ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

প্রকাশিত: ১২:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

পায়ে নানা ধরনের আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকলেও আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায়ের তেমন একটা যতœ নিই না। তাই ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাছাড়া ডায়াবেটিসজনিত পায়ের সমস্যা যেমন ইনফেকশন, ক্ষত হওয়া, গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হবার একটা বড় কারণ। পায়ের সমস্যার প্রাদুর্ভাব * ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের ৩-৮%। * ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের ৩-৮%। * একবার ক্ষত হলে পরবর্তী ৫ বছরে ক্ষত হবার ঝুঁকি ৫০-৭০% বেড়ে যায়। * ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের পা কেটে ফেলার মতো সমস্যার ৮৫%-ই শুরু হয় ছোট ক্ষত দিয়ে শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটে ফেলার কারণগুলোর ভেতর ৫০-৭০%-ই হয় ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার কারণে। * ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ক্ষত শুকাতে ১০-১৪ সপ্তাহ সময় লাগে। তাছাড়া অন্যান্য যেসব কারণে পায়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেগুলো হলো * পায়ের জুতা সঠিক না হলে। * পায়ের যথেষ্ট যতœ না নিলে। * পায়ে আঘাত লাগলে। * ধূমপান/তামাক গ্রহণ করলে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পা নিচের যে কোন একটি বিদ্যমান থাকলে সেটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পা এবং সে ক্ষেত্রে বিশেষ যতœবান হতে হবে। * পায়ের রক্তচলাচল বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়া। * পায়ের অনুভূতি না থাকা বা কমে যাওয়া। * আকৃতিগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হওয়া। * পা নাড়াচাড়া করতে না পারা। * পায়ে পূর্বে কোন ক্ষত হয়ে থাকলে * পা আগে কোন কারণে কেটে ফেলা। ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের সাধারণ সমস্যা সমূহ * কর্ন/ক্যালাস * ফোস্কা পড়া * বুনিয়ন * ছত্রাকের আক্রমণ * কেটে যাওয়া * ক্ষত হওয়া * গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি পা পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ প্রতি ৩ মাস থেকে ১ বছর সময়ের ভেতর পায়ের বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করা জরুরী। * রং * তাপমাত্রা * ক্যালাস আছে কিনা * কোন হাড় বা জোড়ার অসামঞ্জস্য আছে কিনা। * ইনফেকশনের কোন লক্ষণ আছে কিনা। * অস্বাভাবিক গরম থাকা * লাল হয়ে যাওয়া * ফুলে যাওয়া * ব্যথা হওয়া * পুঁজ বা পানি বের হওয়া * রক্তক্ষরণ আছে কিনা। * পুরু নখ আছে কিনা। * আগে কোন ক্ষত বা কেটে ফেলা হয়েছে কিনা। * রক্ত চলাচল ঠিক আছে কিনা। * কম্পনের অনুভূতি ঠিক আছে কিনা। * গরম/ঠা-ার অনুভূতি ঠিক আছে কিনা। * পরিধান করা জুতা/স্যান্ডেল আদর্শ কিনা। নিজে পা পরীক্ষা * সম্ভব হলে প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করা, বিশেষ করে উপরের দিক, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে এবং পায়ের তলা ভালভাবে পরীক্ষা করা জরুরী। * অনুভব করা এবং খুঁজে দেখা- পায়ে কোন ক্ষত, ফোস্কা, ঘা, রঙ বদলে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া আছে কিনা। * পায়ের তলা দেখার জন্য প্রয়োজনে বন্ধু/পরিবারের অন্য সদস্য/আয়নার সাহায্য নেয়া যেতে পারে। পায়ের যতেœর উল্লেখযোগ্য বিষয় * পা কখনও শুকনো খস খসে রাখা যাবে না, প্রয়োজনে লোশন বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে হবে। * পায়ের আঙ্গুলের মাঝের জায়গাগুলো যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। * পায়ের নখগুলো খুব বেশি ছোট করা ঠিক নয়, বিশেষ করে নখের কোণা গভীর করে কাটা উচিত নয়। * বেশি গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা বা পরিষ্কার করা উচিত নয়। * কখনোই খালি পায়ে থাকা উচিত না। * জুতা অবশ্যই নরম, মাপমতো হওয়া জরুরী। * মোজা অবশ্যই সুতা বা উলের হওয়া উচিত এবং মোজার উপরের দিকের রাবার খুব বেশি টাইট হওয়া উচিত নয়। * নতুন জুতা কেনার সময় বিকেলের দিকে কেনা উচিত এবং অবশ্যই মোটা মোজা পরে সাইজ পরীক্ষা করা উচিত। * প্রথম দিনই দীর্ঘসময় নতুন জুতা পরে না থাকাই শ্রেয়। * পায়ে যে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। যে সকল উপসর্গ থাকলে জরুরী চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন * পায়ে ব্যথা হওয়া। * পা লাল হওলা বা রঙ পরিবর্তন হওয়া। * পা খুব গরম হয়ে যাওয়া। * পায়ে কোন রকম দুর্গন্ধ হওয়া। * পা থেকে কোন ধরনের রস নিঃসৃত হওয়া। * পায়ে ক্ষত বা ফোস্কা দেখা দেয়া। * অন্য যে কোন সমস্যা হওয়া। যা করা উচিত * প্রতিদিন পা পরীক্ষা করা। * সঠিক জুতা/স্যান্ডেল পরিধান করা। * জুতা অবশ্যই মোজাসহ পরিধান করা। * জুতা পরার আগে কোন লোহার টুকরা/ ইটের টুকরা আছে কিনা দেখা। * ধর্মীয় স্থান যেখানে খালি পায়ে হাঁটতে হবে সেখানে সকালের দিকে ভ্রমণ করা। * নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। যা করা উচিত নয় * খালি পায়ে কখনোই থাকা যাবে না, এমনকি ঘরের ভেতরেও না * সরু প্রান্ত বিশিষ্ট জুতা ব্যবহার করা। * নিজে নিজে কোন রকম ওষুধ দিয়ে বা বেড দিয়ে কর্ন/ক্যালাসের চিকিৎসা করা। * ধূমপান/তামাক খাওয়া। লেখক : এমবিবিএস, এমডি (এ্যান্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ) হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ০১৯১৯০০০০২২
×