ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেহেদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয় ঢাকার

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

মেহেদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয় ঢাকার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ তামিম ইকবাল আবার মাঠে ফিরলেন, ৪০ বলে ৩৪ রানের একটি সতর্ক ইনিংসও খেললেন। সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তামিমের ফেরার ম্যাচে তার দল ঢাকা প্লাটুন ৫ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে। তবে ঢাকার জয়ের নায়ক অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। পরে ব্যাট হাতে ২৯ বলে ২ চার, ৭ ছক্কায় ৫৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। ফলে প্রথম ব্যাট করে শ্রীলঙ্কার ওপেনার ভানুকা রাজাপাকসের ৬৫ বলে ৪ চার, ৭ ছক্কায় ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে কুমিল্লা ৩ উইকেটে ১৬০ রানের ইনিংস গড়ে। ঢাকা ১ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯.৫ ওভারে ১৬১ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয়। পঞ্চম ম্যাচে এটি তৃতীয় জয় ঢাকার, ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে এসেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সমান ম্যাচে তৃতীয় হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কুমিল্লার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। টস জিতে আগে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি। আগের ম্যাচে উভয় দলই হার দেখেছিল। তাই এদিন ছিল দুদলেরই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সেই ম্যাচে দলের অপরিহার্য ওপেনার তামিমকে পেয়েছেন মাশরাফি। ভাইরাল জ্বর আর কুঁচকির ব্যথায় ঢাকা পর্ব শেষে আর চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে আসতে পারেননি এই লোকাল হিরো। বেশ ছন্দে থাকা তামিমকে ছাড়া স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কাছে সর্বশেষ ম্যাচে ১৬ রানে হেরেছিল ঢাকা। তিনি ফেরায় বেশ স্বস্তিই ফেরে তাদের দলে। কুমিল্লাও নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের কাছেই ১৬ রানে হেরে যায়। জয়ে ফেরার দিনে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার সৌম্য সরকারকে (৬ বলে ১০) হারায় কুমিল্লা। মেহেদির অফস্পিনে বোল্ড হয়ে যান তিনি। মাশরাফির সঙ্গে বোলিং আক্রমণ শুরু করে প্রথম থেকেই কুমিল্লাকে চেপে ধরেছিলেন মেহেদি। দ্বিতীয় সাফল্যটাও তিনি এনে দেন ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। এবার সাব্বির রহমানকে (৭ বলে ০) শিকার করেন তিনি। তবে রাজাপাকসে অপর প্রান্তে বেশ সাবলীল ছিলেন। তার সঙ্গে ফর্মে থাকা ইংলিশ তারকা ডেভিড মালান ভাল একটি জুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু ২৪ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তারা। আর শুরুর ধাক্কায় পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পারে কুমিল্লা। মেহেদির একটানা মিতব্যয়ী বোলিংয়ে ১০ ওভারে কুমিল্লার দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬০। ৪ ওভারে মেহেদি মাত্র ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে শেষ করেন। মেহেদির স্পেল শেষ হওয়ার পর আর সেভাবে ঢাকার কোন বোলার সুবিধা করতে পারেননি। রাজাপাকসের সঙ্গে ইয়াসির আলী রাব্বি শেষ পর্যন্ত টেনেছেন দলকে। রাজাপাকসে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মারমুখী হলেও ইয়াসির ছিলেন একেবারেই শান্তশিষ্ট। দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে ৬৩ বলে ১০৩ রান যোগ করেছেন জুটিতে। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬০ রানের একটি মাঝারি সংগ্রহ পায় তারা। রাজাপাকসে সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও শেষ ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের দারুণ বোলিংয়ে তা করতে ব্যর্থ হন। তিনি টি২০-তে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে ৬৫ বলে ৪ চার, ৭ ছক্কায় ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ইয়াসির ২৭ বলে ২ চারে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন। কুমিল্লার দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই এনামুল হক বিজয়কে (০) হারিয়ে ধাক্কা খায় ঢাকা। এরপর তামিম বেশ সাবধানে ব্যাট চালিয়েছেন। তবে ওয়ানডাউনে নেমে ঝড় তোলেন বাংলাদেশের জার্সিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর এক টি২০ খেলা মেহেদি। ২৫ বছর বয়সী এ তরুণের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান পেয়ে যায় ঢাকা। জুটিটি ৮৩ রান যোগ করে মাত্র ৪৭ বল থেকে। মেহেদি যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতকের দেখা পান মাত্র ২২ বল খেলে। কুমিল্লার পেসার রবিউল ইসলাম রবির ওপরই সবচেয়ে বড় তা-ব বইয়ে দিয়েছেন তিনি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তার বল থেকে ২৮ রান তুলে নেন ৪ ছক্কা ও ১ চারে। ওই ওভারের শেষ চারটি বলেই ছক্কা হাঁকান তিনি। শেষ পর্যন্ত পেসার আলআমিন হোসেনের কাছে উইকেট দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ২৯ বলে ২ চার, ৭ ছক্কায় ৫৯ রান করেন তিনি। এরপর আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমানের জোড়া আঘাতে ম্যাচে ফিরে এসেছিল কুমিল্লা। তিনি ইনিংসের দশম ওভারের শেষ দুই বলে আসিফ আলী (০) ও জাকের আলীকে (০) সাজঘরে ফিরিয়েছেন। তবে ধীরস্থির তামিম আরও ৩৪ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল হকের সঙ্গে। তামিম ৪০ বলে ৪ চারে ৩৪ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন সৌম্যর মিডিয়াম পেসে। তখনও ঢাকার জিততে প্রয়োজন ছিল ২৭ বলে ৩৯ রান। এদিন ‘বুম বুম’ শহীদ আফ্রিদি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন কিছুটা। মুমিনুল ২৬ বলে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাত্র ১ চারে। আর আফ্রিদি মাত্র ১৬ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় হার না মানা ২৬ রান করলে ১ বল আগেই জয় পেয়ে যায় ঢাকা। শেষ ওভারে ৮ রানের প্রয়োজন ছিল, সৌম্যর করা ওভারটির প্রথম দুই বলে ১ রান আসলেও তৃতীয় বলে তাকে ছক্কা হাঁকান আফ্রিদি। আর তাতেই ১৯.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান তুলে নেয় ঢাকা। মুজিব ৪ ওভারে ১টি মেডেনসহ ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। স্কোর ॥ কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস- ১৬০/৩; ২০ ওভার (রাজাপাকসে ৯৬*, ইয়াসির ৩০*; মেহেদি ২/৯, শাদাব ১/৩২)। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ১৬১/৫; ১৯.৫ ওভার (মেহেদি ৫৯, তামিম ৩৪, মুমিনুল ২৮*, আফ্রিদি ২৬*; মুজিব ২/২২)। ফল ॥ ঢাকা প্লাটুন ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা॥ মেহেদি হাসান (ঢাকা প্লাটুন)।
×