ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৩ নেতা পুলিশ হেফাজতে ॥ সেই শহিদুল আলম ফের সক্রিয়, মাঠে নেমেছে বিএনপি- জামায়াতপন্থী সাদা দল

ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে নূরের মামলা

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে নূরের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডাকসু ভবনে ভিপি নূর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আট নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের মামলার পর এবার ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাকে আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন নূর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় সংগঠনের সঙ্গী ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের মাধ্যমে নুর এই আবেদন জানান। ডাকসু ভবনে হামলায় আহত সকলের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে এবার সক্রিয় হয়েছেন ‘সুশীল’ সমাজের কয়েকজন। হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার আইন কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই সন্ধ্যায় ডাকসু ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেন নূর। ডাকসুতে আখতারই নূরের একমাত্র সঙ্গী। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে নূর মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে ওই অতর্কিত হামলায় প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসাইন। আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই মামলায় নূর নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় আমি তার পক্ষ হয়ে মামলার অভিযোগপত্রটি থানায় জমা দিয়েছি। মামলার এজাহার ও আসামি কারা? মামলার এজাহারে বলা হয়েছে সময় আনুমানিক দুপুর ১২টা, আমি, আমার সংগঠনের সদস্যরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কক্ষে অবস্থান করি। হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আমার কক্ষে প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে চলে যায়। তারা আবারও যাতে হামলা করতে না পারে, তাই ডাকসু কর্মচারীদের সহায়তায় ডাকসুর মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকসু কর্মচারীদের সরিয়ে মূল ফটকের তালা খুলে আমার কক্ষে প্রবেশ করে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। তারা আমার কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহকারে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমার ডান হাত এবং ডান পাঁজর মারাত্মকভাবে জখম হয়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের ৩০ নেতাকর্মীরা গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত হয়ে ফারাবী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। অন্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অতর্কিত হামলায় প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেন। আসামিরা হলেন- (১) সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, (২) সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, (৩) আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৪) আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৫) সনেট মাহমুদ, সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাবি, (৬) ইয়াসির আরাফাত তূর্য, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাবি, (৭) মারিয়াম জাহান খান, ভিপি সূর্যসেন হল সংসদ, (৮) শেখ মুহাম্মদ তানিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাবি ছাত্রলীগ, (৯) আব্দুর আলীম খান, ভিপি এএফ রহমান হল সংসদ, (১০) আবু ইউনুস, এজিএস বিজয় একাত্তর হল সংসদ, (১১) রাকিবুল হাসান ঐতিহ্য, সদস্য ডাকসু, (১২) মাহমুদুর হাসান, সদস্য ডাকসু, (১৩) সাদ বিন কাদের চৌধুরি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ডাকসু, (১৪) রবিউল হোসেন রানা, সহ-সভাপতি ঢাবি ছাত্রলীগ, (১৫) নিয়ামত উল্লাহ তপন, শিক্ষাবিষয়ক উপ-সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (১৬) হাসিবুল হাসান শান্ত, জিএস জিয়া হল সংসদ, (১৭) সিফাতুজ্জামান খান, ক্রীড়া সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (১৮) মিজানুর রহমান মিজান, জিএস মহসীন হল সংসদ, (১৯) ফেরদৌস আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (২০) আব্দুর রহিম সরকার, জিএস এএফ রহমান হল সংসদ, (২১) তানজিল ইমরান তালাশ, সাহিত্য সম্পাদক এএফ রহমান হল সংসদ, (২২) মাহমুদুল হাসান বাবু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ঢাবি ছাত্রলীগ, (২৩) সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া হল ছাত্রলীগ, (২৪) মামুন বিন সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (২৫) ইবনুল হাসান উজ্জ্বল, (২৬) খাজা খায়ের সুজন, উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (২৭) খান মিলন হোসেন নীরব, এসএম হল ছাত্রলীগ, (২৮) ইমরান আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগ, (২৯) হৃদয় হাসান সাহাগ, গণশিক্ষা সম্পাদক ঢাবি ছাত্রলীগ, (৩০) উজ্জ্বল, চারুকলা ছাত্রলীগ, (৩১) আরিফুল ইসলাম, (৩২) ফাতিমা রিপা, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৩৩) আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ (জামাল গ্রুপ), (৩৪) আইনুল ইসলাম মাহবুব, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৩৫) মেহেদী হাসান নিবিড়, (৩৬) মেহেদী হাসান শান্ত, জিএস বঙ্গবন্ধু হল সংসদ, (৩৭) জীবন রায়, সহ-সভাপতি ঢাবি ছাত্রলীগসহ ছাত্রলীগের অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জন