ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

ঢাকা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সব দল তৎপর

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সব দল তৎপর

শাহীন রহমান ॥ সিটি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎই পাল্টাতে শুরু করেছে নগরের দৃশ্যপট। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সাধারণ ভোটারদের ভাবনা চিন্তা এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে। তারাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কারা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। জয় পরাজয়ে হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন এখন থেকেই। এদিকে দলগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রার্থী বাছাই নিয়ে শুরু হয়েছে নড়াচড়া। তফসিল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ভোট নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সবাইকে আসার জন্য বলছি। আশা করি উৎসবমুখর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এদিকে নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং দলটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও এর আগে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও পরবর্তী উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচন তারা বর্জন করে। এরপর দেশে বড় ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রায় দীর্ঘ এক বছর পর আবারও সিটি নির্বাচনের তফসিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। প্রার্থী বাছাইও আগেই সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা দুই সিটির নির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকন এবং মোঃ আতিকুল ইসলামও ইতোমধ্যে পুনরায় প্রার্থী হওয়া প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করেন তারা। অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, পাঁচ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। সব সময় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। সিটিতে উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের সামর্থ্য আছে। দল থেকে আবারও মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা আছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে মেয়রের দায়িত্বে আছি। এই অল্প সময়ের মধ্যে যতটুকু পেরেছি, অভিজ্ঞতা নিয়েছি। এখন এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সময়। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ আমাকে আবার মনোনয়ন দেবে। এদিকে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে আগামী ২৫ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হবে। একই সঙ্গে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের আহ্বান করা হয়েছে। এদিকে জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। আনুষ্ঠানিক না জানালেও জানা গেছে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ এম আউয়ালের নাম অনেকটা চূড়ান্ত। গত নির্বাচনেও বিএনপির পক্ষ থেকে এই সিটিতে তাবিথ এম আউয়ালকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এরপর উত্তরের মেয়র আনিসুল হকে মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হলে দ্বিতীয় দফায়ও তাবিথ এম আউয়ালকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু আইনী জটিলায় সেই নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যায়। একাদশ নির্বাচনের পর এই বছরে শুরুতে উত্তর সিটিতে উপনির্বাচনে আইনী বাধা কেটে গেলে আবারও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তারা ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচন বর্জন করে। ফলে অনেকটা একপক্ষীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। অপরদিকে ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিএনপি প্রার্থী ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নির্বাচনে চলাকালে ওই বছরের ২৮ এপ্রিল নির্বাচন চলাকালে হঠাৎ করেই বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। ফলে দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন। তবে জানা গেছে, এবার দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন দল থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন। তার প্রার্থিতা অনেকটাই চূড়ান্ত করে রেখেছে বিএনপি। উত্তরের তাবিথ এম আউয়াল এবং দক্ষিণে ইশরাক হোনেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও দল থেকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩১ ডিসেম্বরের আগেই তাদের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আজ থেকে দলটির প্রার্থী বাছাই করা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দলটির চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি এবং ঢাকা সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মাঠে থাকবে। আজ মঙ্গলবার থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জোট করার প্রস্তাব এলে জাতীয় পার্টি তা বিবেচনা করবে। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ঢাকা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দলীয় ভিত্তিতে। ফলে দলের পক্ষে কে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন তা সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে আগে ঠিক করে মনোনয়ন দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। ঢাকার দুই সিটির গত নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীর বাইরেও যে কেউ মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। কেবল মাত্র ইসির নিবন্ধতি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিকক দলের প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট দল থেকে আগে মনোনয়ন নিতে হবে। কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে কোন দল থেকে মেয়র পদে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া যাবে না। কোন দল যদি একাধিক প্রার্থীকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে। অপরদিকে ইসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ৩শ’ ভোটারের সমর্থনযুক্ত নমুনা স্বাক্ষরের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। তবে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোপূর্বে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার জন্য ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত কোন তালিকা দাখিলের প্রয়োজন নেই। এর বাইরে ঢাকা সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচন আগের মতো নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি। এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ২৫টি। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। আইনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভিত্তিতে ভোটের কথা বলা হলে মূলত সেখানেও রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। কাউন্সিলল পদের প্রার্থীর দলীয় প্রতীক না থাকলেও নির্বাচন ঠিকই দলীয় ভিত্তিতেই হবে। গত রবিবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দুই সিটি নির্বাচন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।
×