ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষাধিক তরুণকে বিনা খরচে দেয়া হবে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

লক্ষাধিক তরুণকে বিনা খরচে দেয়া হবে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে-বিদেশে পেশাদার ড্রাইভারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেশের এক লাখেরও বেশি তরুণকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছে সরকার। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে বেকার জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত করতে হালকা ও ভারি যানবাহন চালনোর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। দক্ষ ড্রাইভার গড়ে তুলতে এ জন্য সরকার ব্যয় করবে ২৬৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমটিআই)। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে জানান, দেশের ৬৪ জেলায় বিদ্যমান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তরুণদের ড্রাইভিংয়ের পাশাপাশি অটোমেকানিক্সের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে, যাতে চলতি পথে হঠাৎ কোন যানবাহন বিকল হলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করতে পারেন। এম এ মান্নান আরও বলেছেন, বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে গাড়ি চালকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ভাল মানের এক লাখ চালক পাওয়া গেলে আজকেই চাকরি দিতে পারবেন। এটি শুধু সৌদি আরবেই, অন্য দেশ তো আছেই। প্রশিক্ষণ শেষের সঙ্গে সঙ্গে তারা চাকরি পেয়ে যাবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটা প্রকল্প নিয়েছে, এক লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দেবে আন্তর্জাতিক মানের। এ জন্য দেশের সর্বত্র প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যেসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, সেখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বিএমটিআইয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশ-বিদেশের উপযোগী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের বেকার যুবক-যুবতীরা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পের আওতায় ১২৮টি ডাবল কেবিন পিকআপ, আটটি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হবে। এছাড়াও, তিন ধরনের ১৯২টি প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি, সাত ধরনের ২১টি অফিস যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর প্রশিক্ষক থাকবেন ব্যবহারিক ১২৮ জন, তাত্ত্বিক ৬৪ জন ও স্কিল ওয়ার্কার ৬৪ জন। প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, সৌদিতে বাংলাদেশী এক লাখ দক্ষ চালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় শীঘ্রই দেশের ৬১ জেলায় এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। চলবে জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এই পাঁচ বছরে পর্যায়ক্রমে দক্ষ চালক তৈরির পর সৌদি পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে দেশেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশ-বিদেশের উপযোগী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের বেকার যুবক ও যুবাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে তারা ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, সৌদিতে যারা যাবেন এমন একজন চালক মাসে এক হাজার ৩৫০ রিয়াল বেতন পাবেন। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে কোন অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সরকারী এ প্রশিক্ষণ শতভাগ ফ্রি হবে। উল্টো প্রশিক্ষণ নিতে এলে দৈনিক ১০০ টাকা করে দেয়া হবে চালকদের। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় এ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে না। তবে এসব জেলার মানুষ পার্শ্ববর্তী জেলায় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। প্রকল্পের বিষয়ে জানা যায়, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি জেলায় প্রতি শিফটে ২০ জনকে নির্বাচিত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় একজনকে তিন মাসে ৩৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতিটি জেলায় দুটি প্রশিক্ষণ গাড়ির মাধ্যমে ২০ জন করে দুই শিফটে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এজন্য ৬১ জেলার জন্য ১২৮টি প্রশিক্ষণ গাড়ি কেনা হবে। প্রস্তাবিত ব্যয় অনুযায়ী প্রথম চলতি অর্থবছরে ১১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ৩৮ কোটি টাকার কিছু বেশি করে খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
×