নেতাকর্মী এই হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় বলে অভিযোগ নূরের। যদিও ওই সংঘর্ষে নূরের সঙ্গে ডাকসুতে অবস্থান নেয়া বহিরাগতদেরও হামলা চালাতে দেখা যায় ভিডিও ফুটেজে। যাদের হামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কয়েকজন গুরুতর আহতও হয়েছেন। পুলিশের মামলা, রিমান্ড ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম মঙ্গলবার পুলিশের পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে আটক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে তিনদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন। এই তিনজনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্যকে সোমবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সংগঠনের দফতর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয় মঙ্গলবার সকালে। পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারে আল মামুন ও তূর্যের নাম থাকলেও শান্তর নাম ছিল না। এই তিনজনের মধ্যে আল মামুন ছাত্রলীগের গত কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদে ছিলেন। তূর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শান্ত বঙ্গবন্ধু হল সংসদের জিএস। সোমবার রাতে মামলা করে পুলিশ। আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩৫ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। এজাহারে নাম থাকা বাকি পাঁচজন হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব হাসান নিলয় এবং জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম। আহতদের অবস্থার উন্নতি আহত নূরসহ মোট পাঁচজনের সবারই শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কেউ-ই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় নেই। তবে সোহেলকে আরও কয়েকদিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের মিটিংয়ের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন এমন তথ্যই জানান। তিনি বলেন, আহতদের আরও ভাল চিকিৎসার জন্য নয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছি। তারা আহতদের দেখে তাদের পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ফারাবীকে কেবিনে স্থানান্তর করার কথা হয়েছিল। তবে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে তাকে আরও একদিন আইসিইউতেই রাখি। এখন তিনি ভাল আছেন। তার কাঁধে এক্স-রে করা হবে। এছাড়া ওষুধ চলছে। আজ (মঙ্গলবার) তাকে কেবিনে নেয়া হবে। তিনি বাসায় যেতে চেয়েছেন। তবে আমরা আরও একদিন রাখব তাকে। নাসির উদ্দিন বলেন, এছাড়া আহত সোহেলকে সিটি-স্ক্যানসহ কিছু পরীক্ষার উপদেশ দিয়েছি। তিনি অর্থোপেডিক বিভাগের অধীনে থাকবেন। অন্যদিকে ফারুকেরও সিটি-স্ক্যানসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি। তার কানে সমস্যা ছিল। তাকে আরও দুইদিন রাখব। আরেকটু উন্নতি হলে তারপর ছাড়ব। আমিনুর ইসলামেরও কিছু টেস্টের এ্যাডভাইস দিয়েছি। তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগের অধীনে ভর্তি থাকবেন। এছাড়া নূর সার্বিকভাবে ভাল আছেন। নূর কেন বারবার মার খাচ্ছেÑ প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভিপি নূর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমারও প্রশ্ন তার (ভিপি নূর) ওপর কেন বারবার হামলা হচ্ছে? তবে এটি খতিয়ে দেখব। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কাওরানবাজারের ওয়াসা ভবনে সোভিয়েত এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। নূরকে ভোট দিয়ে নেতা বানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আমরা মনে করি ডাকসুকে ধরে রাখতে হবে। যাতে ভবিষ্যত রাজনীতিবিদ এখান থেকে উঠে আসে, যেভাবে আমরা উঠে এসেছি। সেই জায়গা থেকে নেতাদের শূন্যতা আমরা দেখতে চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নয়বার না দু’বার সেটি আমরা জানি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো তার ওপরে হামলা হবে কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢোকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা ভিসি যদি অনুমতি দেন কিংবা অনুরোধ করেন তখনই তারা যায়। কাজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে সেখানে এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই কার্যকর ভূমিকা রাখে। সক্রিয় বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দল নূর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাদা দলের শিক্ষকরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধনে ভিপি নূরের ওপর হামলাকে পুরো জাতির ওপর হামলা বলে মন্তব্য করেন শিক্ষকরা। অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সাদা দলের আহ্বায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপির ওপর হামলা মানে গোটা জাতির ওপর হামলা, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলা। এই হামলার পর আমরা শিক্ষক হিসেবে লজ্জিত। শুধু এই ঘটনা নয়, আজ ঢাবির বিভিন্ন হলেও সন্ত্রাসী হামলা চলে। মতের ভিন্নতা হলেই মার দেয়া হয়। ভিপি নূর তাদের মতের সমর্থন করে না বলে তাকে মারা হয়েছে। