ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোরহান বিশ্বাস

অভিমত ॥ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

অভিমত ॥ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

আবারও প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। আবারও নৌকার কা-ারি হলেন শেখ হাসিনা। টানা নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লীতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। এর আগে ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে তার অনুপস্থিতিতে তাকে প্রথমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর পর ৩৯ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলটির শীর্ষ পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। বেশ কয়েকবার দলীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। তবে দলের নেতাকর্মীরা ‘শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’ বলে তার হাতেই বার বার তুলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। এবারও সদ্য সমাপ্ত দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব খোঁজার কথা তুলতেই ‘নো নো’ স্লোগানে গোটা প্যান্ডেল প্রকম্পিত করে তোলেন সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা। শেখ হাসিনা ছাড়া কি আওয়ামী লীগ কল্পনা করা যায়? উন্নত, সমৃদ্ধ, নারীর অগ্রগতি সম্পন্ন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করা যায়? এখনও দলের কিংবা দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত একমাত্র শেখ হাসিনাই। মানবিক কারণে অত্যাচারিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার জননী) উপাধি। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় অনেক বড় সমস্যা উৎরে এসেছে বাংলাদেশ। ¯্রষ্টার অপার কৃপায় পরাজিত শক্তির কূটকৌশল, গুলি কিংবা গ্রেনেডের মুখ থেকে বেঁচেও তিনি অকুতোভয়। বরং নবউদ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে, বিশ্বের দরবারে মর্যাদা নিয়ে চলতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছেন। তার উদ্যোগেই বাংলাদেশের নারীরা অসামান্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধান বিরোধী দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিজিএমইএতে প্রথমবারের মতো নারীরা সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিন দফায় ১৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে আরও ৫ বছরের জন্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ মেয়াদ পূর্ণ করলে সবাইকে ছাড়িয়ে বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ-বিদেশের নানা ষড়যন্ত্রের পরও বঙ্গবন্ধুর খুনী ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বিশ্ববাসীর কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এবার তার লক্ষ্য, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এ জন্য ঋণখেলাপী সংস্কৃতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদক দমনে তিনি সচেষ্ট। সুস্থ ধারার নতুন নেতৃত্ব আনতে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টদের ধরপাকড় প্রত্যক্ষ করেছে জনগণ। গ্রেফতার থেকে বাঁচতে অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছেন। অনেকে আছেন আত্মগোপনে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ শুধু নয় আওয়ামী লীগেও শুদ্ধি অভিযান চলছে। সেই অভিযানে ঝরে পড়ছে দলীয় অপরাধীরা। দলকে পুঁজি করে যারা টাকায় পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করেছিল, তাদের অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজ দলে এমন শুদ্ধি অভিযান কেউ কি আগে কখনও দেখেছে? দলে নতুন রক্ত সঞ্চালন করতেই শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ। স্বচ্ছ ও ত্যাগী নেতারাই যেন দল চালান, সে জন্যই তার ওই পদক্ষেপ। ২১তম কাউন্সিল অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের দল। দলে যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু আমাদের আছে। আওয়ামী লীগ মানুষের কথা, মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য গর্বিত হয়েছে । এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। দলের মান-সম্মান যেন থাকে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যেন অর্জন করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই সংগঠনকে গতিশীল করবেন। এ সময় নেতাকর্মীদের জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক নেতাকর্মীর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়া উচিত। সেখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। তিনি উপস্থিত সবাইকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন সরকারে আছি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে অনেক সময় সংগঠন বা সরকারেরও বদনাম হয়। কিন্তু আমরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পেরেছি। এটা যেন ধরে রাখতে পারি, অব্যাহত রাখতে পারি, সেভাবেই সবাইকে কাজ করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না, যার জন্য দলের বদনাম হয়। সরকারের বদনাম হয়। দেশের বদনাম হয়। বক্তব্যের শেষ দিকে নিজের বয়স নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করে তিনি বলেন, বয়স তো কম হলো না। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। ’৮১ সালে এসেছি। তখন মাত্র ৩৪ বছর বয়স ছিল। এখন বয়স ৭৩ বছর। এটা মাথায় রেখেই আগামী দিনের নেতৃত্ব আপনারা গড়ে তুলবেন সেটাই আমি চাই। আমরাও চাই, শেখ হাসিনা দলের সঙ্গে থাকুন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকুন। তার অসমাপ্ত কাজগুলো একে একে শেষ করুন। পাশাপাশি নতুন নেতৃত্ব তৈরির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা চলমান রাখুন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, শেখ হাসিনাই পারেন এবং পারবেন ক্যান্সারের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে যাওয়া দুর্নীতি দূর করে সোনার বাংলা গড়তে। সে পর্যন্ত তিনি সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন। লেখক : সাংবাদিক
×