ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে লাউয়ের বা¤পার ফলন

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

নীলফামারীতে লাউয়ের বা¤পার ফলন

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ উত্তরের জেলা নীলফামারীজুড়ে লাউয়ের বা¤পার ফলন হয়েছে। লাউ চাষ করে জেলার কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। লাউ নিয়ে এখানকার কৃষকদের আর বৈরাগী হতে হচ্ছে না। সেই আদিকাল থেকেই লাউয়ের কদর ছিল ব্যাপক। যা এখনও অব্যাহত। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি অকৃতিম ভালবাসার বিকল্প নেই। আশ্চর্য হলেও সত্য জেলার যে কোন পথ ধরে গেলেই চোখে পড়বে সারি সারি লাউয়ে চাষ। যে যেমন করে পেরেছে লাউ চাষ করেছে। মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ আর লাউ। যেদিকে চোখ যায় কেবল লাউয়েরই ছড়াছড়ি। লাউয়ের ভাল ফলন দেখে যে কারও ভাল লেগে যাবে। স্বল্প জমিতে অধিকহারে লাউয়ের চাষ করতে পেরে সন্তোষ চাষিও। আকারে গোলাকার এবং লম্বা দুই ধরনের লাউ এবার চাষ হয়েছে এ জেলায়। সরেজমিনে দেখা যায় জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর উপজেলায় এবার ৫০০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে লাউয়ের চাহিদা মিটিয়ে তা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে। জেলা সদরের হাজীগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ খালেদা আক্তার বললেন, লাউ চাষে এত লাভ আগে বুঝিনি। এবার আমি ও আমার স্বামী সিরাজুল মিলে বাড়ির ধারে লাউ চাষ করে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। অথচ লাউ চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের সুবর্ণখুলি গ্রামের নিমাই চন্দ্র রায়ের (২৭) কৃষি জমি রয়েছে ১ একর। পাঁচ বছর আগেও পরিবারটির ছিল অর্থনৈতিক সঙ্কট। কৃষির আয় থেকে চার সদস্যের পরিবারের চলত না ভরণপোষণ। এ কারণে ধারদেনা লেগেই ছিল পরিবারটিতে। এরপর থেকে সবজি আবাদ করে ফিরে এনেছে পরিবারের সচ্ছলতা। এবারে নিমাই চন্দ্র রায় সবজি চাষে ব্যবহার করছেন ৬৮ শতক জমি। এর মধ্যে আবাদ করেছেন ৪ শতক জমিতে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে সবজি আবাদ করে আয় করেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন লাউ। গত বছরের চেয়ে অধিক আয়ের আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, শীতকালীন এসব সবজির ফলন উঠিয়ে একই জমিতে আবাদ করবেন ভুট্টাসহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফসল। এসব ফসল থেকে আয় আসবে অন্তন্ত ৫০ হাজার টাকা। সারা বছরের ওই আয় দিয়েই স্বনির্ভর হয়েছে তার ৪ সদস্যের পরিবার। গত ৫ বছরের আগাম সবজি আবাদ করে সে ধারদেনা পরিশোধ করে ভাল আছি আমরা। গ্রামের হরিপদ রায় (৪০) বলেন, আগে যে পরিমাণ জমি ছিল এখনও তাই আছে। আবাদের কৌশল জানা না থাকায় অভাব-অনটনে দিন কেটেছে। বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষে যে অনেক লাভ হয় আগে জানতাম না। এখন অভাব তাড়িয়েছি। পরিবারের ৫ সদস্যের ভরণপোষণের জন্য আর চিন্তা করতে হয় না। এখন সমাজেও আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ডোমার উপজেলা হরিণচড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৩৫) জানান, ১২ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আরও বহু টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। পাইকারি বিক্রেতা সমুজ আলী বলেন, বিষমুক্ত লাউ চাষ হয় নীলফামারীতে। ফলে নীলফামারীর লাউয়ের চাহিদা বেশি। এ ব্যাপারে চাষি আজগর আলী বলেন, লাউ চাষ তেমন একটা পরিশ্রমের নয়। ১ শতক জমিতে এক হাজার টাকা খরচ করে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করতে হবে। রোপণ করতে হবে উন্নতজাতের বীজ। স্থানীয় কৃষি বিভাগের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য উপযোগী। লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই জন্মে তবে প্রধানত দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি। লাউ, ডগা,পাতা সবই সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। কচি লাউ কুচিয়ে মিষ্টি জাতীয় ভুনি কদু রান্না জনপ্রিয়। লাউ সহজে হজম হয়, শরীর ঠা-া রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শীতকালীন জলবায়ু লাউ চাষের জন্য বেশি সর্বোপযোগী। বছরের অন্য সময়েও চারা লাগিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি লাউ-১, বারি লাউ-২ নামে উচ্চফলনশীল দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে লাউয়ের কোন অবমুক্তায়িত জাত নেই।
×