ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি, পরে শীতের তীব্রতা বাড়বে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি, পরে শীতের তীব্রতা বাড়বে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতের দাপট কমছে না এখনই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা আরও কমে শীতে তীব্রতা বাড়বে। সেই সঙ্গে আছে দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা। যা মাসের শেষ দিকে শুরু হতে পারে। সব মিলিয়ে দ্রুত শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। এই সময়ে শীত অনুভূত হবে এটাই স্বাভাবিক। তারা বলেন, শীতের অনুভূতি বিভিন্ন প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে না। শীতের তিনটি প্যারামিটার এক সঙ্গে যোগ হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারছে না। শৈত্যপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা কমে গেলে শীত অনুভূত হয় বেশি। এছাড়া শীত মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও শীতের অনুভূতি বাড়ে। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকলেও শীত তীব্র আকার ধারণ করে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। ওই সময় থেকে শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি রয়েছে ঘন কুয়াশার দাপট। ফলে গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সোমবার থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলে আকাশ অনেকটা মেঘাচ্ছন্ন থাকায় খোদ রাজধানীতে শীতের অনুভূতি এখনো বেশি। এই সপ্তাহে বৃষ্টিপাতে হলে শীতের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এবার শীত ঋতুর শুরুতেই শীত জেঁকে বসেছে। এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে শীতকালের গড় তাপমাত্রা সাধারণত ১৮.৭২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা এ পর্যায়ে থাকলেই শীত অনুভূত হয়। কিন্তু দিনের তাপমাত্রার এর চেয়ে আরও কমে গেলে ক্রমেই শীত বেশি অনুভূত হতে থাকে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর নিচে নামলে সেটাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রীর নিচে নামলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ৪ এর নিচে নেমে গেলে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামীকাল ও পরশু দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তাতে ২৮ তারিখ থেকে তাপমাত্রা আবার কমে আসবে। তখন একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৯.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর ঢাকায় ওই সময় থার্মোমিটারের পারদ ছিল ১৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে টেকনাফে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এই সময় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত থাকতে পারে ঘন কুয়াশা। কুড়িগ্রাম ॥ টানা ৭ দিন ধরে হাড় কাঁপানো শীতে কুড়িগ্রাম ও তার আশপাশে জনজীবন স্থবির হয়ে রয়েছে। মঙ্গলবারও সকালে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল সমস্ত শহর। ঘন কুয়াশার কারণে কুড়িগ্রাম শহর থেকে দূরপাল্লার গাড়িগুলো দেরিতে ছাড়ে। সকালের দিকে সূর্য উঠলেও উত্তরের কনকনে ঠা-া হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদীর ৪শ’ ৫টি চর-দ্বীপ চরের প্রায় ৬ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষরা কাজে যেতে পারছে না। ঐসব পরিবারের মানুষরা দুর্ভোগে পড়েছে। প্রায় এক সপ্তাহের শৈত্যপ্রবাহে গরম কাপড়ের অভাবে কনকনে ঠা-ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা শীতজনিত রোগে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা। শীত নিবারণের গরম কাপড় না থাকায় খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই ছুটছেন পুরাতন কাপড়ের দোকানে। সিরাজগঞ্জ ॥ একটানা পাঁচদিন যাবত অব্যাহত মৃদুশৈত্যপ্রবাহে সিরাজগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে পুরো শহর। শীতের তীব্রতায় শ্রমজীবী, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষগুলোর দুর্ভোগও বেড়েছে। পাশাপাশি শীতবস্ত্রের সঙ্কটে কষ্টে দিনাতিপাত করছে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্ররা। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউমোনিয়া, সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১শ’ ১৬ জন নিউমোনিয়া ও ফুসফুসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানান। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল পুরো শহর। ৫০ মিটার দূরত্বের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। দুপুরে এক ঝলক রোদের আলো চোখে পড়লেও কুয়াশা একেবারে ছাড়েনি। দুপুর গড়িয়ে পড়লে আবারও ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো শহর। গত পাঁচদিন ধরেই এমন অবস্থা চলছে। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রমেশ চন্দ্র বলেন, শীতের প্রকোপে হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
×