ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়

কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা কারবার

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা কারবার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বিদেশী পর্যটক তরুণী ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনার চারদিনের মাথায় ইয়াবা সেবনে মেধাবী ছাত্রীর অকাল মৃত্যুর ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে অভিজ্ঞ মহলকে। সোমবার রাতে হিমছড়ির ‘গুডভিবে’ কটেজ ও শুক্রবার রাতে কলাতলী হোটেল জামানের কক্ষে এই দু’টি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হিমছড়ি থেকে হোটেল মালিকসহ তিনজন ও ঢাকার এক পর্যটককে আটক করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হোটেল ব্যবসার ছদ্মাবরণে ইয়াবা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর হোটেল-কটেজ মালিক। ইয়াবা সেবনে ছাত্রীর মৃত্যু ঘটনায় তোলপাড় চলছে। জানা যায়, কিছু হোটেল-মোটেল ও কটেজ মালিক কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে অতি মুনাফা অর্জনের ধান্ধায় লিপ্ত রয়েছে। বিদেশী, রোহিঙ্গা ও সন্দেহজনক অপরিচিত ব্যক্তিদের হোটেলে কক্ষ ভাড়া দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। তবে এক শ্রেণীর লোভী ব্যবসায়ী ওই নিয়ম উপেক্ষা করে চলেছে। হোটেল-মোটেল জোনে হোটেল ও কটেজগুলোতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা ও রোহিঙ্গা নারী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হোটেল ও কটেজ পরিচালকদের টার্গেট। দিনদুপুরেই নির্বিঘেœ কলাতলী ও হিমছড়িতে হোটেল কটেজগুলোর রুমে রুমে বসে ইয়াবা সেবনের আসর। চলে রোহিঙ্গা রমণীদের নিয়ে আমোদফুর্তি। ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানায়, অস্ট্রেলীয় তরুণী ধর্ষণ প্রচেষ্টাস্থল হিমছড়িতে স্থাপিত ‘গুডভিবে’ নামে কটেজটির কোন ধরনের অনুমোদন নেই। শামীমুল হক ওরফে স্যাম নামের এক ব্যক্তি অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে। প্রশাসনকে জানানো তো দূরের কথা, সেখানে চলাচলের পথও নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশী পর্যটক নিয়ে আসা হতো ওই আলোচিত কটেজে। অন্ধকার জগতের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ঐ কটেজটিতে এসব অপকর্ম ঘটার কারণে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, ট্যুর অপারেট মালিক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ক সম্প্রতি অনুষ্টিত এক সভায় তিনি (স্যাম) এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইনানী, হিমছড়ি, হোটেল-মোটেল জোন এবং সৈকতের পশ্চিম অংশে জোরদার করা হবে পুলিশি ব্যবস্থা। যাতে পর্যটক বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের বিচরণ স্থল সুরক্ষিত থাকে। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এসপি জিললুর বলেন, কোন কটেজে বিদেশী নাগরিক রাতযাপন করলে পুলিশকে জানাতে হয়। কিন্তু গুডভিভেসহ অধিকাংশ কটেজই এই নিয়ম মেনে চলছে না। এসব কটেজে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেখানে-সেখানে কটেজ করতে দেয়া যাবে না। মালিক, ম্যানেজার কিংবা কর্মচারীদের বিস্তারিত ডাটাবেজ প্রশাসনের হাতে জমা থাকতে হবে। না হলে অপরাধ বাড়বে। ইতোমধ্যে অনিরাপদ জায়গায় যে সমস্ত কটেজ বা আবাসিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পর্যটক রাখলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদেশী পর্যটক থাকার মতো পরিবেশ আছে কিনা তা আমরা সার্টিফাই করব। এরপর এ সকল স্থানে বিদেশী পর্যটক রাখতে পারবে। বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় কটেজ, হোটেল ইত্যাদি আবাসিক প্রতিষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। এলাকার লোকজন বলছেন, কুমিল্লার আনিসুল হক সোহাগ মোরমেইড রিসোর্টের মালিক কক্সবাজারে এসে কটেজ ব্যবসা শুরু করে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পেঁচারদ্বীপ এলাকায় বিশাল খাস জমি দখল করে বেশ ক’টি কটেজ নির্মাণ করে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যান। ব্যবসা আরও বড় পরিসরে চালিয়ে যেতে নিয়ে আসেন তার দুই সহোদরকে। পেঁচারদ্বীপ এলাকায় কমপক্ষে ২ একরের বেশি সরকারী খাস জমি দখল করে ওইসব কটেজ নির্মাণ করেছেন তিন সহোদর। জেলা প্রশাসক (রাজস্ব উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারের নেতৃত্বে সম্প্রতি এক একর সরকারী খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করে বিদেশী নারী-পুরুষদের তার কটেজে রাত্রিযাপন করতে আকৃষ্ট করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার নারী পর্যটককে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অনেকে আনিসুল হক সোহাগকে গ্রেফতারের দাবি জানান। সোহাগ পর্যটন স্পট রামুর পেঁচার দ্বীপ এলাকায় খাতিয়ানভুক্ত জমির পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারী খাস জমি দখলে রেখে কটেজ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার দেখাদেখিতে কলাতলী, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী এলাকায় কটেজ ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। ওইসব কটেজ ব্যবসায় সরকারের কোন ধরনের অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।
×