ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন নয় পুরনো অভিজ্ঞদের ওপরই আস্থা শেখ হাসিনার

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 নতুন নয় পুরনো অভিজ্ঞদের ওপরই আস্থা শেখ হাসিনার

উত্তম চক্রবর্তী ॥ সাঙ্গ হলো মিলনমেলা। প্রবীণ দল আওয়ামী লীগ যে যথেষ্ট প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ তার পরিচয় মিলেছে সদ্যসমাপ্ত সুশৃঙ্খল কাউন্সিলে। অনেকটাই ‘রাজসিক’ আওয়ামী লীগের জাতীয় এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল, কতটুকুই বা অর্জিত হয়েছে, কেমন হলো নতুন নেতৃত্ব- এ নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে বিরোধী পক্ষও অকপটে স্বীকার করেছেন আগামীর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অটুট রাখা এবং সরকার থেকে দলকে যতটা সম্ভব আলাদা রাখতে শুধু নতুন নয়, সম্মেলনে পুরনো অভিজ্ঞ-নেতাদের ওপরই আস্থা রেখেছেন সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে উন্নয়নের সোপানে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল অধিবেশনেও তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা, অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেয়া ও ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দলীয় স্বার্থে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনে তৃণমূল নেতাদের সামনে দলীয় সভাপতির স্পষ্ট বার্তাই এবারের সম্মেলনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া দলকে যতটা সম্ভব মন্ত্রিসভার বাইরে রাখা, অতীত ত্যাগের কথা বিবেচনায় নিয়ে বয়স ও অসুস্থতা সত্ত্বেও কাউকে বাদ না দেয়া আর সাংগঠনিক দক্ষতার কথা বিবেচনা করে আগের কমিটির কিছু নেতাকে পদোন্নতি বা দায়িত্বের পরিবর্তনও ক্ষমতাসীন দলটির ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এক কথায়, আগামী দিনের সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ’২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বছরব্যাপী প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বর্ণাঢ্য ‘মুজিববর্ষ’ পালনে দল ঢেলে সাজানো ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং সারাদেশে ছুটে ছুটে দলকে শক্তিশালী করতে পারে, এমন নেতাদেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে তিনি পুরনো অভিজ্ঞ নেতাদের ওপরই আস্থা ও ভরসা রেখেছেন। তিনি এমন নেতাদের বেছে নিয়েছেন যাঁদের সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, কর্মীদের পাশে থাকার মানসিকতা আছে। যা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দলকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে খুবই জরুরী। এ বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আওয়ামী লীগের সামনে এখন অনেক কাজ বাকি। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেগুলো মোকাবেলায় এক হয়ে কাজ করতে হবে। দলের প্রতিটি পর্যায়ে দূষিত রক্ত বের করে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করা হবে। আমরা স্ট্রং টিম লাইন স্পিরিটে টিমওয়ার্ক গড়ে তুলব। স্মার্ট ও আধুনিক আওয়ামী লীগ গড়ে তুলব। দল থেকে সরকারকে আলাদা করতেই কী কিছু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে ছিল যাদের নেত্রী ভারবাহী করতে চাননি, যাদের মন্ত্রিত্ব আছে, তেমন অনেকেই হয়ত দায়িত্বের পরিবর্তন এবার হবে। এবারের আওয়ামী লীগের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় ছিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাচন। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর অধিকাংশই পূরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোন ক্ষোভ বা হতাশা দেখা যায়নি। এ দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর পদ-পদবি নিয়ে হাঙ্গামা-হুজ্জুতি নতুন কিছু নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তার ন্যূনতম আঁচড় পড়েনি। সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর- ডেলিগেট সভাপতির প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছেন, গঠিত কমিটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিজ নিজ এলাকায় দল শক্তিশালী করে গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে ফিরে গেছেন। এটি দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা, উদারতা ও গণতন্ত্রের ভিত্তিরই বড় প্রমাণ বলেও অনেকে মনে করছেন। সম্মেলনে চমক আসছে- এমন বক্তব্য শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে তেমন বড় ধরনের কোন চমক দেখা যায়নি। দ্বিতীয় অধিবেশনে যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়, তাতে বড় রকমের কোন রদবদলও চোখে পড়েনি। বরং পুরনোরাই ঘুরেফিরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে এসেছেন। দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডেও পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে সম্মেলন ঘিরে যে আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল, কমিটি ঘোষণার পর কাউন্সিলরদের মধ্যে বাড়তি কোন ক্ষোভ বা অসন্তোষ দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের বিগত প্রায় ১২ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে তৃণমূল থেকে আসা দু’জন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানে ইতিহাস-ঐতিহ্য, উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সংমিশ্রণ আর টান টান উত্তেজনা। কমিটি ঘোষণার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এবারও ছিল টান টান উত্তেজনা। