ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেসিক ব্যাংকের বেতন কমিয়ে দেয়ায় দিনভর বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বেসিক ব্যাংকের বেতন কমিয়ে দেয়ায় দিনভর বিক্ষোভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিল এবং রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকের সব কর্মকর্তার বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। রবিবার ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি জারি করা হয়। চিঠিটি ব্যাংকটির সব শাখার প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে কর্মকর্তাদের বেতন কমানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ খোলা নেই। এখন ব্যয় কমানো ছাড়া ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’ চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক বিগত সাত বছর ধরে ক্রমাগত লোকসানে থাকায় ২০১৩ সালের প্রবর্তিত ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুবিধাদি বাতিল করা হলো। এই সিদ্ধান্ত রবিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হলো। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিগত সাতবছর লোকসান হওয়ায় আগের মতো বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের তুলনায় অত্যাধিক বেতন ভাতা চালু আছে বেসিক ব্যাংকে। এই অতিরিক্ত বেতন ভাতা ব্যাংকের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন থেকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ‘চাকরি (ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫’ এর অনুরূপ কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাবেন। ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের বেতন কাঠামো বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধাদি পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রদান করা হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৪৮৭তম সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এদিকে, বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন-কাঠামো বহাল রাখার দাবিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আলমকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এ সময় ব্যাংকের এমডি’র কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বহাল রাখার দাবি জানান তারা। ফলে সাড়ে ৫ ঘণ্টা নিজের কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন রফিকুল আলম। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অবরোধ তুলে নিলেও সন্ধ্যা ৬টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রফিকুল আলম ব্যাংকেই অবস্থান করছেন এবং দফায় দফায় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোতে বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকটি বড় ধরনের লোকসানে থাকার কারণে বিদ্যমান কাঠামোতে বেতন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই বেসিক ব্যাংকের বর্ধিত বেতন কাঠামো বাতিল করা হয়েছে। এখন আন্দোলন করলে কী হবে? এমডি’র পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হবে না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দেখেই তারা এই ব্যাংকে চাকরি শুরু করেছিলেন। এখন বেতন কমানো অযৌক্তিক। কোন কারণ দেখিয়েই বেতন কমিয়ে দেয়া যায় না। কম বেতন হলে তারা এই ব্যাংকে চাকরিই করতেন না বলেও উল্লেখ করেন অনেকে। তাই স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বহাল ও নতুন অফিস আদেশ বাতিলের দাবিতে এমডিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বলেও জানান তারা। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটি লোকসানে পড়েছে। তাই এর দায়ভার আমরা কেন নেব?’ গত ১১ ডিসেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত জানার পর সোমবার সকালে ব্যাংকটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিস আদেশ বাতিল করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
×