ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলার নাট্যশালায় ভিন্ন ধারার দুই নাটকের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

শিল্পকলার নাট্যশালায় ভিন্ন ধারার দুই নাটকের প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেটোগানের দলের গল্পে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের প্রযোজনাটির শিরোনাম ‘আকাসে ফুইটেছে ফুল-লেটো কাহন’। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয়। অন্যদিকে দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানবিক ও বোধশক্তি লুপ্ত হওয়ার ঘটনাময় নাটক ‘বোধ’। সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার প্রযোজিত নাটকটিও সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলার নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়। ‘আকাসে ফুইটেছে ফুল-লেটো কাহন’ নাটকটি সম্প্রতি মঞ্চে এনেছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন। রতন সিদ্দিকীর রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। নাটকের গল্পে দেখা যায়, একটি লেটো গানের দল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে চুরুলিয়া-আসানসোল। এই সুদিনের মাঝেই একদিন ঘোষিত হয় বঙ্গভঙ্গ। বিভক্ত হয় বাংলা। জন্ম হয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের। ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে ও বিরোধে জড়িয়ে যায় বাঙালী হিন্দু-মুসলমান। বিষাক্ত হয়ে ওঠে কলকাতা, ঢাকা, বর্ধমান। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত হাজার বছরের বাঙালী বিস্মিত। ১৯১১ সালে প্রাণান্তকর চেষ্টায় রহিত হয় বঙ্গভঙ্গ। বয়ে যায় স্বস্তির বাতাস। কিন্তু ততদিনে গায়কের অভাবে বিলুপ্ত হতে বসেছে লেটোর দল। এমন ক্রান্তিকালে লেটোর দলে যুক্ত হন চুরুলিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে দুখু মিয়া। তার গায়কি দক্ষতায় পুনরায় জেগে ওঠে লেটোর দল মেতে ওঠে চুরুলিয়া-আসানসোলের প্রান্তিক মানুষ। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন হাবিব বাহার, জুয়েল জহুর, হৃদি হক, সুমন আহমেদ, আসিব চৌধুরী, সুতপা বড়ুয়া প্রমুখ। আলোক পরিকল্পনা করেছেন ইসরাত নিশাত। পোশাক পরিকল্পনায় করেছেন আইরিন পারভিন লোপা। নৃত্যভঙ্গি পরিকল্পনায় করেছেন রায়হানুল আলম। বর্ণ বাদল আবহসঙ্গীতে আলোক পরিকল্পনা করেছেন পবন আহমেদ। সংলাপ গ্রুপ থিয়েটারের ২৬তম প্রযোজনা বোধ। মুন্সী প্রেমচাঁদের গল্প অবলম্বনে নাট্যরূপ দিয়েছেন স্বপন দাস। নির্দেশনা রয়েছেন মোস্তফা হীরা। নাটকের কাহিনীতে একটি বোধহীন সমাজ ব্যবস্থায় পিতা ঘিসু এবং পুত্র মেধো বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পর্যুদস্ত। ক্ষুধা তাদের করে তোলে অমানবিক ও স্বার্থপর। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সম্পর্কের বন্ধন কোন কার্যকর ভূমিকা রাখে না তাদের জীবনে। সামান্য কয়েকটি সিদ্ধ আলু নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় পিতা-পুত্র। নিজের সন্তান সম্ভবা পুত্রবধূর অতিসামান্য খাদ্য কেড়ে নিতে ঘিসু উদ্বুদ্ধ করে পুত্র মেধোকে। মেধোও বোধহীন এক জন্তুর মতো কেড়ে নেয় বধূর সেই সামান্য খাবার। ক্ষুধা তাদের এমনভাবে তাড়িত করে যে, নিজের পুত্রবধূকে মৃত ঘোষণা দিয়ে কিছু পয়সা পাবার লোভ সামলাতে পারে না ঘিসু। পুত্র মেধোও তা সমর্থন করে। যে কোনভাবে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অথচ কেন তারা আজ দরিদ্র, কেন তারা বৈষম্যের শিকার-এ নিয়ে ভাবে না তারা। সবকিছু ছেড়ে দেয় নিয়তির ওপর। নাটকের শেষ দৃশ্যে স্বপ্নের ঘোরে ঘিসু-মেধোকে দ্রোহী হতে দেখা যায়। ঘেন্না করে এই সমাজ ও সমাজপতিদের। মেধো তার সন্তানকে বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোঃ হাবীবুর রহমান, মাইনুল ইসলাম, নাঈমা তালুকদার বন্যা, ওয়ালিদ আহমাদ চৌধুরী ও মাসুদ আলম বাবু।
×