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর সবকিছু যেন গতানুগতিক ধারায় স্বাভাবিক রূপ নিল। বিগত কাউন্সিলগুলোয় দলীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দল অবসানে তৃণমূল নেতাদের ছিল কড়া বক্তব্য। কিন্তু এবার তাও দেখা যায়নি। পুরনো ও অভিজ্ঞ নেতাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বহাল রাখায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেছেন তাঁরা বেশ জোরালো কণ্ঠেই। শেষ পর্যন্ত চমকহীন সম্মেলন হলেও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সদস্য পদে সাবেক মন্ত্রী ও পরিবহন সেক্টরের নেতা শাজাহান খানের অন্তর্ভুক্তিকে অনেকে চমক হিসেবেই দেখছেন। বিগত কোন কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন না তিনি। তাকে একধাপে সর্বোচ্চ ফোরামের সদস্য ঘোষণার পর অনেক কাউন্সিলরকে অবাকই হতে দেখা যায়। অনেকেই মনে করছেন, এই কমিটির একমাত্র চমকই হচ্ছেন শাজাহান খান। মাদারীপুরের রাজনীতির নানা মেরুকরণ থেকেই তাকে আনা হয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। শাজাহান খান ছাড়াও এবারের নতুন কমিটিতে আরেকজন নতুন মুখ হচ্ছেন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি এবার বর্তমান প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার পরিবর্তে মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো কাদের, কেন বেছে নেয়া হলো? এবারের সম্মেলনে প্রধান আকর্ষণই ছিল কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক? এক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বেশ কয়েক ত্যাগী ও সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞদের নাম ফলাও করে প্রচার ও উচ্চারিত হয়েছে। তবে প্রথম থেকেই সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। শেষ পর্যন্ত সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রানিংমেট হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেন নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠের নেতাদের যোগাযোগ কমে গেছে, সরকারের মধ্যে দল বিলীন হওয়ার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের একধরনের দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এই দূরত্ব ঘোচানোর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ সম্পাদকের। এ কারণেই হয়ত সাধারণ সম্পাদক পদে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। তাঁদের মতে, নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কমবেশি সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। গত মেয়াদে জেলা সফর, ইউনিয়ন-পৌর-উপজেলা নির্বাচন পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকাও পালন করেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের অধিকাংশ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে জয়লাভ করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের সারাদেশের দলীয় সাংগঠনিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র জানতে পেরেছেন। আগামী দিনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ওবায়দুল কাদেরের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেই তাঁকে দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। দু’একদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি টানা নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী তিন বছরের জন্য নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাউন্সিলরদের মতামত ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ৪২ নেতার নাম ঘোষণা করেন। তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক, কয়েকটি সম্পাদকমন্ডলী এবং সদস্য পদসহ এখনও ৩৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় নবনির্বাচিত সভাপতিমন্ডলীর এক সভা ডেকেছেন। গণভবনে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকেই বাকি শূন্য পদগুলো পূরণ করে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। বড় বড় পদে কোন চমক না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্যপদে বেশ কিছু চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে একঝাঁক তরুণ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে। এছাড়া প্রথম দফায় ঘোষিত আংশিক কমিটিতে বাদ পড়া কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্যে কিছু নতুন মুখ আসবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সভাপতিমন্ডলীর সভায় আলোচনা করেই সদস্যপদসহ শূন্য পদগুলো পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ১০ মার্চের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন করে ফেলব। সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলব। গণভবনে কাউন্সিলরদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময় ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সরকারের প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যায় একবার একজন এমপি হয়ে গেলে পরের বার আর জয়লাভ করতে পারে না। কারণ সে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারে না। অনেক টাকা হলেও নির্বাচনে জিততে পারেন না।’ ‘কাজেই জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে’। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রবিবার সন্ধ্যায় তার সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কাউন্সিলরদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে পর পর ৯ম বারের মতো এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বড় নেতা আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় আর স্লোগান দেয় আমি জিতে যাব। নির্বাচন কিন্তু তা নয়। অংকের মতো বের করা যায়, কার পজিশন কি। এবারের নির্বাচনে আমরা সেটাই করেছি। তিনি বলেন, নিজেরা পুরো হিসেব নেয়ার পর একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়েও জরিপ করানো হয় প্রত্যেক এলাকায়। এভাবে হিসেব করতে হয়। এটা আমাদের দলের সব নেতা-কর্মীর মাথায় রাখা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে মানুষের কাছে বেশি যেতে পারছেন, কে মানুষের বেশি আস্থা অর্জন করতে পারছেন, কে ভোট আনতে পারবেন এটা একেবারে অংকের মতো হিসেবের ব্যাপার। নির্বাচন করা একটা অংকের মতো হিসাব। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারেক জিয়া খুব গর্ব করে বলতো দুই হাজার কোটি টাকা যদি সে বানাতে পারে জীবনেও বিএনপিকে আর ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। অথচ পাঁচ হাজার কোটি টাকার উপরে বানিয়েও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘তাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন সবকছু মিলিয়েই ইমার্জেন্সি আসে। পরে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল’। শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই কথা বার বার বলি, কারণ অনেকেই ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপি এত কম আসন পেল! অথচ বিএনপি তাদের মেয়াদ পেরিয়েই ২০০৮ সালের নির্বাচনে পেল ২৯টি আসন। আবার বিরোধী দলে থাকতে আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে বিএনপি’র মানুষের ওপর সেই অত্যাচার-নির্যাতন-দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং জনগণের সেই বিভীষিকাময় অবস্থা, এতকিছুর পর তাদের জনগণ ভোট কেন দেবে? আর তারা তো জয়লাভের জন্য নির্বাচন করেনি, মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। আসন প্রতি দুই-তিনটা করে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এনাম আহমেদ চৌধুরী এবং মোরশেদ খানের কাছে অবস্থানকারী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ দাবির অভিযোগ তার কাছে এসেছে’। তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনে বাণিজ্য, পুরানা পল্টনে বাণিজ্য, গুলশানে বাণিজ্য-তিন বাণিজ্যে তিনরকম প্রার্থী দিয়ে তারা হেরে এখন গালি দেয় আমাদের। তারা অপপ্রচার চালায়, আর কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা একথাই বলার চেষ্টা করে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল থেকে যে এদেশে গুম, খুন, হত্যা নির্যাতন শুরু- তা যেন অনেকেই ভুলে গেছেন। এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখা উচিত এইজন্য যাতে করে ভবিষ্যতে আমাদের আর ওই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন আমরা খুব উন্নয়ন করেছি বলেই সবাই যে একদম ঢেলে ভোট দেবে তা নয়, আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি সে কথা বার বার মানুষকে বলতে হবে।’ তিনি বলেন, মানুষ সুখ পেলে দুঃখের কথা যেমন ভুলে যায় তেমনি সুখটা যে কারা দিল সেটাও মনে রাখতে চায় না। সে কারণেই আমি নেতা-কর্মীদের বলব-আপনাদের এলাকায় কয়টি লোক দরিদ্র রয়েছে, ভূমিহীন রয়েছে, গৃহহীন রয়েছে তার হিসেব বের করে আমাদের দেন। কারণ দল হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে দরিদ্রদের ঘর-বাড়ি করে দিয়ে আমরা পুনর্বাসিত করতে পারি। আমাদের তরফ থেকে এই উদ্যোগ থাকতে হবে। তাহলেই দরিদ্র বলে আর কেউ থাকবে না। তিনি বলেন, কেবল সরকারের একার নয়, এ ক্ষেত্রে যদি আমাদের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ থাকে তাহলে দ্রুত এই দারিদ্র্য বিমোচন আমরা করতে পারব। শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘যদি সংগঠন করতে চান, তাহলে আগে মানুষের কাছে যান, তাদের কি সমস্যা তা জানার চেষ্টা করুন।’
×