ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সামাজিক নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সামাজিক নিরাপত্তা

স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব সকলে সমান। বিশেষত দরিদ্রদের জন্য থাকার বাসস্থান, বস্ত্র, ন্যূনতম দৈনন্দিন খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তাদের জন্য আলাদা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের জীবন মানের উন্নতি করার পথ সৃষ্টি করে দেবে যা সাংবিধানিকভাবে বৈধ। অথচ দরিদ্ররা দেশের কায়িক শ্রমের দায়ভার নিয়েও পাচ্ছে না আবাসন সুবিধা, পর্যাপ্ত পুষ্টিমান খাবার, কঠিন শীতে বস্ত্রাদি, উপযুক্ত শিক্ষা ও চিকিৎসা। যার ফলে প্রত্যাশিত জীবন মানের উন্নতি ধীরগতির, দারিদ্র্যের হার কমছে আরও ধীর গতিতে। একদিকে ধনীদের সম্পদ আত্তীকরণ, অপরদিকে আমলাদের সঙ্গে দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতারা দেশের অর্থ সম্পদ লুটপাট ও অবৈধ ভোগ করলেও দারিদ্র্যরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নানা দিক দিয়ে। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে তীব্র গরম যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে শীতের প্রকোপ, শীতকালের স্থায়িত্ব কমে গেলেও বেড়েছে প্রচ-তা। নদ-নদীর আশপাশে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই অতি দারিদ্র্য, যারা দিন আনে দিন খায় গোছের, তিনবেলা পেটভরে যারা খেতে পারে না তারা শীতকালে ভাল জামা-কাপড় কেনার সামর্থ্য রাখে কেমন করে? তীব্র শীতে কম ও ছেঁড়া জামা-কাপড়ে আগুনের কু-লি জ্বালিয়ে পার করে দেন। অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা শীতের মাঝে দুর্ভোগের শিকার হন বেশি। পেটের দায়ে শীত সয়েও কাজ করে অনেক সময় নানা রোগে আক্রান্ত হয় এসব সাধারণ মানুষেরা, যাদের চিকিৎসার চিন্তাও নেহায়েত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার মতো, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ দরিদ্রদের শীতকালীন কঠিন জীবনযাপনের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন দাতা সংস্থা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ শ্রম আর হাত পেতে অর্জিত অর্থ দ্বারা তাদের শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। যা মানবতার এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য সহযোগিতা দ্বারা কি পুরো দেশের দারিদ্র্য মানুষের শীত কষ্ট শতভাগ নিবারণ করা আদৌ কি সম্ভব, সম্ভবপর নয়। মাঝে মাঝে স্বার্থ লোভী রাজনীতিবিদরা বছরে একবার কিছু কম্বল বিতরণের নামে পার্টির আয়োজন ও নামের তালিকা করেন যা শুধুমাত্র খ্যাতি আর প্রচারের জন্য মাত্র। তবে সরকার কেন এসব জনসাধারণের দায়ভার রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করে দরিদ্রদের শীতকালীন কষ্ট শতভাগ নিবারণের প্রচেষ্টা করছে না? তারা দারিদ্র্য বলে কি রাষ্ট্রের জনগণ নয়? রাষ্ট্রের অর্থ দ্বারা তাদের শীত নিবারণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ান। হয়ত তারাও একদিন রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচলে সৌন্দর্য বাড়বে দেশের, যার ফলে হয়ত বা আমরা গাইতে পারব, ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা, যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর থেকে
×