ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৈরি করছে আরও উন্নত হাইপারসনিক অস্ত্র

যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলল রাশিয়া

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলল রাশিয়া

নতুন হাইপারসনিক অস্ত্রের ডিজাইন প্রস্তুত করেছে রাশিয়া। এটি দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের হাইপারসনিক অস্ত্র থেকেও উন্নততর হবে বলে দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই তথ্য প্রকাশ করেন। এ পর্যন্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রই এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করেছে বা করার কাছাকাছি পর্যায়ে আছে। খবর টাইম ও এপির। পুতিন বলেন, রাশিয়া প্রথমবারের মতো উন্নত ধরনের হাইপারসনিক অস্ত্রের অধিকারী হতে যাচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও উন্নততর হবে। এর মাধ্যমে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলবে। শীতল যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করেছে। একই সঙ্গে কৌশলগত বোমারু বিমান ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেয়ার সময় এসেছে। কারণ দেশটি প্রতিনিয়ত আমাদের পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। কোন দেশের হাতেই এখনও পর্যন্ত হাইপারসনিক অস্ত্র নেই। আন্তঃমহাদেশীয় পাল্লার হাইপারসনিক অস্ত্রের কথা তো বাদই দেয়া যায়। আগস্টে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছে। এই ধরনের একটি অস্ত্র তৈরিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। তবে আমরা দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এমন হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য দেশটির কংগ্রেসকে রাশিয়া ও চীনের হাইপারসনিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার বলেছে, চীন ও রাশিয়া হাইপারসনিক অস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। চীন ও রাশিয়ার হাইপারসনিক অস্ত্রকে অকেজো করা ওই এই অস্ত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা ওয়াশিংটনের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের অস্ত্র ঠেকিয়ে দিতে মহাকাশে সেন্সর লেয়ার (স্তর) সিস্টেম তৈরি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে। সেন্সর লেয়ার সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্রকে হাইপারসনিক অস্ত্রের হামলা মোকাবেলায় কাজ করবে। মার্কিন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দিতে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যুহ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে আকাশ থেকেই শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেয়া যাবে। শত্রু দেশের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিনে আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাবে। হাইপারসনিক অস্ত্রের নক্সা প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মন্তব্য বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তা লে. কর্নেল রবার্ট কারভার বলেন, আমরা রাশিয়ার এই খবর জেনেছি। তবে আপাতত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মঙ্গলবারের বৈঠকে পুতিন বলেন, চলতি মাস থেকেই উন্নত প্রযুক্তির হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরি নিয়ে আলোচনা হবে। পরে আকাশে পরীক্ষার পর হাইপারসনিক অস্ত্র পুরোপুরি কাজ শুরু করবে। ২০১৮ সালের মার্চে এক বক্তব্যে রুশ নেতা পুতিন কিনজল ক্ষেপণাস্ত্রেও কথা প্রথমবারের মতো উচ্চারণ করেছিলেন। মঙ্গলবারের বৈঠকে পুতিন বলেন, তৈরি হতে যাওয়া উন্নত প্রযুক্তির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির চেয়ে ২০ গুণ গতিতে উড়তে পারবে। শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর এটি নিজেই গতিপথ পাল্টে নিরাপদে আসতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজে হাত দিলেও তার পরিষেবা এখনও শুরু হয়নি। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পর তারা সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে হাত দেয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে পুতিন রুশ সীমান্তের কাছে ন্যাটো সৈন্যদের উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সেই সেনা উপস্থিতি প্রত্যাহার করে। পুতিন বলেন, রাশিয়াকে অবশ্যই বিশ্বের সর্বাধুনিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রযুক্তি অবশ্যই ভাল মানের হতে হবে। আমরা যাতে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আধুনিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারি এবং আমি আশা করি রাশিয়া অবশ্যই সর্বাধুনিক অস্ত্রের মালিক হতে পারবে। বৈঠকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সয়ুজ বলেন, চলতি বছর তাদের সেনাবাহিনী ১৪৩ জঙ্গী বিমান ও হেলিকপ্টার, ৬২৪ সামরিক যান, একটি ডুবোজাহাজ ও আটটি যুদ্ধ জাহাজ পেয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোতেও রুশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। আগামী বছর রুশ সেনাবাহিনী এ বছরের তুলনায় অস্ত্র পাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন সের্গেই সয়ুজ।
×