ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ বড়দিন

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

শুভ বড়দিন

আজ ২৫ ডিসেম্বর। শুভ বড়দিন। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শত শত বছর ধরে বিশ্বের খ্রীস্টান সম্প্রদায় উৎসবমুখর পরিবেশে বড়দিন পালন করে আসছে। দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই দিনে জেরুজালেমের বেথলেহেমে যিশুখ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেন। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রভু যিশু। তিনি সারাজীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শাসকের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ হন। যিশুর জন্মদিন বড়দিনে খ্রীস্টান সমাজ আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। এদিন বিশ্ববাসীকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে যিশুর আদর্শ তাদের প্রেরণা দেয়। তারা স্বপ্ন দেখে যিশুর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতে এক আনন্দময় ও পাপমুক্ত বিশ্ব গড়ে উঠবে। বড়দিনের উৎসব পালনের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ প্রথাগত নিয়ম থাকলেও পৃথিবীর নানা দেশে আঞ্চলিক সংস্কৃতি এই উৎসবকে প্রভাবিত করেছে। বড়দিনের উৎসবে অন্য দেশের মতো সান্তাক্লজের উপস্থিতি আমাদের দেশেও দেখা যায়। শিশুদের প্রিয় এই উপহারদাতার নাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তবে তার ভাব-আচরণ সর্বত্র প্রায় এক রকম। তিনি শিশুদের ভালবাসেন এবং বড়দিনের উৎসবের সময় তাদের নানা রকম উপহার দেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বত্র বড়দিন উদযাপনের আনন্দ যেন মানুষের মধ্যে সত্যিকার মানবতাকে জাগ্রত করে। মহামানব যিশু যে প্রেম, শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করেছেন তার যথার্থ প্রতিফলন যেন সবার জীবনে ঘটে। তাহলেই বড়দিনের উৎসব সবার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ২৫ ডিসেম্বর সরকারী ছুটির দিন পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও ২৫ ডিসেম্বর সরকারী ছুটির দিন। পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো এ দেশের খ্রীস্টান সম্প্রদায়ও বড়দিনের উৎসব পালন করছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মানুষের অবাধ ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। দেশের সব গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। গির্জাগুলোতে ক্রিসমাস ট্রি, গোশালায় মাতা মেরির কোলে শিশু যিশু এবং শিশুদের স্বপ্নপূরণের দেবদূত সান্তাক্লজ উপঢৌকন নিয়ে তৈরি থাকবেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে বিশেষ খাবারসহ উৎসবের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বড়দিনের উৎসব পালনকালে এ দেশের খ্রীস্টানরা যেমন শান্তি ও মানবতার কথা স্মরণ করেন, তা থেকে অন্য মানুষও নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করেন না। বলা যায়, সব ধর্মের মানুষ এই উৎসবের আনন্দের অংশীদার। প্রত্যেক ধর্মেরই মূল বাণী মানবতা। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম, প্রীতি ও শান্তির বাণী প্রচার করা হয়, তার মূলেও রয়েছে মানবতা। কোন ধর্মই এই বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বড়দিন মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দেশের সব মানুষ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় ব্রতী হবে- এই প্রত্যাশা বড়দিনে।
×