ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো প্রাথমিক বিদ্যালয়

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ কথা ছিল একটি পতাকা পেলে পাতাকুড়ানি মেয়ে শীতের সকালে ওম নেবে জাতীয় সঙ্গীত শুনে পাতার মর্মরে। কথা ছিল একটি পতাকা পেলে ভূমিহীন মনু মিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জৈষ্ঠে-বৈশাখে, বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসম্মানে সাদা দুধে ভাতে। তারুণ্যের কবি হেলাল হাফিজ তাঁর ‘একটি পতাকা পেলে’ কবিতায় জাতীয় পতাকার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। আমাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, ছড়া। ‘...একটি পতাকার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম বুলেটের সামনে পেতে দেয়া বুক, একটি স্বাধীন ভূমির জন্য ধর্ষিতা বোনের কালিমা লিপ্ত মুখ। জানিয়ে দাও তোমার স্বাধীনতার কথা জানিয়ে দাও তোমার ইতিহাস গৌরব মাখা।’ কথাগুলো বলছিলেন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আওলাজোড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত লাল-সবুজের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জাতীয় পতাকার আদলে সজ্জিত করা হয়েছে উপজেলার দুই শতাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি খুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা-ভালবাসা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এর ফলে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহও বেড়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে মোট ২৬০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন ও মেরামতের সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে লাল-সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে বিদ্যালয় ভবনগুলো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাইরুল্লাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমছলন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরআলগী নয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাইথল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুই শতাধিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকার রঙের আদলে সাজানো হয়েছে। জাতীয় পতাকার চতুর্ভুজে সবুজ রং বাংলাদেশের প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক। বৃত্তের লাল রং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বহন করে। এজন্য ওই বিদ্যালয় ভবনগুলো দেখে মনে হয় একেকটি স্কুল যেন একখ- লাল-সবুজের বাংলাদেশ। গফরগাঁও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেলিম ও খায়রুল্লাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে লাল-সবুজ রঙে সাজানোর জন্য আমাদের প্রতি মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণে আমরা বিদ্যালয়গুলো নতুন করে সাজিয়েছি। জাতীয় পতাকার আদলে রং করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা আরও বাড়বে বলে জানান সান্দিয়াইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গফরগাঁও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ভেতরে করা হয়েছে ফুলের ছোট ছোট বাগান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি স্কুলে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পুষ্প কানন, বঙ্গবন্ধু কর্নার। বাগান এবং কর্নারের কারণে স্কুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণ। ইসলামিয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আসিফা আফরোজা পুনম বলেন, নতুন সাজে সজ্জিত বিদ্যালয় পেয়ে শিশু-কিশোররা নিয়মিত স্কুলে আসে ও নতুন সাজে আনন্দে মেতে ওঠে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও বেড়েছে বাচ্চাদের। বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘আগে আমাদের স্কুলটি দেখতে ভাল লাগতো না, এখন ভাল লাগে। তাই স্কুলে এসে আমরা ঠিকমতো পড়ালেখা করছি। নতুন রং করার পর এখন স্কুলে আসতে ভাল লাগে। স্কুলে যে রং করা হয়েছে সেই রং আমরা জাতীয় পতাকায় দেখি’। গফরগাঁও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সবুজ মিয়া জানান, স্কুল ভবনগুলো মেরামত করা হয় সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে। যেহেতু বিদ্যালয় ভবনগুলো রং করতেই হবে, সেজন্য আমরা জাতীয় পতাকার আদলে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছি। দুই শতাধিক বিদ্যালয় লাল-সবুজে সাজানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয় এভাবে রাঙানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, লাল-সবুজের রঙে জাতীয় পতাকার আদলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো রং করায় ছোট ছোট শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত হচ্ছে। হঠাৎ কেউ দেখলেই মনে হবে এ যেন ছোট্ট একখ- বাংলাদেশ।
×