ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১১ বছরে এসএমই ফাউন্ডেশনের ৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

১১ বছরে এসএমই ফাউন্ডেশনের ৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিগত ১১ বছরে দেশের ৩৭ জেলায় ৬ খাতে ১ হাজার ৮৫০ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি ঋণ দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের শতকরা ৯ ভাগ সুদে ঋণ দেয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। শিল্পায়নে নারী এবং সব শ্রেণীর এসএমই উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু বগুড়ার ১৭৫ জন হালকা প্রকৌশল শিল্প উদ্যোক্তাকেই ৯ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ১ হাজার ৮৫০ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি ঋণ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ বা ৫১২ জনই নারী উদ্যোক্তা। পুরুষ উদ্যোক্তা ১ হাজার ৩৩৮ জন। সবচেয়ে বেশি ২৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে হালকা প্রকৌশল শিল্প উদ্যোক্তাদের। ৫১২ জন নারী উদ্যোক্তা পেয়েছেন ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, চামড়াজাত পণ্যে ১২ কোটি ১২ লাখ, ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাস্টিক খাতে ৮ কোটি টাকা করে, ক্রিকেট ব্যাট উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের ৩ কোটি, আগর আতর শিল্পে ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা, নতুন উদ্যোক্তাদের ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা আর পাটজাত পণ্য উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন ৬৪ লাখ টাকা। ১০টি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ফাউন্ডেশনের মাত্র ৪ ভাগ সুদে দেয়া অর্থ উদ্যোক্তাদের দেয়া হয় সর্বোচ্চ ৯ ভাগ সুদে। এক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৫ বছর। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাজারীবাগ ও পূর্ব মাদারবাড়ী ক্লাস্টারের ১২৫ জন উদ্যোক্তা। বগুড়ার হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টারের ১৭৫ জন উদ্যোক্তা পেয়েছেন ৯ কোটি টাকা, আর ঢাকার ধোলাইখালের ৪১ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ৪ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকার শ্যামপুর, জুরাইন ও কদমতলী ইলেকট্রিক্যাল ক্লাস্টারের ১২১ জন এবং ইসলামবাগ প্লাস্টিক ক্লাস্টারের ৮০ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ৮ কোটি টাকা করে। নিজস্ব তহবিল থেকে বগুড়ায় আমদানির বিকল্প হালকা প্রকৌশল শিল্পের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে শুরু হয় এ কার্যক্রম। এ বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যাংক, নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থা ঋণ দেয়। আমরা ক্রেডিট হোল সেলিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঋণ দেই। আমরা ব্যাংকে টাকা দেই, তাদের বলি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে। তবে তাদের কাছে আমাদের কিছু শর্ত থাকে। যেমন কোন বন্ধকী চাইতে পারবে না, ৯ ভাগ সুদ হবে, এক গ্রহীতাকে বারবার ঋণ দেয়া যাবে না। আর যে সব ঋণ বিতরণ করা হয় তা ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের দায়িত্ব থাকে। তবে এসব ঋণ কার্যক্রমে স্যাটিসফেকশন ভাল থাকায় ঋণখেলাপী থাকছে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেই। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা শুরুতেই অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কম সুদে ঋণ পাচ্ছে। এতে ব্যবসা থেকে স্বল্প আয় আসলেই সহজে ভাল আয় হয়। আমরা গত ১১ বছরে দেশের ৩৭ জেলায় ৬ খাতে ১ হাজার ৮৫০ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি ঋণ দিয়েছি। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা ১০ হাজার উদ্যাক্তাকে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখি। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টার দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি শিল্প ক্লাস্টার। এ ক্লাস্টারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন কারখানার আমদানি বিকল্প মানের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা হয়। ক্লাস্টারের তিন শতাধিক কারখানায় কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফাউন্ডেশন ২০০৯ সালে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের মাধ্যমে বগুড়া হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টারে অর্থায়নের মাধ্যমে ক্রেডিট হোলসেলিং প্রোগ্রাম শুরু করে। এখন পর্যন্ত ক্লাস্টারের ১৭৫ জন উদ্যোক্তার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ধোলাইখাল হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টার ॥ ঢাকা শহরের টিপু সুলতান রোড, ধোলাইখাল, গে-ারিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে ওঠা প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ধোলাইখাল হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টার। ক্লাস্টারে নিয়োজিত রয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিক। ফাউন্ডেশন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের মাধ্যমে ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ক্লাস্টারের ৪১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কালুহাটি ফুটওয়্যার ক্লাস্টার, রাজশাহী ॥ ফাউন্ডেশন এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড এবং ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার কালুহাটি ফুটওয়্যার ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে। এখন পর্যন্ত ক্লাস্টারের ৮১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ক্লাস্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে অবস্থিত ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত বিভিন্ন বড় বড় গার্মেন্টস থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে বিভিন্ন রকম বস্ত্র সামগ্রী উৎপাদন করে যার সিংহভাগ রফতানি হয়। ক্লাস্টারের ৫ শতাধিক কারখানায় কাজ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই ক্লাস্টারের ১২৭ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ৪.০৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টার ৪টি (ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হাজারীবাগ, পূর্ব মাদারবাড়ী) ॥ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত ইবিএল-উদয় শীর্ষক ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাজারীবাগ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ী চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টারের ১২৫ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। শ্যামপুর, জুরাইন ও কদমতলী ইলেকট্রিক্যাল ক্লাস্টার ॥ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যাংক এশিয়া-প্রবাহ ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের কদমতলী, শ্যামপুর জুরাাইন, ভাঙ্গাপ্রেস, কাজলা এলাকায় অবস্থিত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্লাস্টারের ১২১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ইসলামবাগ প্লাস্টিক ক্লাস্টার ॥ আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত আইডিএলসি-পলিমার ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ইসলামবাগ, চকবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত প্লাস্টিক শিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ক্লাস্টারের ৮০ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বলদিয়া (পিরোজপুর) ও নরেন্দ্রপুর (যশোর) ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টার ॥ পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার বলদিয়া ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টার এবং যশোর জেলার নরেন্দ্রপর ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টারে ব্র্যাক-চ্যাম্পিয়ন শীর্ষক ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ক্লাস্টার ২টির ১৩৩ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। শাঁওইল হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, বগুড়া ॥ বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার শাঁওইল হ্যান্ডলুম ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৮২ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ৩.৬১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগর-আতর ক্লাস্টার, মৌলভীবাজার ॥ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগর আগর-আতর ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিবিএল-সৌরভ শীর্ষক ঋণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ১.৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পাবনা হোসিয়ারি ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৮ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, যশোর, হবিগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টারের ৭৯ জন উদ্যোক্তার মধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ হোসিয়ারি ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে ৬৯ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ৩.০৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের মধ্যে পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা খাতে জুট ডাইভার্সিফিকেশন প্রমোশনের (জেডিপিসি) সদস্য উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের উদ্দেশ্যে ৮ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ৬৪ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তা অর্থায়নে ফাউন্ডেশন মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইয়ুথ এন্টারপ্রাইজ এডভাইস এ্যান্ড হেল্পকেয়ারের সদস্য উদ্যোক্তাদের এমএফএল-যুবা শীর্ষক ঋণ প্রকল্পের আওতায় ১৯ জন নতুন উদ্যোক্তার মধ্যে ৬৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
×