ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্য জানুয়ারিতে ছড়িয়ে পড়বে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলে

শীতকাবু মানুষের রোদের সঙ্গে মিতালি

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

শীতকাবু মানুষের রোদের সঙ্গে মিতালি

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ সূর্যব্রতের মতোই ছিল সোমবারের সকালটি। আগের দিনে যারা সকালের অনেকটা সময় লেপমুড়ি দিয়ে বিছানায় ছিলেন এদিন বাতায়নে রোদের উঁকিতে লাফিয়ে ওঠেন। আহাউহুঁ করতে করতেই চাদর জড়িয়ে কেউ নামে পথে। কেউ পূর্বদুয়ারি বাড়ির ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আহা! শৈত্যপ্রবাহকে খেদিয়ে কতদিন পর রোদ উঠল। রোদ মানেই সূর্যের জয়। সেই জয়ে সূর্যব্রত নিল শীতকাবু মানুষ। যতক্ষণ রোদ ততক্ষণ মিতালি। ওদিকে মুখ বেজার করে থাকা কুয়াশা ঘোঁট পাকাতে থাকে। শুরু হয় রোদ- কুয়াশার অসম লড়াই। শীতের কুয়াশাও ধরনীতে নেমে আসা এক ধরনের মেঘ। রোদবন্দীর এই খেলায় তাপমাত্রার ওঠানামা। উর্ধাকাশে জলীয়বাষ্পের হার বেড়ে গিয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক শূন্য ৬ ডিগ্রী কম। এই তাপমাত্রায় শীত আরও বেশি অনুভূত হওয়ার কথা। তা হয়নি। সূর্যের আলো বেশি পড়ে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান খুব কম হওয়া। বগুড়া অঞ্চলে এই ব্যবধান কমেছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য স্বাভাবিক নেই। গত শীত মৌসুম পৌষে এত তীব্র শীত ছিল না। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে এবারের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। আবহাওয়া বিভাগের কথা, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ বইবে। যার স্থায়িত্ব হবে ৫ থেকে ৭ দিন। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশার পরিবর্তন হবে না। আরও ঘন হয়ে দৃষ্টিসীমা কমে আসবে। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা জানালেন, উর্ধাকাশে উচ্চচাপ বলয়ের কারণে জলীয়বাষ্প বেড়েছে। তার সঙ্গে নেপাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার হয়ে বাংলাদেশে কুয়াশার বলয় সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চচাপ ও কুয়াশার বলয় এতটাই সক্রিয় যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান বাড়ছে না। ব্যবধান দুই থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। যে কারণে উত্তরবঙ্গের শীতকাবু মানুষকে সইতে হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহের থাবা। মধ্য জানুয়ারিতে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শীতের বায়ুর দাপট গিয়ে পড়বে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলে পৌষ শেষের এই থাবা টেনে নিয়ে যাবে মাঘ পর্যন্ত। এই সময় ঘন কুয়াশার আস্তরণ দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দেবে। সড়ক ও নৌপথে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে বেশি। আকাশপথে বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণে সিডিউল ঠিক থাকছে না। গ্রাম ও শহরে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যন্ত। সকালে ঘর থেকে বের হলেই মনে হয় বিকেল। শীতের থাবায় লোকজন সন্ধ্যার পরই ঘরে ফিরছে। অসুবিধায় পড়েছে কৃষক। তীব্র শীতে জমিতে চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। তারপরও অনেক কৃষক বোরো চারা রোপণ করছে। কৃষি বিভাগ অবশ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বোরো চারা রোপণের সময়। তীব্র শীতে চারা রোপণ করলে ধানের শিকড়ের বাড়ন্ত অনেক কমে যায়। ঘন কুয়াশায় জমিতে যে আস্তরণ পড়ে তা কোল্ড ইনজুরি। কৃষি বিভাগ অবশ্য কিছুটা স্বস্তির খবরও দিয়েছে। শীতের স্বাভাবিক আচরণে শীতকালীন গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু ও চায়ের উৎপাদন ভাল হয়। শীতের কাপড়ের বেচাকেনা বেড়েছে। বগুড়ার হকার্স মার্কেটে বেচাকেনা বেশি। বাংলা সনের মাঘ শীত ঋতুর শেষ মাস। মাঘ নামটি এসেছে মঘা নক্ষত্রের সূর্যের অবস্থান মাঘা থেকে। বহু আগে কবি পি বি শেলী লিখেছেন ‘ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড (শীত আসলে বসন্ত কি খুব দূরে)। একবিংশ শতকের পৃথিবী শেলীর কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। শুধু যোগ হয়েছে ‘জলবায়ুর পরিবর্তন’। ব্রিটিশ কবি এডিথ সিটওয়ে লিখেছেন- শীত হলো স্বাচ্ছন্দ্য ও ভাল খাবারের সময়। আগুনের পাশে বসে উষ্ণতায় গল্প করার সময়। দ্রুত ঘরে ফেরার সময়। তিনি ভাল খাবারের কথা বলেছেন। বাঙালীর প্রেক্ষাপটে শীতে যে কত বাহারি পিঠা। ভাল খাবার তৈরি হয় শীত মৌসুমেই। চড়ুইভাতিতে (বনভোজানে) তো আরও বেশি।
×