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক সাদা দলের যুগ্ম-সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, ডাকসুর ওপর যখন এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখন তা সমগ্র জাতিকে আঘাত করে। ভিপি নূর এবং তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার নিন্দা জানাই আমরা। রোকেয়া হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ লায়লা নূর ইসলাম ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, ডাকসু সমগ্র জাতির গৌরবের জায়গা। সে জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা মেনে নেয়া যায় না। ঢাবির ওপর আঘাত আসলে জাতির ওপর আসে। এটা মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। আরও ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক আলমগীর হোসেন সম্রাট, ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন মোঃ হাসানুজ্জামান, উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মোঃ আল আমিন প্রমুখ। উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে প্রতিবাদ নিয়ে মাঠে নেমেছেন কয়েকজন। যাদের মধ্যে আছেন সড়ক আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে হত্যার মতো গুজব ছড়িয়ে আলোচনায় আসা শহিদুল আলমসহ সুশীল সমাজের কেউ কেউ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তারা স্মারকলিপি দেন ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে। ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, তারা এ বিষয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উপাচার্যের সামনে স্মারকলিপি পড়ে শোনান লেখক ও এ্যাকটিভিস্ট রাখাল রাহা। স্মারকলিপিতে ভিপি নুরুলের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু তারা আপনার কাছ থেকে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। আপনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক সর্বোচ্চ ও সর্বক্ষণিক কর্মকর্তা। আমাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আমাদের করের টাকায় আপনার বেতন-ভাতা সম্মানী পরিশোধ করা হয়। আপনার এই আচরণ অপরাধীদের আরও অপরাধ করতে ধারাবাহিকভাবে উস্কানি দিয়ে চলেছে বলে আমরা মনে করছি। সাংবাদিকরাসহ উপাচার্যের কাছে নানা প্রশ্ন ও অভিমত জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীসহ অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে ছিলেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, সহকারী প্রক্টর বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মাহমুদ আলমসহ কয়েকজন। রাজু ভাস্কর্যে ছাত্র জনতা সংহতি সমাবেশ হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশাসনিক বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, অভিভাবকদের অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতা সংহতি সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ভিপি নূরের বাবা ইদ্রিস হাওলাদার প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত না থেকে সংহতি জানান গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আমানুল্লাহ আমান ও সাবেক জিএস মোশতাক আহমেদ প্রমুখ। সংহতি জানিয়ে লিখিত বিবৃতি পাঠান সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। এছাড়াও সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ)-বিসিএল, স্বতন্ত্র জোটের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল সংসদের নেতারাও এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। সমাবেশে অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান বলেন, প্রক্টর অফিসের জানালা দিয়ে ডাকসু ভবন দেখা যায়। কিন্তু ঘণ্টাব্যাপী হামলার ঘটনা ঘটলেও প্রক্টরিয়াল টিম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এমতাবস্থায় দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতায় প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। যে শিক্ষক বহিষ্কারের মানসিকতা নিয়ে প্রশাসন চালান, তারা আর শিক্ষক থাকতে পারেন না। অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এখানে এত ন্যক্কারজনক একটি হামলা হয়েছে, যার নিন্দা জানানোর ভাষা শিক্ষক হিসেবে আমার নেই। এখন কোন কোন সাবেক ছাত্র নেতাও কাকে কী বলতে হবে তা নিয়ে বেশ পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, একাত্তর সালে শিক্ষার্থীরা যদি রাজনীতি নিয়ে কথা না বলত তবে কী এই দেশ স্বাধীন হতো? মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা হলো যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা। নূররা সেটাই করেছে। জোনায়েদ সাকী বলেন, বাংলাদেশের যে কোন মানুষ দেশের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু আজ ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে আমাদের মুখে টেপ মেরে দেয়া হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি আহ্বান জানাব, সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজে বের করে সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনুন। নতুবা পদত্যাগ করুন। হামলার শিকার হওয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে হামলার সময় নূরের সঙ্গে বহিরাগত ছিল- এমন বক্তব্য দিয়ে হামলার ঘটনাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, শহীদ ডাঃ মিলন কি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও অংশ নিয়েছে। তাহলে এখন বহিরাগত প্রশ্ন আসবে কেন? তিনি বলেন, এভাবে হামলা করে আমাদের দমন করা যাবে না। নূরকে কেউ চিনত না। মানুষের অধিকার আদায় করেই তিনি ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। সমাবেশ থেকে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- হামলার দায়ভার নিয়ে প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানীর পদত্যাগ, ডাকসু ভবনের ‘উধাও’ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার, হামলাকারী ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার প্রভৃতি। অনতিবিলম্বে এসব দাবি মেনে না নিলে সারাদেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তিনি।
×