ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষে সবার ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চায় আরইবি

প্রকাশিত: ১০:১০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 মুজিববর্ষে সবার ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চায় আরইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুজিববর্ষে শতভাগ মানুষের ঘরেই বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কাজ শেষ করতে চায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। গ্রাহক ভোগান্তি হ্রাস করতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে কার্যক্রম জোরদার করেছে আরইবি। এখন দেশের ৯৪ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছেছে। আরইবি বলছে গত পাঁচ বছরে আরইবির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিবি) বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় শতভাগ। দেশের তিন কোটি ৫৩ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক দুই কোটি ৭৫ লাখ। ‘মুজিববর্ষে’ আরইবির ভৌগোলিক এলাকার শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করবে। ফলশ্রুতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজ সম্পন্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশের ৭৪ হাজার ৩৬০টি গ্রাম যা মোট গ্রামের ৮৮ ভাগ এবং ৩৬১টি উপজেলা ৭৮ ভাগ ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ বিদ্যুতায়িত ২১১টি উপজেলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। অবশিষ্ট গ্রাম এবং উপজেলাগুলোর ৭০ ভাগ থেকে ৯৫ ভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। যা ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হবে। আরইবি বলছে, চার লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং ১২ হাজার ৪৮৫ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন এক হাজার তিনটি উপকেন্দ্র সংবলিত সুবিশাল পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করছে। বর্তমানে সিস্টেম লস মাত্র ১০ দশমিক ৯১ যা ২০০৮ সালে ছিল ১৮ ভাগ। গত ১১ বছরে সিস্টেম লস প্রায় ৭ দশমিক ৯ ভাগ কমেছে। আরইবি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সেচ সংযোগের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫৫ দশমিক ৫৬ লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। যা দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সময়ে আরইবি ১৯ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮৭ হাজার ৬১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছে। এতে করে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও অন্যান্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া তিন লাখ ৪০ হাজার মসজিদ, মন্দির ও গীর্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন সুন্দর ও সহজতর হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষত সৌরশক্তির ব্যবহার প্রসারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বাংলাদেশে পথিকৃৎ। ১৯৯৩ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার ২৫০টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে আরইবি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের সূচনা করে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ছিটমহলগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে ৩০৮ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে আরইবির উদ্যোগে ১১ হাজার ৮৮২টি পরিবারকে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছে। এতে অবহেলিত জীবনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘আশ্রয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন অসহায় জনগণকে পুনর্বাসিত করার জন্য ৯১৯টি প্রকল্প-গ্রামে ১৯ হাজার ৪৭৮টি পরিবারকে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এ সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সিংহভাগই পল্লী বিদ্যুত সমিতিসমূহের ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরইবি গ্রাহক সেবায় অনলাইন বিদ্যুত সংযোগ প্রদান, অনলাইনে বিল গ্রহণ, অনলাইনে মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কর্মকা- চালু করেছে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ায় সেখানে বসবাসরত জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চার হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে গ্রামের জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে আরইবি এবং ৮০টি সমিতিতে ‘পেপারলেস অফিস’ বাস্তবায়ন কাজ চলমান আছে। আরইবির আওতাধীন ৮০টি পবিসের উদ্যোগে ইতোমধ্যে এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫৮টি ক্ষুদ্র শিল্প, ১২ হাজার ৪১০টি মাঝারি শিল্প এবং ৩৪২টি বৃহৎ শিল্প অর্থাৎ মোট এক লাখ ৭৫ হাজার ৯১০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দেয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে ইজিবাইকের মাধ্যমে জনগণের যাতায়াত সহজতর হয়েছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ইজিবাইক ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য ১৪টি সোলার চার্জিং স্টেশন এবং ১ হাজার ৬৭১টি গ্রীড চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বাপবিবো’র তত্ত্বাবধানে ২১টি পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে এ পর্যন্ত ১৩৩টি নেট মিটারিং স্থাপিত হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুত’ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে বাপবিবো নিরলসভাবে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিদ্যুত বিভাগের উদ্যোগে বাপবিবো’কে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান এবং ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য ‘ইনোভেশন শোকেসিং-২০১৯ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সরকারের ভিশন-২০২১ অনুযায়ী গ্রামীণ জনগণের ঘরে ঘরে দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ ও সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ২০১৮ সালে ‘দ্রুত বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে অবদানের স্বীকৃতি প্রদান’ ও ২০১৬ সালে বিদ্যুত বিভাগের আওতাধীন ‘সেরা সরকারী বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ‘সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে।
×