ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও বোরোর চেয়ে কিছুটা বেশি পাওয়ায় খুশি ;###;৯০ শতাংশের বেশি জমির ধান কাটা শেষ ;###;হেক্টর প্রতি উৎপাদন গড়ে ২ দশমিক ৮৯ টন

আমনে এবার বাম্পার ফলন ॥ কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

আমনে এবার বাম্পার ফলন ॥ কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

ওয়াজেদ হীরা ॥ তীব্র শীত উপেক্ষা করে ক্ষেত-খামারে ছুটছেন কৃষক। গভীর কুয়াশা ভেদ করে ফসলের মাঠে আমন ধান কাটার ধুম লেগেছে। আমনের বাম্পার ফলনে উৎসাহে কমতি নেই কৃষকদের। তবে মূল্য নিয়ে গভীর অসন্তোষ থাকলেও বোরোর চেয়ে কিছুটা বেশি পাওয়াতে খুশি। ফসলের মাঠে ভাল উৎপাদনে হাসির ঝিলিক কৃষকের মুখেও। ঘাম ঝরানো সোনার ফসল ঘরে তুলছেন কৃষক। সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশেরও বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি এবার ধানের উৎপাদন গড়ে ২ দশমিক ৮৯ টন। এবার বন্যায় আমনের বীজতলা ভেসে গিয়ে তৈরি হয়েছিল নানা শঙ্কা। জুলাই-আগস্টের সময় হয় বন্যা। টানা বন্যায় দেশের প্রায় সকল বীজতলাই ভেসে যায়। দেখা দেয় আমন চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা। তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষক। সেই স্বপ্নে ঘুরে দাঁড়ান কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আবাদের পরিমাণ ৫৮ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। আমনের ভাল ফলনে খুশি সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। তারা জানিয়েছেন, কৃষকের আগ্রহ, সরকারের নজরদারি, পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারের দেয়া ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ফলেই এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারা আশা করছেন, আমনের পর আগামী বছর বোরোর উৎপাদনও ভাল হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমন ধানের ফলনে কৃষক অনেক খুশি। ধান কাটাও অধিকাংশ শেষ হয়ে গেছে। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে দামও কিছুটা ভাল। তবে কৃষক বেশি দাম পেলে চাষে আগ্রহ বেশি পান। কৃষি সম্প্রসারণ কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী ৯০ শতাংশের বেশি ধান কাটা শেষ। যা বাকি আছে দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। এদিকে, আমনে বাম্পার ফলন হলেও মূল্য নিয়ে কোন কোন জেলায় অসন্তোষ রয়েছে কৃষকদের মধ্যে। কোন জেলায় প্রতিমণ ধান ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার ৬০০ টাকার মধ্যেও বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার একটু বেশিই মূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে ৬০০ টাকা ধরে বিক্রি করলে বোরো মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলেও জানা গেছে। কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ফলে রফতানির আবেদন করলেই অনুমোদন মিলছিল রফতানির। কিন্তু হঠাৎ করে দেশের বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় রফতানি থেকে পিছু হটে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। উৎপাদন ও কৃষকদের ধানের মূল্যসহ সার্বিক বিষয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, উৎপাদনে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কোন প্রভাব পড়েনি। উৎপাদন বেশ ভাল হয়েছে। তবে মূল্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ধানের দাম যা পাচ্ছে খুব একটা বেশি নয়। ৬২০ টাকা মণ কোথাও তারচেয়ে কম। ধানের দাম খুবই নি¤œমুখী। এই দামে গত বোরো মৌসুমের ক্ষতি পুষাবে না বলে মনে করছেন তিনি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, যে মূল্য এখন পাচ্ছে এই মূল্যে বোরো মৌসুমে কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছিল আমনে তা কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে। এছাড়াও চাল রফতানি নিয়ে বলেন, আমরা চাল রফতানি চাই। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় আপত্তি দিয়েছে এ বিষয়ে। চালের দাম বেড়ে যেতে পারে সেকারণে হয়তো। তবে আমরা মোটা চাল বিক্রি করতে পারি না। কেউ মোটা চাল খেতে চায় না। ওএমএস ট্রাকে করে চাল ডিলাররা অনেকটা বাধ্য হয়ে নিয়ে যান তবে বিক্রি নেই। চিকন চালের দাম যদি কিছুটা বাড়েও তাহলে যার সামর্থ্য আছে তিনি কিনে খাবেন মনে করেন মন্ত্রী। তবে কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচে। কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেশি তাই তাদের ন্যায্যমূল্য না পেলে উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে। সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচও যাতে কমে আসে সে লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ডিএপি সারের দাম অনেক কমানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরু চাল রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (বৈদেশিক সংগ্রহ শাখা) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাণিজ্য সচিবকে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, নতুন ধান ওঠার ভরা মৌসুমের আগে হঠাৎ করে চালের মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশের বাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। তাই আপাতত চাল রফতানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, এবারের আমন উৎপাদন বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডীদাস কু-ু জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৯-২০২০ মৌসুমে ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও আবাদ বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরেজমিন উইং থেকে জানা গেছে, এর মধ্যে বোনা আমন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি আর রোপা আমনের লক্ষ্য ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে। রোপা আমনের মধ্যে চলতি মৌসুমে জমির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এরমধ্যে উফশী জাত ৪৪ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমি, হাইব্রিড ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমি এবং স্থানীয় জাতের ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
×