ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য জননেতা আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য  জননেতা আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুবার্ষিকী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, আমৃত্যু সংগ্রামী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ জননেতা আবদুর রাজ্জাকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ষাটের দশকের দুরন্ত ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ সংগঠক ও পঁচাত্তর-উত্তর আওয়ামী রাজনীতির মধ্যমণি বর্ষীয়ান এই জননেতা প্রায় তিন মাস জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ’১১ সালের এই দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহছায়ায় যে ক’জন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধিকার, স্বাধীনতা আর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। নির্লোভ, নিরহঙ্কারী ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিক নেতা আব্দুর রাজ্জাক ৭০ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান অনন্তলোকে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাক, দুই পুত্র নাহিন রাজ্জাক, ফাহিম রাজ্জাকসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, নেতাকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে যান। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আবদুর রাজ্জাক তাঁর নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যে রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলেন, আমৃত্যু তা পালন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই আজীবন নির্লোভ ও সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন তিনি। রাজনীতির মাঠ কাঁপানো, সারাদেশ চষে বেড়ানো সুঠামদেহী আবদুর রাজ্জাকের দেহে মরণব্যাধি লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে বেশ আগেই। এতে ভরাট কণ্ঠের তেজও তেমন ছিল না। তবে মরণব্যাধিও তাঁকে দমাতে পারেনি শেষদিন পর্যন্ত। ষাটের দশকের মাঠকাঁপানো ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও দেশের প্রথম সারির প্রবীণ রাজনীতিক ছিলেন তিনি। তাঁর জš§ ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ইমাম উদ্দিন এবং মাতা বেগম আকফাতুন্নেছা। তিনি ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ’৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ’৬৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও পরে মাস্টার্স করেন। ১৯৬৭ সালে এলএলবি পাসের পর ’৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত হন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক। ১৯৬৫-৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি পরপর দুবার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫-৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাকশালের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮-৮১ সাল পর্যন্ত পরপর দুবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ’৮৩ সালে বাকশাল গঠন করে ’৯১ সাল পর্যন্ত বাকশালের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ’৯১ সালে বাকশাল বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ১৯৯১-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তাঁকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন/সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি। নব্বই দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। প্রয়াত রাজ্জাকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নিয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচী। আওয়ামী লীগ আজ সকাল দশটায় বনানী কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আবদুর রাজ্জাকের কবরে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। আবদুর রাজ্জাক স্মৃতি সংসদ ও আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আজ বিকেল তিনটায় ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী। শরীয়তপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র প্রবীণ রাজনীতিক আব্দুর রব মুন্সী বলেন, আমার চোখে আব্দুর রাজ্জাক এক সফল রাজনীতিক ও একজন অত্যন্ত ভাল মানুষের নাম। তিনি ছিলেন দয়ালু ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার রাজনৈতিক অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, আব্দুর রাজ্জাক বাংলার পতাকা, বাংলার মানচিত্র, চিরসবুজের মাঝে বাংলার লাল পতাকা, লাখো শহীদের রক্ত-রঞ্জিত লাল জাতীয় পতাকা, পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল অধ্যুষিত বাংলাদেশ নামক জনপদের এই মানচিত্রের দাবিদারদের মধ্যে অন্যতম আব্দুর রাজ্জাক। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালী থাকবে ততদিন আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যু নেই। আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১ আগস্ট, ১৯৪২ সালে তৎকালীন ফরিদপুর বর্তমান শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে। তার পিতার নাম আলহাজ ইমাম উদ্দিন।
×