ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ৪৬০০ কোটি টাকার ৬ প্রকল্প অনুমোদন

শিশুদের ওপর পরীক্ষা ও বইয়ের বোঝা কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

শিশুদের ওপর পরীক্ষা ও বইয়ের বোঝা কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশুদের ওপর থেকে বই ও পরীক্ষার বোঝা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশুরা পড়াশোনার মধ্যে যেন আনন্দ পায় সেকথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকবে কি না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ২৩তম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নির্দেশনা দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভার সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভায় চামড়া শিল্পনগরীর মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজেস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সভার কার্যক্রম নিয়ে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস প্রমুখ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, পিইসি পরীক্ষা থাকবে কি না, তা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। পড়াশোনার চেয়ে বাচ্চাদের বেশি বেশি খেলাধুলার পরিবেশ গড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার ভার কমাতে বলেছেন। বাচ্চাদের পরীক্ষা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। বইয়ের ভার থেকে বাচ্চাদের মুক্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাচ্চাদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অনেক আলোচনা করেছেন। বাচ্চারা অনেক বেশি বই কাঁধে নিয়ে ঘুরে, কষ্ট হয়। আজকেও বিষয়টি বলেছেন। পরীক্ষা নিতে নিতে শেষ করে দিচ্ছি বাচ্চাদের। খালি পরীক্ষা, খালি পরীক্ষা। এটা উনি মনে করেন, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে পিইসি পরীক্ষা নেয়া হয়, এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। তিনিও (প্রধানমন্ত্রী) এর সঙ্গে একমত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, এ সমন্ধে আরও নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা করার জন্য। মূল কথা হলো শিশুদেরকে এই ভার থেকে মুক্ত করতে হবে। তারা যেন খেলাধুলা করতে পারে। শিশুদের বইয়ের ভার কমাও, আনন্দে থাকতে দাও ইত্যাদি। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও বিভক্ত। কোন বিশেষজ্ঞ বলে ভাল, কোন বিশেষজ্ঞ বলে ভাল নয়। এটা আন্ডার রিভিউ (পর্যবেক্ষণে রয়েছে) যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এছাড়া সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কাজ যেন এবার শেষ হয় সেজন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চতুর্থবার সংশোধন হলো, আর যেন সংশোধনী প্রস্তাব না আসে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগে যখন সব চামড়ার কারখানা ছিল, তাদের পাশে কিছু লোক ছিল যারা ট্যানারির মালিক না। তারা হাঁড়-গোড় দিয়ে বাই-প্রোডাক্ট শিল্প বানাত। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তারা সাভারে গেছে, সেখানেও তো এটা হবে। তাদের জন্যও তো ব্যবস্থা করা উচিত, তারা যদি ওখানে গিয়ে বাই-প্রোডাক্ট শিল্প গড়তে চায়। বিসিক কর্তৃপক্ষ, শিল্পমন্ত্রী, শিল্প সচিব জানিয়েছেন, তারা জায়গা চিহ্নিত করেছেন ইতোমধ্যে। যারা যেতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হবে। এটা নির্দেশ না, অনুরোধ ছিল। তারা এই কাজটা করবে। কারণ এর ভাল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ডেভেলপমেন্ট বন্ড ছাড়া যায় কিনা সেটি ভাবতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। এম এ মান্নান বলেন, একনেকে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালের পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে কিনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ব্যাখা দিয়ে বলেছেন, এখন কেবলমাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। তবে অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছে এতে করে পানগাঁও শিগগিরই পুরোপুরি ব্যবহার হবে। একনেকে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি ২ লাখ টাকা। এছাড়া ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পে খরচ হবে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ঢাকা মহানগরীর ও পূর্বাচল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। ১৭৭টি বিদ্যালয়ের ১১৬৭টি কক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ ও উত্তরাতে ৩টি ও পূর্বাচলে ১১টিসহ মোট ১৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা হবে। মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসির জন্য অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ তরুণকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে সরকার। এছাড়া ব্যয় কমিয়ে আবারও সংশোধন করা হলো ‘চামড়া শিল্পনগর’ প্রকল্প। ১ হাজার ৭৮ থেকে প্রকল্পের ব্যয় কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি শুরু হয়। নতুনভাবে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও অনুমোদিত হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাবউদ্দিন এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
×