কাজ করে না। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বেআইনী। আর আমরাও কখনও অথরাইজ করি না এ কাজে। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকা, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, মেয়র গলি, হিলভিউ আবাসিক, আলফালাহ গলি, মির্জারপুল, আকবরশাহ ও রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটি, ওআর নিজাম রোড ও আলমাস সিনেমা গলিসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তারে পাইপ লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে গত ৩০ নবেম্বর অবৈধভাবে লাইনে পাইপ লাগানো নিয়ে আরেক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ঘুষের টাকা লেনদেন নিয়ে প্রশাসন ও সরবরাহ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই এ ঘটনায় অপরাধীরা নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেনকে জিম্মি করে স্বাক্ষর আদায় করে তিনজনকে বদলির দফতরাদেশ আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বদলিকৃতরা হলো এসবিএ (ডি) সুব্রত দাশকে ময়মনসিংয়ের হালুয়াঘাটস্থ বিউবোতে, লাইনম্যান (এ) আবদুল্লাহ সরকারকে সুনামঞ্জের দিরাই বিদ্যুত কেন্দ্রে ও হেলপার শহীদুল ইসলামকে সিলেটের জৈন্তাপুর বিদ্যুত কেন্দ্রে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই একটি ভিডিও ফুটেজকে মোডিফাই করে নিরপরাধীদের অপরাধী বানিয়ে এ ধরনের চক্রান্ত করা হয়েছে বলে দাবি বদলিকৃতদের। কারণ হাতাহাতির ঘটনা কমপক্ষে ১০ মিনিটের কিন্তু তা মাত্র ২ মিনিটে মোডিফাই করায় এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। প্রথম হাতাহাতির ঘটনা শুরু হয় সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ ও লাইনম্যান আব্দুল্লাহ সরকারের সঙ্গে। কারণ সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ইক্যুইটি প্রপার্টিজের পাশের নির্মাণাধীন ভবনের ডেভেলপার মোর্শেদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে হাইভোল্টেজ ক্যাবলে পাইপ লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু লাইনম্যান আবদুল্লাহ মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে এ কাজ করে দেয়ায় সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ চড়াও হয় লাইনম্যানের ওপর। এ সময় সহকারী এ্যাকাউটেন্ট আশ্রাফ আলী, ক্যাশিয়ার তারেক আল মামুন, লাইনম্যান ইলিয়াস, লাইনম্যান বাদশাহ, লাইনম্যান জাকির, লাইনম্যান কামাল রায়হান, ফোরম্যান হারুনর রশীদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী শংকর বিশ্বাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, সহকারী এ্যাকাউন্টেন্ট মোশারফ হোসেন, এসবিএ সুব্রত দাশ ও হেলপার শহীদুল ইসলাম। খুলশী থানায় জিডি করার পর অপরাধীদের বাঁচাতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গত ৮ ডিসেম্বর বিউবো বিতরণ দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে বদলি আদেশ স্থগিত করার জন্য একটি লিখিত আবেদন করেছেন সুব্রত দাশ ও মোঃ মোশারফ হোসেন। এতে গত ৩০ নবেম্বর সহকারী প্রকৌশলী সাঈদ ইকবাল পারভেজ ও লাইনম্যান আব্দুল্লাহ সরকারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একটি চক্র এ দুজনকে ফাঁসাতে ভিডিও ফুটেজের মূল অংশ মোডিফাই করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে বদলির দফতরাদেশ ইস্যু করিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পিডিবির এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত ২২ ডিসেম্বর লালখান বাজারের পেছনে মতিঝর্ণায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশের ১১ কেভি লাইনে পাইপ লাগাতে গিয়ে পিডিবির অস্থায়ী কর্মচারী মোঃ নাছির (২৭) বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে হাত ও পায়ের মাংস ও চামড়া খসে পড়েছে। দ্রুত তাকে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়েলিটিতে নেয়ার পর ৩৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২২ ডিসেম্বর দুপুরে উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জনি, লাইনম্যান শফিকুল ইসলাম ও গৌতম চৌধুরীসহ একটি পিকআপ খুলশী থানাধীন মতিঝর্ণা এলাকায় গোপনভাবে ওই ভবনের সামনে থাকা পিলারের ১১ কেভি তারে পাইপ লাগাতে যায়। মিজানুর রহমান ও শফিকুল মতিঝর্ণার মোড়ে গাড়ি থেকে গৌতম ও নাছিরকে পাঠিয়ে দেয় পাইপ লাগাতে। বিদ্যুতায়িত লাইনে পাইপ লাগাতে গিয়ে মোঃ নাছির বিদ্যুতায়িত হয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে মিজানুর ও শফিক মিলে তাকে পিকআপে তুলে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করে নাসিরকে। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেন বলছেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
×