ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জেল-জরিমানার বিধান রেখে ডোপ টেস্ট বিধিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

জেল-জরিমানার বিধান রেখে ডোপ টেস্ট বিধিমালা হচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ মাদকদ্রব্য সেবনের আলামত পাওয়া গেলে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। কর্মরতদের মধ্যে কেউ মাদকদ্রব্য সেবন করছেন এমন আলামত পাওয়া গেলে সরকারী চাকরি আচরণ বিধিমালার আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে বিআরটিএ ডোপ টেস্ট করে নিশ্চিত হবে আবেদনকারী মাদকাসক্ত কি না। মাদকাসক্ত হলে তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হবে না। পাশাপাশি থাকছে জেল জরিমানার বিধান। এমন কঠোর বিধান রেখে ডোপ টেস্ট বিধিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রণীত বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, মানবদেহের জৈবিক কিছু অর্থাৎ মূত্র, চুল, নিশ্বাস, ঘাম, মুখের লালা অথবা মানবদেহের যে কোন অঙ্গ বা দেহের তরল বস্তুর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহে মাদকদ্রব্যের উপস্থিতি অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। সরকারী, আধাসরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নবনিয়োগের আগে ডোপ টেস্ট করা হবে। চাকরিত কারো বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে মাদকদ্রব্য গ্রহণের সন্দেহ হলে তার ডোপ টেস্ট করা হবে। গাড়ি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হবে। কর্মরত গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য গ্রহণের বিষয়ে সন্দেহ হলে ডোপ টেস্ট হবে। এছাড়া সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অন্য যে কোন ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু করা হবে। ডোপ টেস্টে মাদকের উপস্থিতি পজেটিভ পাওয়া গেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর ৩৬(৪), ৩৬(৫) এবং ৩৬(৬) মোতাবেক আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের উল্লেখিত ধারায় দোষী হলে কমপক্ষে এক বছর কারাদ- সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদ- অথবা কমপক্ষে পাঁচ বছর অথবা সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদ- অথবা কমপক্ষে দশ বছর কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ পনেরো বছরের কারাদ-ে দ-িত হবে। সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে কারো মাদকের আলামত পজেটিভ পাওয়া গেলে সরকারী চাকরি আইন ২০১৮-এ প্রণীত বিধির আলোকে অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে। সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্মশাসিত প্রতিষ্ঠান নবনিয়োগ প্রত্যাশীদের মধ্যে মাদকের আলামত পজেটিভ পাওয়া গেলে তাকে সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। এই আদেশ জারির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আপীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব কাজ করবেন। কর্তৃপক্ষের আদেশে যে কোন আদালত, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি), এ্যাক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার, সিভিল সার্জন, রেজিস্টার্ড সরকারী চিকিৎসক ডোপ টেস্ট করার আদেশ দিতে পারবেন। এছাড়া নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সরল বিশ্বাসে ডোপ টেস্ট করার আদেশ দিতে পারবেন। সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নবনিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ডোপ টেস্টের আদেশ দিতে পারবেন। চাকরিরতদের কারো বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য সেবনের সন্দেহ হলে কর্তৃপক্ষ ডোপ টেস্টের আদেশ দিতে পারবেন। গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ, কর্মরত গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ডোপ টেস্টের আদেশ দিতে পারবেন। এছাড়া সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোন ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের নির্দেশ দিতে পারবে। ডোপ টেস্টেও বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন চিফ কনসালটেন্ট কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, স্বাস্থ্য অধিদফরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি, প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষক, পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন)। কমিটির কার্যপরিধিও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে কমিটি মানবদেহে মাদকের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি, মানবদেহের কোন উপাদান পরীক্ষা করা হবে তা নির্ধারণ, বিভিন্ন পরীক্ষণ পদ্ধতির মানদ-, ডোপ টেস্টের ব্যয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান ডোপ টেস্ট সংক্রান্ত কোন প্রশ্নের উদ্ভব হলে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান এবং কমিটি প্রয়োজনে যে কোন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক বিশেষায়িত ডোপ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। মাদকের মহাপরিচালকের নেতৃত্বাধীন কমিটি ডোপ টেস্টের জন্য সরকারী খাতের কোন প্রতিষ্ঠানকে ডোপ টেস্ট করার স্থান বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্ধারণ করে দিতে পারবে।
×