ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতির ফাঁসির শহর

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  হাতির ফাঁসির শহর

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের এরউইন শহরে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করেন চার্লি স্পাইকস। এ সময় চার্লির বাবা চার বছর বয়সী ছোট্ট হাতি মেরিকে কেনেন। অল্প কয়েক দিনেই মেরির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় চার্লির। এক সময় চার্লি স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো নামে আলাদা একটি সার্কাস তৈরি করেন। এ সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করে মেরি। দেখতে দেখতে স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শোর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে মেরি। নাম বদলে গিয়ে মেরি তখন ‘বিগ মেরি’ হয়ে গেছে। নিঃসন্তান স্পার্কস ও তার স্ত্রী এ্যাডি মিচেল নিজেদের সন্তানের মতোই ভালবাসতেন মেরিকে। মেরির দেখভালের জন্য একজন মাহুত ছিলেন বটে। তবে চার্লির কথাই বেশি মানত সে। স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো এবং মেরির বুদ্ধিদীপ্ত কলাকৌশলের খবর দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ভার্জিনিয়ায় খেলা দেখাতে যায় স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো। সেখানে যাওয়ার আগে কোন এক অজানা কারণে মেরির পুরনো মাহুত কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ সময় মেরির মাহুত হওয়ার জন্য তার ট্রেইনার পল জ্যাকবের কাছে আবেদন জানান স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী ওয়াল্টার রেড এলড্রিজ। নিয়োগ করে এলড্রিজকে হাতি দেখভালের যাবতীয় নিয়ম শিখিয়ে দেয়া হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ খেলা দেখানোর দিন নতুন মাহুত এলড্রিজকে হয়ত মেনে নিতে পারেনি মেরি। ফলে খেলা দেখানোর সময় এলড্রিজের নির্দেশেও তেমনভাবে সাড়া দিচ্ছিল না সে। বিপাকে পড়ে মেরির মাথায় রডের খোঁচা দিয়ে তাকে বাগে আনার মরিয়া চেষ্টা চালায় এলড্রিজ। আর এতেই মেজাজ হারায় মেরি। এলড্রিজকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আছাড় মারে মেরি। পা দিয়ে পিষে দেয় এলড্রিজের মাথা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এলড্রিজের। চোখের সামনে এ ঘটনা দেখে আতঙ্কে সার্কাসের তাঁবু ছেড়ে পালিয়ে যান দর্শকরা। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয় মেরিকে নিয়ে। চার্লি সবাইকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন, সে দিনের ঘটনায় দোষ মেরির নয়, এলড্রিজের। কিন্তু চার্লির কথা তখন কেউ শুনতে রাজি হয়নি। শহরের বেশিরভাগ মানুষ একজোট হয়ে মেরিকে মৃত্যুদ- দেয়ার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন। অবশেষে ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৬ সালে মেরির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেন নেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত কয়েক শ’ মানুষের সামনে গলায় শেকল বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হলো মেরিকে। খুনের দায়ে ফাঁসি দেয়া হয় তাকে। এরপর কেটে গেছে এক শ’ বছর। তবে এখনও সেই ঘটনার জন্য অত্যন্ত লজ্জা হয় শহরের বাসিন্দাদের। এখনও ওই শহরের পরিচয় হাতির ফাঁসির শহর। -ব্লু রাইড কান্ট্রি
×